কমে গেছে ঢেঁকির কদর

খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ১৪
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ১২: ৪৯

‘ধান ভানি রে, ঢেঁকিতে পার দিয়া। ঢেঁকি নাচে আমি নাচি, হেলিয়া দুলিয়া। সখী ধান ভানি রে।’ গ্রামবাংলার তরুণী নববধূ, কৃষাণীদের কণ্ঠে এমন গান এখন আর শোনা যায় না। আধুনিক যন্ত্র আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। কালের বিবর্তনে ঢেঁকি এখন শুধু ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করে চলেছে। এক সময় গ্রামাঞ্চলে ঢেঁকির ব্যবহার থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় বিলুপ্তির পথে।

এক সময় গ্রামের নারীরা ধান, চিড়া, চালের গুঁড়া, ছাতু, ডাল ও মসলা গুঁড়া করাসহ নিত্য দিনের নানান কাজে ঢেঁকিই ছিল ভরসা। কৃষক ভাদ্র মাসে আউশ ও অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে রোপা আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে কৃষাণীরা ধান থেকে নতুন চাল ও চালের গুঁড়া করার ধুম পড়ে যেত। সে চাল দিয়ে পিঠা, ফিরনি, পায়েস তৈরি করা হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে যন্ত্রনির্ভর যুগে এই চিত্র হারাতে বসেছে।

নতুন প্রজন্মের অনেকই ঢেঁকির সঙ্গে পরিচিতও নন। তবে গ্রামের কিছু কিছু বাড়িতে এখনো ঢেঁকির দেখা মেলে। দেশের অনেক অঞ্চলের মতো কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না।

সমসপুরের লুৎফুন্নেসা (৫৫) বলেন, এক সময় ঘরে ঘরে ঢেঁকি থাকলেও এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। সারা গ্রাম খুঁজলে দু’একটি বাড়িতে ঢেঁকি পাওয়া যায়। বর্তমানে আগের মতো ঢেঁকির ব্যবহারও হয় না। তাই হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি।

ইসলামপুর গ্রামের সবিরুন নেসা (৬৩), ‘আগে ঢেঁকিতে চালের গুঁড়া করে পিঠা-পুলি ও পায়েস তৈরি করে স্বামীকে খাওয়াতাম। এখনকার মেয়েরা পরিশ্রম করতে চায় না তাই তারা ঢেঁকির ব্যবহার কমে গেছে।’

কবি, সাহিত্যিক ও নাট্যকার লিটন আব্বাস বলেন, খোকসা উপজেলাসহ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন ঢেঁকির কদর কমছে। হাতেগোনা দু-একজন কৃষকের বাড়িতে কাঠের তৈরি প্রাচীনতম ঢেঁকি এখন চোখে পড়ে। ধান, চাল, ডালসহ বিভিন্ন শস্য ভাঙানোর জন্য বৈদ্যুতিক মিল স্থাপন করায় কৃষকেরা স্বল্প সময়ে অল্প খরচে এগুলো ভাঙাতে পারছেন। তবে এই এলাকায় শীতের সময় পিঠা পুলি তৈরির মূল উপাদান চাল থেকে আটা তৈরির জন্য কাঠের ঢেঁকির কদর কিছুটা বাড়ে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত