বড় টুর্নামেন্ট বা ইভেন্ট হলেই বাক্স-পেটরা ভর্তি করে বিদেশ সফর করতে দেখা যায় বিভিন্ন ফেডারেশন কিংবা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের। বাদ যান না সরকারি কর্মকর্তারাও। অলিম্পিক, কমনওয়েলথ গেমসের মতো বড় আসরে খেলোয়াড়দের চেয়ে কর্মকর্তা-কোচদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অতীতে সমালোচনা কম হয়নি। কিন্তু এখন এমনই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, এই চিত্র কিছুটা বদলাতে চায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই সারা বিশ্ব অর্থনীতিতেই চলছে মন্দাভাব। সংকটের আঁচ টের পাচ্ছে বাংলাদেশও। ডলার সংকটে বৈদেশিক আমদানি থমকে আছে। প্রয়োজনের বাইরে ডলার ব্যবহারে সরকারি কর্মকর্তাদের অবাধ বিদেশ সফরে বাঁধ দিয়েছে সরকার। দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও একই নির্দেশ। অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর না করতে ফেডারেশনগুলোকে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে এনএসসি।

‘অতীব জরুরি’ উল্লেখ করে এনএসসি পরিচালক (ক্রীড়া) শাহ হাবিবুর রহমান হাকিম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিদেশে কোনো দল প্রেরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাশ্রয়ী পন্থা অবলম্বন করতে হবে। দল প্রেরণের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করে দল প্রেরণ করতে হবে। অতি প্রয়োজন না হলে অযথা কোনো খেলোয়াড়, কোচ ও কোনো ব্যক্তিকে দলে অন্তর্ভুক্ত না করতে অনুরোধ করা হলো।’

ক্রীড়াঙ্গনের ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণের নির্দেশের মূল কারণ যে ডলার সংকট, সেটা স্বীকার করেছেন এনএসসি পরিচালক শাহ হাবিবুর রহমান হাকিম। গতকাল আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ‘অনেক খেলা আছে, যেখানে দেখা যায় খেলোয়াড় বা কর্মকর্তা একজন গেলেই হয় কিন্তু খেলোয়াড় নেওয়া হয় অতিরিক্ত। কর্মকর্তারা যান দল ভারী করে। এটা সরকারি কৃচ্ছ্রসাধন। ডলার সংকটের বিষয়টাও আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে।’

যখন ডলারের অপচয় এড়াতে চিঠি দিয়েছে এনএসসি, তখন বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলকে বাংলাদেশে আনতে তোড়জোড় করছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। আগামী জুনে ঢাকায় মেসিদের ম্যাচ আয়োজন করতে সব মিলিয়ে এক কোটি ডলার (১০০ কোটি টাকা) খরচ হবে বলে জানিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তবে ডলার সংকটকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না বাফুফে। ফেডারেশনগুলোয় নিজেদের চিঠি পাঠানোর প্রসঙ্গে আর্জেন্টিনার সফরের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানালেন এনএসসি সচিব পরিমল সিংহ। তিনি বলেছেন, ‘আর্জেন্টিনার সফর আর এই চিঠির বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা চাই, বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ফেডারেশনগুলো একটু সতর্ক হোক।’

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে বেশি বিদেশ সফর থাকে ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। বছরজুড়ে জাতীয় দলের একাধিক সফর তো আছেই, বয়সভিত্তিক দল-নারী ক্রিকেট দলগুলোও নিয়মিত দেশের বাইরে গিয়ে থাকে। খেলার প্রয়োজনে বাড়তি খেলোয়াড়ও থাকেন দলে। তবে বাড়তি খেলোয়াড় নিয়ে সমস্যা দেখছেন না পরিমল, ‘টুর্নামেন্ট না খেললে তো পরে দেশেরই সমস্যা। ক্রিকেটসহ অন্য দলগুলোরও দেশের বাইরে যাওয়া নিয়ে সমস্যা হবে না। আমাদের চাওয়া শুধু দলের খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের যেন বুঝেশুনে নেওয়া হয়।’

এনএসসির চিঠির প্রভাব ক্রিকেটে পড়বে না বলে মনে করেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী। আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের তো দল পাঠাতেই হবে, না পাঠিয়ে তো পারব না। আমাদের বছরে চার-পাঁচটা সফর নির্ধারিত করা থাকে। এগুলোয় কতটা সাশ্রয়ী হওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে আমরা সরকারের নির্দেশনা অবলম্বন করব।’