ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ঘিরে তিন জায়গায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মাদারীপুরের রাজৈরে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চম ধাপের নির্বাচন নিয়ে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় দুজনকে মারধর করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

রাজৈর (মাদারীপুর) : রাজৈরে ইউপি নির্বাচন নিয়ে পৃথক তিনটি সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ টি বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও ২টি টিনের ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার সকালে পাইকপাড়া ও ইশিবপুরের এই সংঘর্ষ হয়। পাইকপাড়ায় সংঘর্ষের সময়ে আতঙ্কে নূর ইসলাম নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত রোববার রাতে ইউপি সদস্য প্রার্থী ফজলুল মুন্সির সমর্থক ও সুকুর আলীর সমর্থনদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে সোমবার সকালে বৈরাগীর বাজারে আসাদ নামের একজনকে মারধর করে। এ রকম ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মশিউর রহমান মুন্না খলিফা গ্রুপ ও চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন গ্রুপের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষ চলে। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।

আহতদের রাজৈর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সংঘর্ষ চলাকালে নূর ইসলাম নামের একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে রাজৈর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা।

একই সময়ে রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের পরাজিত প্রার্থী মেহেদী হাসান গ্রুপ ও বেল্লাল গ্রুপ সাতবাড়িয় এলাকায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ ছাড়া অপর দুই পরাজিত প্রার্থী খলিল গ্রুপ ও আরিফ গ্রুপের সমর্থকেরা সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

রাজৈর থানার ওসি শেখ সাদীক বলেন, ‘রাজৈরে পৃথক তিনটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নড়িয়া (শরীয়তপুর) : নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চশমার প্রার্থী আব্দুল আজিজ সরদার (৫৫) ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় রুবেল ও আলমগীর নামে ২ জনকে আটক করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে মোটরসাইকেলের প্রার্থী নাছির ফকির সমর্থকেরা এই হামলা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।

আহত আব্দুল আজিজ সরদার পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়ন চশমা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে, হাসপাতালে ছুটে আসেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের নাসির উদ্দিন ফকির। এসেই ফের উত্তেজিত হয়ে চশমা প্রতীকের ওপর ক্ষেপে যায়। এ সময় দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং দুজনকে আটক করে।

চশমা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল আজিজ সরদার বলেন, ‘আমি কদমতলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে পণ্ডিতসার বাজারে এলে আমার মোটরসাইকেল থামিয়ে নাছির ফকিরের সমর্থকেরা আমরা ওপরে হামলা করে।’

অভিযুক্ত মোটরসাইকেলের প্রার্থী নাছির ফকির বলেন, ‘পণ্ডিতসার বাজারে আমার সমর্থক আলমগীর ব্যাপারীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয় তাঁর। তখন আজিজ সরদার পরে গিয়ে ব্যথা পান, হামলা করা হয় নাই।’

নড়িয়া থানার ওসি অবনি শংকর কর বলেন, ‘মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ২ জনকে আটক করেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

উল্লেখ্য, আগামী ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিকসহ মোট ১৪টি ইউপিতে ভোট হবে।

ভেদরগঞ্জ (শরীয়তপুর) : ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর লোকজনের বিরুদ্ধে পরাজিত প্রার্থীর লোকজনের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। গত রোববার রাতে ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চরচান্দা বাজারে এই ঘটনা ঘটে। ৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী প্রার্থী ডলি বেগম ও তার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।