নাটোর-১: আ.লীগে তৎপরতা, কৌশলী বিএনপি

নাইমুর রহমান, নাটোর ও ইমাম হাসান মুক্তি, লালপুর
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪: ১৯
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪: ২১

এক বছর বাকি থাকতেই লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-১ আসনের ভোটারদের মুখে মুখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। হাটে-মাঠে-গঞ্জে-ঘাটে নির্বাচনী হাওয়া। এ হাওয়া যতটা না ভোটারদের কল্যাণে, তার চেয়ে বেশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতায়। খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে নেতাদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে রাস্তা আর বাজার। তবে ভোটের মাঠে তৎপর আওয়ামী লীগ এ আসন নিয়ে রয়েছে বেশ জটিলতায়। সে তুলনায় প্রার্থী নির্বাচনে অনেকটা নির্ভার বলা যেতে পারে বিএনপিকে।

ভোটের মাঠের চিত্র বলছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলেও নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা শুরু করেছেন শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তবে দিবসকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানে দলের স্থানীয় নেতাদের মধ্যে দূরত্ব দেখা যাচ্ছে। অতীতে লম্বা সময় বিএনপির দখলে থাকা এ আসন এখন আওয়ামী লীগের দখলে চলে গেলেও কোন্দলের কারণে তা হারাতে পারে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট হলে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে এ আসন, এমন শঙ্কাও রয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বকুল এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। এরই মধ্যে নিজেদের মতো করে তৎপরতা ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এর বাইরে দলের মনোনয়ন পেতে চাইছেন লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু, সাধারণ সম্পাদক শামীম আহম্মেদ সাগর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও বঙ্গবন্ধু প্রবীণ জোট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) রমজান আলী সরকার, কামরাঙ্গীরচর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আনিসুর রহমান, আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সিলভিয়া পারভিন লেনি প্রমুখ।

নির্বাচনে গেলে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য কামরুন্নাহার শিরিন। বয়স বিবেচনায় তিনি মনোনয়ন না চাইলে বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক কমিটির সদস্য, বিএনআরসি এডিটরিয়াল বোর্ডের সদস্য ও ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা শারমিন পুতুলকে বেছে নেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি ডা. ইয়াসিন আরশাদ রাজন এবং নাটোর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম বিমল। এসব নেতারা প্রকাশ্যে তৎপরতা না চালালেও কৌশলে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলকে চাঙা রাখছেন।

প্রধান দুই দলের বাইরে এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এম এ তালহা। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য মুহাম্মদ খালেকুজ্জামান; ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও দাওয়াহবিষয়ক সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন পরশ; বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নাটোর জেলা শাখার সভাপতি এবং উত্তরবঙ্গ আখ চাষী সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল; জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলের (এনডিএম-সিংহ মার্কা) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মাকসুদুর রহমান এবং জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য তাসনিম আলম।

‘নাটোর-১ মানেই পটলের আসন’—এ ধারণা একসময় জাতীয় রাজনীতিতে বেশ প্রচলিত ছিল। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে এ আসনের এমপি হন ফজলুর রহমান পটল। কিন্তু ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির এম এ তালহার কাছে হেরে যান তিনি। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এমপি হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আওয়ামী লীগ চাইবে এ আসনে নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে। এ জন্য বিভিন্ন কর্মসূচিতে উন্নয়নের কথা তুলে ধরছেন নেতারা। তাঁদের জন্য ইতিবাচক খবর হচ্ছে, ভোটারদের মনে সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের জায়গা করে নেওয়া। তিনি এমপি হওয়ার পর এলাকায় সহিংসতা কমে গেছে। ২০০৩ সালে এমপি মমতাজ উদ্দিনকে খুনের পর থেকেই এ আসনে সহিংসতা বেড়ে গিয়েছিল।

সাধারণ ভোটাররা জানান, এখন যেকোনো কাজে শহিদুল ইসলাম বকুলের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা ও দেখা করা যায়। তাঁর সময়ে রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জীবনমানের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তবে জোটের কারণে জাতীয় পার্টির কাছে আসন ছেড়ে দিলে এম এ তালহা হতে পারেন এমপি।

শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, তাঁকে পুনরায় নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে। আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত নির্বাচনে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া না হলেও রাজনৈতিক সব কর্মকাণ্ডে তিনি সম্পৃক্ত রয়েছেন। মনোনয়নের প্রত্যাশায় নির্বাচনী জনসংযোগ, উঠান বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন।

এদিকে উপজেলা বিএনপির সদস্য কামরুন্নাহার শিরিন বলেন, গত নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ধানের শীষে নির্বাচন করেন। এবারও করবেন বলে আশা করছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। এ জন্য দলীয় কর্মসূচি ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বাগাতিপাড়া প্রতিনিধি আব্দুল আওয়াল]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত