বৃষ্টিতে কাঁচা ইটের ব্যাপক ক্ষতি

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ৩৪
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ৩৮

শুষ্ক মৌসুমে আকস্মিক বৃষ্টিতে নওগাঁয় ইটভাটার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার অধিকাংশ ভাটার কাঁচা ইট পানিতে ভিজে কাদা হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার সারা দিনই থেমে থেমে এ বৃষ্টি চলে।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁয় বর্তমানে ২০৫টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় পোড়ানোর অপেক্ষায় রাখা প্রায় ১৫ কোটি কাঁচা ইট বৃষ্টিতে গলে গেছে। যাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা। ভাটার মালিকেরা বলছেন, অসময়ে এভাবে হঠাৎ বৃষ্টি চলতে থাকলে ভাটা চালু রাখা যাবে না।

গতকাল শনিবার সদর উপজেলার বোয়ালিয়া, বরুনকান্দি, শিবপুরসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১৫টি ভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, রোদে শুকাতে দেওয়া কাঁচা ইটগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। এ ছাড়া পোড়ানোর আগে সারিবদ্ধ করে রাখা শুকনো ইটগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে।

উপজেলার কয়েকজন মালিক জানান, ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত প্রতিটি ভাটায় ইট তৈরি করে স্তূপ বানিয়ে রাখা হয়। এখন হঠাৎ বৃষ্টিতে প্রতিটি ভাটায় স্তূপ করে রাখা ৫ থেকে ১০ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে।

বরুনকান্দি এলাকার মেসার্স এবিসি ব্রিকসের মালিক আজাদ হোসেন বলেন, তাঁর ভাটায় ১০ লাখ কাঁচা ইট খোলা জায়গায় রাখা ছিল। বৃষ্টিতে প্রায় ৭ লাখ ইট ভেঙে কাদায় পরিণত হয়েছে।

নিয়ামতপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলায় ছয়টি ভাটায় কাঁচা ইট সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। জিগজাগ ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী পাভেল বলেন, ‘এ সময়ে বৃষ্টি হবে কেউ কল্পনা করতে পারিনি। ভাটায় কাঁচা ইট ছিল প্রায় ১০ লাখ। সব ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমার প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব না।’

বদলগাছীতে ২৩টি ভাটার কাঁচা ইট গলে অন্তত ৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, ‘এ বছর ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা টন দরে কয়লা কিনতে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সব মিলিয়ে ভাটার মালিকদের ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

নওগাঁ ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার ২০৫টি ইটভাটায় প্রতিটি কাঁচা ইটের উৎপাদন খরচ ৫ টাকা ধরা হলেও ভাটার মালিকদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে।’

বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত একটানা ভারী বৃষ্টি হয়। এ ছাড়া শুক্রবার সারা দিনই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ৩৫ মিলিমিটার। সামনেও বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।

এদিকে জেলায় রবিশস্যের কয়েক হাজার হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কপি, আলু, সরিষাসহ নানা ধরনের সবজির খেতে পানি থইথই করছে। কৃষকেরা বলছেন, চড়া দামে সার ও বীজ কিনে তাঁরা চাষাবাদ করেছিলেন। এখন শীতকালে হঠাৎ বৃষ্টি তাঁদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘যেহেতু বৃষ্টি থেমে গেছে এবং শনিবারে রোদও ছিল, সেহেতু রবিশস্যে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। কৃষকদের জমি থেকে পানি সরানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত