এক বছর মেয়াদি বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি সাত বছর পর ভেঙে দেওয়া হয় চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি। এরপর ৯ মাসেও নতুন কমিটি ঘোষণা না করায় জেলা ছাত্রলীগ ও অন্য ইউনিটগুলোর সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে।

বগুড়ায় ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু সরকারি আজিজুল হক কলেজও চলছে সভাপতিসর্বস্ব এক সদস্যের কমিটি দিয়ে। অপর পাঁচটি কলেজে কমিটির মধ্যে সরকারি মজিবর রহমান মহিলা কলেজে ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগে পাঁচ বছর আগে ভেঙে দেওয়া কমিটি আর গঠন করা হয়নি। উপজেলা কমিটিগুলোর মধ্যে কোনোটি মেয়াদোত্তীর্ণ, আবার কোনোটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। ফলে অনেকটা এতিমের মতো ঘুরছেন নেতা-কর্মীরা। স্থবিরতা দেখা দিয়েছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে।

২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে নাঈমুর রাজ্জাক তিতাসকে সভাপতি ও অসিম কুমার রায়কে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭৫ সদস্যের বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয় চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি। এই সাত বছরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অনেকে খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে গত বছরের ১১ মার্চ। বগুড়া শহরের সাতমাথায় বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ ও তাঁর সহযোগীরা কুপিয়ে জখম করেন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাকবীর হোসেনকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ মার্চ তাকবির মারা যান। এ ঘটনায় সরকারি আজিজুল হক কলেজে ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর নামে মামলা হলে রউফকে বহিষ্কার করা হয়।

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাঈমুর রাজ্জাক তিতাস বলেছেন, আজিজুল হক কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি আছে বলা যাবে না। সেখানে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও তেমন একটা নেই। তবে কলেজ শাখার সভাপতি মোজাম্মেল হক বুলবুল বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকলেও সরকারি আজিজুল হক কলেজে ছাত্রলীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর সরকারি আজিজুল হক কলেজে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর আমরা ২০১৮ সালে এবং ২০২১ সালে দুই দফা পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিলেও সেই কমিটি অনুমোদন পায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী বলেছেন, সরকারি আজিজুল হক কলেজে ছাত্রশিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে এবং তারা তলে তলে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। 
এদিকে চলতি বছরের ৯ আগস্ট সোনাতলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুজন ঘোষের বিরুদ্ধে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়। পরদিন সুজন ঘোষকে বহিষ্কার এবং সোনাতলা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

বগুড়ার শেরপুরে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থানা-পুলিশ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক রিপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। ৩০ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন শেরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুর রহমান শুভ। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মর্তুজা কাওসার অভি হত্যা মামলার আসামি। পরদিন শেরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। 
এ ছাড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি একই কলেজের অধ্যক্ষকে মারধর করায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগে সরকারি মজিবর রহমান কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। 
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের মোট ১৯টি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। ইউনিটগুলো হচ্ছে ১২টি উপজেলা ইউনিট, বগুড়া পৌর ইউনিট এবং ৬টি কলেজ ইউনিট।

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মকুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর হচ্ছে বগুড়া সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজে কমিটি নেই। এখানে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক অবস্থা অচল বললেই চলে। সরকারি গাবতলী ডিগ্রি কলেজে দীর্ঘ ছয় বছর হলো কমিটি নেই। সরকারি আজিজুল হক কলেজে শুধু সভাপতি আছে দেড় বছর হলো। অপর তিনটি কলেজের মধ্যে সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ, সোনাতলা সরকারি নাজির আকতার ডিগ্রি কলেজ ও সরকারি সান্তাহার ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি অনুমোদন হয়।

১২টি উপজেলা ছাত্রলীগের মধ্যে চারটি কমিটির মেয়াদ রয়েছে, সাতটি কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। আদমদীঘি উপজেলা ছাত্রলীগের চার বছর হলো কোনো কমিটি নেই।

মুকুল ইসলাম আরও জানান, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর ৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠাগার সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের এবং উপসমাজসেবা সম্পাদক শেখ সাঈদ আনোয়ার সিজার বগুড়ায় আসেন। বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী ৫৬ জন সিভি জমা দেন। শর্ত অনুযায়ী তাঁদের বয়স ২৯ এর মধ্যে, অবিবাহিত এবং চাকরিজীবী নন। তিনি আরও বলেন, বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এখন এতিমের মতো। 
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাঈমুর রাজ্জাক তিতাস বলেন, বগুড়ার মতো জেলায় ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া জরুরি। বিরোধী দলের সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ সব সময় মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপসমাজসেবা-বিষয়ক সম্পাদক শেখ সাঈদ আনোয়ার সিজার আজকের পত্রিকাকে বলেন, বগুড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। বগুড়ার বিষয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে শিগগিরই ছাত্রলীগের জেলা কমিটিসহ অন্য কমিটিগুলো ঘোষণা দেওয়া হবে।