Ajker Patrika

সাভারে ভবন নির্মাণ: অনুমোদনেই দায়িত্ব শেষ, লোকবল নেই তদারকির

অরূপ রায়, সাভার
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩, ০৮: ৩৩
সাভারে ভবন নির্মাণ: অনুমোদনেই দায়িত্ব শেষ, লোকবল নেই তদারকির

রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনির ডি ব্লকের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন নিয়ে নকশা অনুযায়ী নির্মাণ করেছেন বাড়ি। বাড়িটির সামনে রাস্তাসহ ১৫ ফুট উন্মুক্ত স্থান রয়েছে। প্রশস্ততা অনুযায়ী যেখানে তিনতলা বা ৩০ ফুটের বেশি উচ্চতার বাড়ি নির্মাণে অনুমোদন পাওয়ার কথা নয়, সেখানে ৯ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। এমনকি বাড়ির পেছনের দিকসহ উভয় পাশে কোনো উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়নি। এ বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা (১৯৯৬) মানা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর দাবি করেন, তিনি অনুমোদিত নকশা অনুযায়ীই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন।

ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতেই কেবল নিয়ম মানা হয়নি, এমনটি নয়। সাভার পৌর এলাকার অনেকেই ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মেনে বাড়ি বানিয়েছেন বা বানাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভবন নির্মাণে অনুমোদন দিয়েই দায়িত্ব শেষ পৌরসভা ও রাজউকের। অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী নির্মিত হলো কি না, সে বিষয়ে তদারকি নেই। এ সুযোগে অনেকে জাল নকশা বা অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণ করছেন। এমনকি অনুমোদন আনলেও তা না মেনে বাড়াচ্ছেন ভবনের উচ্চতা।

২০০৩-০৪ অর্থবছর থেকে সাভার পৌর এলাকায় ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়। পাশাপাশি রাজউক থেকেও পৌর এলাকাসহ সাভারের অধিকাংশ এলাকায় অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে এ পর্যন্ত পৌর এলাকায় কতটি ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সংস্থা দুটির কাছ থেকে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায়নি।

তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে ভবন নির্মাণে অনুমোদনসংক্রান্ত তথ্য চেয়ে এ প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে রাজউকের চেয়ারম্যান ও সাভার পৌরসভার মেয়রের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। আবেদনের পর তথ্য না পেয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রের কাছে আপিল করা হয়। আবেদন ও আপিল করে তথ্য না পেয়ে তথ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু তথ্য কমিশন অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে।

সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক টাউন, গ্যান্ডা, শিমুলতলা, ব্যাংক কলোনি, রেডিও কলোনি, জালেশ্বর, ছায়াবিথী, ইমান্দিপুর, মালঞ্চ, গ্যান্ডা, তালবাগ, পার্বতীনগর, মধ্যপাড়া, দক্ষিণ পাড়া, দক্ষিণ দরিয়াপুর, বাসস্ট্যান্ড, বাজার রোড ও থানা রোড ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ভবনই ৬-১০ তলা পর্যন্ত। ভবনগুলো উঁচু হলেও থানা রোড ছাড়া অন্য এলাকার রাস্তাগুলো সরু। ভবনগুলো প্রায় লাগোয়া এবং সড়কসংলগ্ন। বিধিমালা অনুযায়ী, ইমারতের (ভবন) সর্বাধিক উচ্চতা হবে সামনের রাস্তার প্রস্থ এবং ইমারত ও রাস্তার মধ্যবর্তী উন্মুক্ত স্থানের যোগফলের দ্বিগুণ। বেশির ভাগ ভবনেই তা মানা হয়নি।

ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী রাস্তার পাশে নির্দিষ্ট জায়গা রেখে ভবন নির্মাণ করার কথা। নির্মিত ৯তলা এই ভবনে সে জায়গা দেখা যায়নি। সম্প্রতি সাভারের ব্যাংক কলোনির ডি ব্লকে। ছবি: আজকের পত্রিকারাজউক থেকে আটতলা বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন আনার কথা বলে ব্যাংক কলোনিতে বাড়ি নির্মাণ করছিলেন আব্দুর রহিম। পরে কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, তাঁর নকশা জাল। বন্ধ রয়েছে নির্মাণকাজ। আব্দুর রহিম বলেন, ‘জাল নকশায় সাভারে অনেক বাড়ি নির্মিত হচ্ছে। রাজউক বা পৌরসভা কোনো খোঁজ রাখে না।’

ব্যাংক কলোনির নির্মাণাধীন সাউদিয়া টাওয়ার, মধ্যপাড়ার ব্যবসায়ী মদন সাহার আটতলা বাড়ি, জালেশ্বর এলাকার জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটির সামনে নির্মাণাধীন আটতলা বাড়িসহ কয়েক শ ভবন নির্মিত হয়েছে অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় করে। তবে কোনো কোনো ভবনের ক্ষেত্রে জাল নকশা বা অনুমোদন ছাড়া নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংক কলোনির কাস্টম মোড়ের নির্মাণাধীন ছয়তলা বাড়ির মালিক গোলাম মোস্তফা। বাড়ি নির্মাণের আগে তিনি পৌরসভা থেকে অনুমোদন নিয়েছেন। কিন্তু নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদিত নকশা অনুসরণ করেননি। পৌর কর্তৃপক্ষ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

দেখা গেছে, সামনের সড়ক ঘেঁষে তোলা নির্মাণাধীন বাড়িটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অথচ অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী বিদ্যমান সড়ক থেকে এক ফুট দূরে প্রাচীর আর প্রাচীর থেকে ১০ ফুট দূরে বাড়ি নির্মাণ করার কথা। প্রথম তলায় দোকান করার অনুমতি না থাকলেও একাধিক দোকান করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

পৌরসভার মেয়র আবদুল গনি বলেন, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট ভবনমালিককে নোটিশ দেওয়া হয়। তাতে কাজ না হলে বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইমাম বলেন, ‘ভবন পরিদর্শক ও লোকবলের অভাবে আমরা ভবন নির্মাণে অনুমোদনের পর তা তদারক করতে পারি না। তা ছাড়া আমাদের কোনো ম্যাজিস্ট্রেট নেই যে অনিয়ম ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেব।’

সাভারের দায়িত্বে থাকা রাজউকের অথরাইজড অফিসার-৩ বলেন, ‘আমাদের মাত্র দুজন পরিদর্শক রয়েছেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাঁরা পরিদর্শন করে যেসব অভিযোগ পাচ্ছেন, সেই সব ভবনমালিককে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। তাতে কাজ না হলে পরে উচ্ছেদ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত