Ajker Patrika

‘পানি বাড়লেই বুক কাঁইপা ওঠে’

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী ও ডিমলা সংবাদদাতা
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১৩: ১৯
‘পানি বাড়লেই বুক কাঁইপা ওঠে’

‘তিস্তায় পানি বাড়লেই আমাগো বুক কাঁইপা ওঠে, পোলা-পান নিয়া ডরাইয়া (ভয়ে) থাহি। ওহন বর্ষাকাল, কহন জানি নদীর বানে বেবাক ভাইসা নিয়া যায়। ঝড়-তুফানে কোনে যামু আমরা।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন নীলফামারীর ডিমলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দা লালবানু বেগম (৫০)। ২০ বছর ধরে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছেন। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি এখনো ভোলেননি তিনি। সামনের দিনগুলো তাঁর কাছে অন্ধকারাচ্ছন্ন, কোথায় থাকবেন—এই ভাবনা থেকে মুক্ত হতে পারছেন না লালবানু বেগম।

শুধু লালবানু নয়, তিস্তার ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বেড়িবাঁধে বাস করছে উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার। বাঁধের বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম জানান, একটা সময় তাঁদের গোয়ালভরা গরু, উঠানভরা ধান ছাড়াও আরও কত রকমের ফলফলাদির গাছ ছিল; ছিল অনেক জমি। যে জমিতে ফসল ফলিয়ে চাহিদা মিটিয়েও বাজারে বিক্রিও করতেন। অথচ আজ তিস্তার করাল গ্রাসে সবকিছু হারিয়ে গেছে। প্রায় ১০০ বিঘা জমির মালিক তরিকুলের ভিটে একে একে পাঁচবার নদীতে বিলীন হয়ে আজ তিনি ভূমিহীন। ভেন্ডাবাড়ি চরের স্পার বাঁধের বাসিন্দা নুরুল আলম (৫২) বলেন, ‘ভাঙনের কবলে সাতবার ঘর হারিয়ে এখন বেড়িবাঁধেই আশ্রয় নিয়েছি। বর্ষায় এখানে প্রতিটি দিন কাটাই ঝুঁকি নিয়ে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানা গেছে, উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি, খালিশা চাপানি, খগাখড়িবাড়ি, পূর্ব ছাতনাই ও পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ভারত-বাংলা বাঁধ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অংশে আশ্রয় নিয়েছে বহু পরিবার। এ ছাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবারের বাস বাঁধের বাইরে তিস্তার চরে। দুর্যোগকালীন সময়ে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন তাঁরা। ভিটেমাটিহারা এসব মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত এলাকার বেড়িবাঁধে ঘর তুলে বসবাস করছে কয়েক হাজার পরিবার। উপজেলার স্পার বাঁধ, বাইশপুকুর, দোহল পাড়া, কিসামতের ঘাট, গ্রোয়েন বাঁধ এলাকায় বেড়িবাঁধের ওপরেই তাঁদের বসবাস। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ঝুঁকিতে রয়েছেন বেড়িবাঁধের এসব বাসিন্দা। কেউ আবার বাঁধের বাইরে নদীর তীর ও চরে বসবাস করছেন। ফলে বর্ষা এলেই ঝড় ও ভাঙন আতঙ্কে থাকেন। খালিশা চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান বলেন, এ ইউনিয়নের অন্তত এক হাজার মানুষ বেড়িবাঁধে বসবাস করেন। ঝড়-বন্যায় এসব পরিবারে প্রাণহানির ঝুঁকি থাছে। তারপরও মানুষগুলো বসবাস করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ-দৌলা আজকের পত্রিকাকে বলেন, উপজেলার ৪০ কিলোমিটার বাঁধে বসবাস করছেন বাস্তুহারা লোকজন। এতে বাঁধেরও ক্ষতি হচ্ছে। তাঁদের স্থানান্তর করে বাঁধটি মেরামতের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বনশ্রীতে স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার আমিনুল ছাত্রলীগের, সুমন শ্রমিক দলের নেতা

সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

থানায় থানায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা হচ্ছে

ককটেল ফুটতেই সেলুনে লুকায় পুলিশ, রণক্ষেত্র হয় এলাকা

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত