Ajker Patrika

মাটি কর্তন, ভাঙনের শঙ্কা

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ৩৬
মাটি কর্তন, ভাঙনের শঙ্কা

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের লালন আবাসন এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের কারণে বর্ষা মৌসুমে ভাঙন লেগেছিল। সরকারি সহযোগিতায় কিছু বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে কোনোমতে ভাঙন রোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ভাঙনের ক্ষত এখনো সারেনি। এ বছর ফের আবাসন এলাকা থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী মহল। এতে আগামী বর্ষায় আবাসন এলাকায় ভাঙনের আশঙ্কা করছেন বসবাসকারীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, লালন আবাসন থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূর (পূর্বে) থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এবং আবাসনে চলাচলের একমাত্র সড়ক থেকে মাত্র ১০ মিটার দূর (পূর্বে) থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি কাটার স্থানেই পাশেই জিও ব্যাগ পড়ে আছে, যেখানে গতবার ভাঙন লেগেছিল। আবাসন এলাকার মাটি ও বালু শ্যালো ইঞ্জিতচালিত লাটাহাম্বা নামক গাড়িতে স্থানীয় ইটভাটা ও বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হচ্ছে।

আবাসনবাসী সূত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে আবাসন সংলগ্ন এলাকা থেকে অতিরিক্ত মাটি ও বালু উত্তোলনের ফলে গত বছরের জুলাইয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। ভাঙন দিয়ে পানি প্রবাহ হয়ে চলাচলের একমাত্র রাস্তাসহ চারপাশ প্লাবিত হয়। পানিবন্দী হয়ে পড়ে প্রায় ৫১টি পরিবার। এ নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন আমলে নেয় এবং কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে প্রায় দেড় মাস পর জিও ব্যাগ ফেলে।

আবাসনে বসবাসকারীরা জানান, ২০১৩ সালে হাঁসদিয়া লালন আবাসন-১ গড়াই নদে বিলীন হয়ে গেছে। আবাসন এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে আগামী বর্ষায় লালন আবাসন-৪ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাসুদ রানা নামে একজন বালু ব্যবসায়ী সরকারের কাছ থেকে নদীর ওই অংশটি প্রায় ২৭ লাখ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। ইজারা সূত্রে এখন ওই অংশ তাঁর। তাই তাঁরা বালু উত্তোলন করছেন। বালু উত্তোলনের স্থানে থাকা রফিকুর নামে এক কর্মচারী বলেন, ‘২৭ লাখ টাকা দিয়ে মাসুদ ভাই ইজারা নিয়েছেন। ইজারার বালু কাটছি আমরা। কার কি ক্ষতি হলো, তা আমাদের দেখার নেই।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে নির্মিত হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প হাঁসদিয়া লালন আবাসন-১, পৌর লালন আবাসন-২, নন্দলালপুর লালন আবাসন-৩, যদুবয়রা লালন আবাসন-৪। প্রতিটি আবাসনে ৬০টি করে মোট ২৪০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালে গড়াই নদের ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় হাঁসদিয়া আবাসনের ৫১টি ঘর। বর্তমানে ৩ আবাসনে ১৮৯টি ঘরে প্রায় শতাধিক পরিবার বসবাস করে।

যদুবয়রা লালন আবাসনের সাধারণ সম্পাদক আকুল মণ্ডল বলেন, ‘গত বছর অতিরিক্ত বালু ও মাটি উত্তোলনের ফলে আবাসন এলাকায় ভাঙন লেগেছিল। সেই আতঙ্ক এখনো কাটেনি। আবার বালু ও মাটি উত্তোলন শুরু হয়েছে। আগামী বর্ষায় আর টিকা যাবে না।’

এ বিষয়ে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘প্রভাবশালীরা আবাসন এলাকা থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করছে। আমি নিষেধ করেছি, শোনেনি। এভাবে চলতে থাকলে আবাসন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’

যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘আবাসন এলাকাটি হুমকিতে পড়ছে দিনদিন। মাটি ও বালু কাটার বিষয়টি ইউপি ভূমি কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহা. শাহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আবাসন এলাকায় বালু ও মাটি উত্তোলনের বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত