জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হয়ে প্রথম যখন পূর্ব বাংলায় আসেন তখনো এখানকার জনগণের চোখে তিনি মহানায়ক। তাই ভাষা প্রশ্নে জিন্নাহর দৃষ্টিভঙ্গি জানার জন্য উদ্গ্রীব ছিল পূর্ববঙ্গবাসী।
১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে চুক্তি করার পর দেখা গেল, চুক্তির সব দফা তিনি মানছেন না। শেখ মুজিবুর রহমানসহ বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হলো ঠিকই, কিন্তু পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার মর্যাদার বিষয়টি গণপরিষদে পাস করানোর শর্ত তিনি পূরণ করেননি। ১৬ ও ১৭ মার্চ ঢাকা হয়ে পড়ে অশান্ত। ১৬ মার্চ শওকত আলী, শেখ মুজিব ও অলি আহাদের নেতৃত্বে একটি মিছিল সরকারের বিরুদ্ধে ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার সমর্থনে স্লোগান দিতে দিতে পরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসর হলো। তখন পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন। ছাত্ররা পরিষদ ভবনের গেটে গিয়ে বিক্ষোভ করল এবং নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইল। নাজিমুদ্দিন সেনা তলব করলেন। পূর্ব পাকিস্তানের তখনকার জিওসি আইয়ুব খান রান্নাঘরের ভেতর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বেরিয়ে যেতে সহায়তা করলেন।
জিন্নাহ ঢাকায় এলেন ১৯ মার্চ। ২৮ মার্চ তিনি করাচি ফিরে গেলেন। মধ্যবর্তী দুটি তারিখ—২১ ও ২৪ মার্চ বাংলার ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জিন্নাহর ঢাকা পৌঁছানোর সংবাদ শিরোনামে দৈনিক আজাদ লিখেছিল, ‘পূর্ব্ব পাকিস্তানে গবর্নর জেনারেল কায়েদে আজম জিন্নাহর প্রথম আগমন/ বর্ষণ-বিধৌত তেজগাঁও বিমানঘাঁটিতে লক্ষ লক্ষ উৎসুক জনতার অভিনন্দন/ বিমান হইতে পাকিস্তানের অবিসম্বাদিত নেতার উপর পুষ্পবৃষ্টি/ সমগ্র ঢাকা উৎসবমুখরিত—পতাকা, তোরণ ও দীপমালা-শোভিত নগরীর অপরূপ শোভাধারণ।’ আজাদ তখনো ঢাকায় আসেনি, প্রকাশিত হতো কলকাতা থেকে।
জিন্নাহকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ভাষণে জিন্নাহ মূলত সদ্যোজাত রাষ্ট্র পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে আলোকপাত করেছিলেন। দেশের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রভাষা একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে উল্লেখ করেন তিনি। জিন্নাহ যখন তাঁর ভাষণে ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্যই এই আন্দোলন করা হয়েছে, তখন রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছাত্র-জনতা হতবাক হয়ে যায়। প্রদেশের রাষ্ট্রভাষা কী হবে সেটা এই প্রদেশের জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই স্থির করবেন বলে মত দেন জিন্নাহ। এরপর তিনি ইংরেজিতে যা বলেছিলেন, তার বাংলা করা হয়েছে এভাবে: ‘কিন্তু আমি আপনাদিগকে সুস্পষ্টভাবে বলিতে চাই যে, উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে, অন্য কোনো ভাষা নহে।’
রেসকোর্সে উর্দুর পক্ষে জিন্নাহর ভাষণের ফলে পরিষ্কার হয়ে যায়, পূর্ববঙ্গ সরকার পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলকে ভুল বুঝিয়েছে। ভাষা আন্দোলনের অপব্যাখ্যা দিয়েছে। এই আন্দোলনের পেছনে ভারতের মদদ আছে—এ রকম বুঝিয়ে জিন্নাহকে বাংলা ভাষার প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলা হয়েছে। ২২ মার্চ তমদ্দুন মজলিসের নেতা অধ্যক্ষ আবুল কাসেম ও শহীদ আলী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কায়েদে আজমের নিকট গিয়া যদি সরাসরিভাবে আমরা ভাষা সম্পর্কিত বিভিন্ন দাবিদাওয়া পেশের সুযোগ লাভ করিতাম, তাহা হইলে আমাদের স্থির বিশ্বাস, আমরা তাঁহাকে স্পষ্টত বুঝাইতে সমর্থ হইতাম যে, পাকিস্তানে মুসলিম লীগের সংগঠকগণই এই আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তা এবং ইহার প্রকৃত উদ্দেশ্য হইতেছে পাকিস্তানের সংহতি আরো দৃঢ় ও শক্তিশালী করা—দুর্বল করা নহে।’
তমদ্দুন মজলিস দোষারোপ করেছিল কমিউনিস্টদের। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কী এবং ঘটনার গতিধারা বোঝার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ২৪ মার্চ পর্যন্ত। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে জিন্নাহ ভাষণ দেন।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হয়ে প্রথম যখন পূর্ব বাংলায় আসেন তখনো এখানকার জনগণের চোখে তিনি মহানায়ক। তাই ভাষা প্রশ্নে জিন্নাহর দৃষ্টিভঙ্গি জানার জন্য উদ্গ্রীব ছিল পূর্ববঙ্গবাসী।
১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে চুক্তি করার পর দেখা গেল, চুক্তির সব দফা তিনি মানছেন না। শেখ মুজিবুর রহমানসহ বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হলো ঠিকই, কিন্তু পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার মর্যাদার বিষয়টি গণপরিষদে পাস করানোর শর্ত তিনি পূরণ করেননি। ১৬ ও ১৭ মার্চ ঢাকা হয়ে পড়ে অশান্ত। ১৬ মার্চ শওকত আলী, শেখ মুজিব ও অলি আহাদের নেতৃত্বে একটি মিছিল সরকারের বিরুদ্ধে ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার সমর্থনে স্লোগান দিতে দিতে পরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসর হলো। তখন পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন। ছাত্ররা পরিষদ ভবনের গেটে গিয়ে বিক্ষোভ করল এবং নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইল। নাজিমুদ্দিন সেনা তলব করলেন। পূর্ব পাকিস্তানের তখনকার জিওসি আইয়ুব খান রান্নাঘরের ভেতর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বেরিয়ে যেতে সহায়তা করলেন।
জিন্নাহ ঢাকায় এলেন ১৯ মার্চ। ২৮ মার্চ তিনি করাচি ফিরে গেলেন। মধ্যবর্তী দুটি তারিখ—২১ ও ২৪ মার্চ বাংলার ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জিন্নাহর ঢাকা পৌঁছানোর সংবাদ শিরোনামে দৈনিক আজাদ লিখেছিল, ‘পূর্ব্ব পাকিস্তানে গবর্নর জেনারেল কায়েদে আজম জিন্নাহর প্রথম আগমন/ বর্ষণ-বিধৌত তেজগাঁও বিমানঘাঁটিতে লক্ষ লক্ষ উৎসুক জনতার অভিনন্দন/ বিমান হইতে পাকিস্তানের অবিসম্বাদিত নেতার উপর পুষ্পবৃষ্টি/ সমগ্র ঢাকা উৎসবমুখরিত—পতাকা, তোরণ ও দীপমালা-শোভিত নগরীর অপরূপ শোভাধারণ।’ আজাদ তখনো ঢাকায় আসেনি, প্রকাশিত হতো কলকাতা থেকে।
জিন্নাহকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ভাষণে জিন্নাহ মূলত সদ্যোজাত রাষ্ট্র পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে আলোকপাত করেছিলেন। দেশের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রভাষা একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে উল্লেখ করেন তিনি। জিন্নাহ যখন তাঁর ভাষণে ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্যই এই আন্দোলন করা হয়েছে, তখন রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছাত্র-জনতা হতবাক হয়ে যায়। প্রদেশের রাষ্ট্রভাষা কী হবে সেটা এই প্রদেশের জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই স্থির করবেন বলে মত দেন জিন্নাহ। এরপর তিনি ইংরেজিতে যা বলেছিলেন, তার বাংলা করা হয়েছে এভাবে: ‘কিন্তু আমি আপনাদিগকে সুস্পষ্টভাবে বলিতে চাই যে, উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে, অন্য কোনো ভাষা নহে।’
রেসকোর্সে উর্দুর পক্ষে জিন্নাহর ভাষণের ফলে পরিষ্কার হয়ে যায়, পূর্ববঙ্গ সরকার পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলকে ভুল বুঝিয়েছে। ভাষা আন্দোলনের অপব্যাখ্যা দিয়েছে। এই আন্দোলনের পেছনে ভারতের মদদ আছে—এ রকম বুঝিয়ে জিন্নাহকে বাংলা ভাষার প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলা হয়েছে। ২২ মার্চ তমদ্দুন মজলিসের নেতা অধ্যক্ষ আবুল কাসেম ও শহীদ আলী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কায়েদে আজমের নিকট গিয়া যদি সরাসরিভাবে আমরা ভাষা সম্পর্কিত বিভিন্ন দাবিদাওয়া পেশের সুযোগ লাভ করিতাম, তাহা হইলে আমাদের স্থির বিশ্বাস, আমরা তাঁহাকে স্পষ্টত বুঝাইতে সমর্থ হইতাম যে, পাকিস্তানে মুসলিম লীগের সংগঠকগণই এই আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তা এবং ইহার প্রকৃত উদ্দেশ্য হইতেছে পাকিস্তানের সংহতি আরো দৃঢ় ও শক্তিশালী করা—দুর্বল করা নহে।’
তমদ্দুন মজলিস দোষারোপ করেছিল কমিউনিস্টদের। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কী এবং ঘটনার গতিধারা বোঝার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ২৪ মার্চ পর্যন্ত। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে জিন্নাহ ভাষণ দেন।
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
৩ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪