অরুণ কর্মকার
জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আমাদের দেশের প্রধান দুটি বাণিজ্যিক জ্বালানি। চাহিদার তুলনায় এই দুই জ্বালানি পণ্যেরই সংকট চলছে, যা ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে বড় ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি করেছে অস্থিরতা। ভাবনার বিষয় হলো, কতটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে জ্বালানির এই সংকট!
প্রথমে জ্বালানি তেলের কথায় আসি। আসলে জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ঘাটতি কিংবা সরবরাহের সংকট কোনোটা বলাই পুরোপুরি ঠিক না। এটি কোভিড-১৯ পরবর্তী পৃথিবীতে চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্যের জন্য আমাদের কৃচ্ছ্রসাধন। অর্থাৎ বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য আমরা জ্বালানি তেলের ব্যবহার কিছুটা কমিয়েছি, যা সমগ্র পৃথিবী করছে।
পাশাপাশি দেশে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে। এটা কতটা যৌক্তিক, সে প্রশ্ন আলাদা। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে হয়তো দেশেও কমানো হবে। কতটা কমলে কতটুকু কমানো হবে, তা-ও ভবিষ্যতের বিষয়। তবে আমাদের কৃচ্ছ্রসাধনের বিষয়টি যে সাময়িক, তা বলাই যায়। বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হলে আমরা আবার জ্বালানি তেল ব্যবহারে আগের অবস্থায় ফিরতে পারব।
কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাসের বিষয়টি ভিন্ন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকে আমাদের গ্যাসের ঘাটতি ছিল। দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন বাড়িয়ে এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে সেই ঘাটতি যথেষ্ট কমানো গিয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে এলএনজির দামও আকাশচুম্বী হওয়ায় আমদানি কিছুটা কমানো হয়েছে। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদনও কমেছে। ফলে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
যুদ্ধ শেষে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম স্বাভাবিক হলে আমরা আবার আমদানি বাড়িয়ে ঘাটতি কমাতে পারব। কিন্তু তেলের মতো চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যকার ব্যবধান একেবারে ঘুচিয়ে ফেলতে পারব না। গ্যাসের ঘাটতি থাকবে এবং এই ঘাটতি দীর্ঘায়িত হবে।
কারণ কী: আগেই বলেছি, আমাদের গ্যাস-সংকট দীর্ঘকালের। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের সময় দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন বা ১৭৫ কোটি ঘনফুট, যা ওই সময়ের চাহিদার তুলনায় কম ছিল। এরপর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে গ্যাসের চাহিদা বাড়তে থাকে। সরকার তখন গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১২ সাল নাগাদ গ্যাস উত্তোলন দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট বৃদ্ধি পেয়ে সরবরাহ সক্ষমতা হয় ২৭৫ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তত দিনে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে যায়।
এরপর আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস উত্তোলন বাড়েনি। তেমন কোনো উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়নি। বাপেক্স ওয়ার্কওভার (বিদ্যমান কূপ সংস্কার) করে এবং কয়েকটি নতুন কূপ খনন করে মাঝেমধ্যে ৫০ লাখ থেকে দুই থেকে আড়াই কোটি ঘনফুট পর্যন্ত উৎপাদন বাড়িয়েছে। তবে তা ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট ছিল না। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে আসা এবং আরও কিছু কারিগরি কারণে প্রায় ৪০ কোটি ঘনফুট কমে বর্তমানে দৈনিক ২৩০ কোটি ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে।
এলএনজি আমদানি: সরকার ২০১০ সাল থেকে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয়। কারণ সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল ও আছে যে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের আর কোনো বড় মজুত নেই। অথচ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা বলে এসেছেন, এখন পর্যন্ত যেটুকু আবিষ্কৃত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি গ্যাস অনাবিষ্কৃত রয়েছে। কিন্তু সরকার সে কথা আমলে নেয়নি।
শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের শেষ দিকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। প্রথমে সরকারি মালিকানার একটি ভাসমান টার্মিনাল (‘ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট’ সংক্ষেপে এফএসআরইউ)-এর মাধ্যমে। পরে বেসরকারি খাতের আরেকটির মাধ্যমে।
মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত এই এফএসআরইউ দুটি ব্যবহার করে দৈনিক মোট ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু পাইপ লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে বছর দু-এক দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেওয়া যায়নি। পরে দৈনিক ৯০ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এই এলএনজি আমদানি করা হয়। তাতে বিশ্ববাজারে স্বাভাবিক মূল্য পরিস্থিতিতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়ে সর্বনিম্ন ৬ মার্কিন ডলার। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে দাম বাড়ার বিষয়টি জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে যুক্ত করা থাকে। ফলে বিশ্ববাজারের যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকল, তখন এলএনজির দামও একপর্যায়ে প্রতি ইউনিট ৩৬ ডলারে ওঠে।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বাইরে সরকার খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে কিছু এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা রেখেছে। কারণ স্বাভাবিক বাজার পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে আরও কম দামে পাওয়া যায়। কিন্তু এবার খোলাবাজারে এলএনজির দাম ওঠে ৪০ ডলারের ওপরে। এ কারণে সরকার এলএনজি আমদানিও কমিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে তোলা গ্যাসের দাম পড়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ৩ ডলার। এই কারণে দেশের গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমান পরিস্থিতি: এখন আমাদের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুটের বেশি। সরবরাহ করা যাচ্ছে ২৯০ কোটি ঘনফুটের মতো। এর মধ্যে ৫৫ কোটি ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে এলএনজি থেকে। ৮৫ কোটির মতো পাওয়া যাচ্ছে দেশীয় তিনটি উত্তোলন কোম্পানি থেকে। আর ১৫০ কোটি ঘনফুট আসছে পিএসসির অধীনে দুটি বিদেশি কোম্পানির পরিচালিত দেশীয় ক্ষেত্র থেকে।
বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হলে এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে আমরা দৈনিক আরও ৪৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে পারব। তার বেশি নয়। কারণ দুটি এফএসআরইউর সর্বোচ্চ ক্ষমতাই দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট। এরপরও দৈনিক আমাদের গ্যাসের ঘাটতি থাকবে ৬৫ কোটি ঘনফুট।
সরকার কী করছে: এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানার এফএসআরইউটির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এর অপারেটর এক্সিলারেট এনার্জিকে বলেছে। তাঁরা হয়তো এই ক্ষমতা দৈনিক ২০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। কিন্তু তাতে বছর দু-এক সময় লাগবে। এ ছাড়া সরকার আরও একটি এফএসআরইউ করার বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। সেটা হতে বছর পাঁচেক লাগতে পারে।
এর বাইরে সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক ৬১.৮ কোটি ঘনফুট (৬১৮ মিলিয়ন) গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করেছে। যদি এই ৬১.৮ কোটি ঘনফুট উত্তোলন বাড়ে; বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হলে এলএনজি থেকে ৪৫ কোটি ঘনফুট সরবরাহ বাড়ে; এক্সিলারেট এনার্জি এফএসআরইউর ক্ষমতা ২০ কোটি ঘনফুট বাড়ায়, তাহলেও ২০২৫ সালে আমাদের সর্বমোট গ্যাস সরবরাহ হতে পারে ৪১৭ কোটি ঘনফুট। কিন্তু ২০২৫ সালে আমাদের দৈনিক চাহিদা ৫০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে যাবে।
সেই ঘাটতি পূরণে আরও সময় লাগবে। সেই সময়ের মধ্যে আরও চাহিদা বাড়বে। আমাদের গ্যাস সরবরাহ এমনই একটি চক্রের মধ্যে আটকে পড়েছে। আগেভাগে দেশের গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এমনকি, বর্তমান সংকটের সময়ও দেশের গ্যাস বেশি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম অপেক্ষাকৃত কম খরচে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো।
অরুণ কর্মকার: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আমাদের দেশের প্রধান দুটি বাণিজ্যিক জ্বালানি। চাহিদার তুলনায় এই দুই জ্বালানি পণ্যেরই সংকট চলছে, যা ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে বড় ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি করেছে অস্থিরতা। ভাবনার বিষয় হলো, কতটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে জ্বালানির এই সংকট!
প্রথমে জ্বালানি তেলের কথায় আসি। আসলে জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ঘাটতি কিংবা সরবরাহের সংকট কোনোটা বলাই পুরোপুরি ঠিক না। এটি কোভিড-১৯ পরবর্তী পৃথিবীতে চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্যের জন্য আমাদের কৃচ্ছ্রসাধন। অর্থাৎ বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য আমরা জ্বালানি তেলের ব্যবহার কিছুটা কমিয়েছি, যা সমগ্র পৃথিবী করছে।
পাশাপাশি দেশে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে। এটা কতটা যৌক্তিক, সে প্রশ্ন আলাদা। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে হয়তো দেশেও কমানো হবে। কতটা কমলে কতটুকু কমানো হবে, তা-ও ভবিষ্যতের বিষয়। তবে আমাদের কৃচ্ছ্রসাধনের বিষয়টি যে সাময়িক, তা বলাই যায়। বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হলে আমরা আবার জ্বালানি তেল ব্যবহারে আগের অবস্থায় ফিরতে পারব।
কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাসের বিষয়টি ভিন্ন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকে আমাদের গ্যাসের ঘাটতি ছিল। দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন বাড়িয়ে এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে সেই ঘাটতি যথেষ্ট কমানো গিয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে এলএনজির দামও আকাশচুম্বী হওয়ায় আমদানি কিছুটা কমানো হয়েছে। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদনও কমেছে। ফলে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
যুদ্ধ শেষে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম স্বাভাবিক হলে আমরা আবার আমদানি বাড়িয়ে ঘাটতি কমাতে পারব। কিন্তু তেলের মতো চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যকার ব্যবধান একেবারে ঘুচিয়ে ফেলতে পারব না। গ্যাসের ঘাটতি থাকবে এবং এই ঘাটতি দীর্ঘায়িত হবে।
কারণ কী: আগেই বলেছি, আমাদের গ্যাস-সংকট দীর্ঘকালের। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের সময় দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন বা ১৭৫ কোটি ঘনফুট, যা ওই সময়ের চাহিদার তুলনায় কম ছিল। এরপর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে গ্যাসের চাহিদা বাড়তে থাকে। সরকার তখন গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১২ সাল নাগাদ গ্যাস উত্তোলন দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট বৃদ্ধি পেয়ে সরবরাহ সক্ষমতা হয় ২৭৫ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তত দিনে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে যায়।
এরপর আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস উত্তোলন বাড়েনি। তেমন কোনো উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়নি। বাপেক্স ওয়ার্কওভার (বিদ্যমান কূপ সংস্কার) করে এবং কয়েকটি নতুন কূপ খনন করে মাঝেমধ্যে ৫০ লাখ থেকে দুই থেকে আড়াই কোটি ঘনফুট পর্যন্ত উৎপাদন বাড়িয়েছে। তবে তা ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট ছিল না। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে আসা এবং আরও কিছু কারিগরি কারণে প্রায় ৪০ কোটি ঘনফুট কমে বর্তমানে দৈনিক ২৩০ কোটি ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে।
এলএনজি আমদানি: সরকার ২০১০ সাল থেকে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয়। কারণ সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল ও আছে যে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের আর কোনো বড় মজুত নেই। অথচ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা বলে এসেছেন, এখন পর্যন্ত যেটুকু আবিষ্কৃত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি গ্যাস অনাবিষ্কৃত রয়েছে। কিন্তু সরকার সে কথা আমলে নেয়নি।
শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের শেষ দিকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। প্রথমে সরকারি মালিকানার একটি ভাসমান টার্মিনাল (‘ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট’ সংক্ষেপে এফএসআরইউ)-এর মাধ্যমে। পরে বেসরকারি খাতের আরেকটির মাধ্যমে।
মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত এই এফএসআরইউ দুটি ব্যবহার করে দৈনিক মোট ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু পাইপ লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে বছর দু-এক দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেওয়া যায়নি। পরে দৈনিক ৯০ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এই এলএনজি আমদানি করা হয়। তাতে বিশ্ববাজারে স্বাভাবিক মূল্য পরিস্থিতিতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়ে সর্বনিম্ন ৬ মার্কিন ডলার। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে দাম বাড়ার বিষয়টি জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে যুক্ত করা থাকে। ফলে বিশ্ববাজারের যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকল, তখন এলএনজির দামও একপর্যায়ে প্রতি ইউনিট ৩৬ ডলারে ওঠে।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বাইরে সরকার খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে কিছু এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা রেখেছে। কারণ স্বাভাবিক বাজার পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে আরও কম দামে পাওয়া যায়। কিন্তু এবার খোলাবাজারে এলএনজির দাম ওঠে ৪০ ডলারের ওপরে। এ কারণে সরকার এলএনজি আমদানিও কমিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে তোলা গ্যাসের দাম পড়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ৩ ডলার। এই কারণে দেশের গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমান পরিস্থিতি: এখন আমাদের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুটের বেশি। সরবরাহ করা যাচ্ছে ২৯০ কোটি ঘনফুটের মতো। এর মধ্যে ৫৫ কোটি ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে এলএনজি থেকে। ৮৫ কোটির মতো পাওয়া যাচ্ছে দেশীয় তিনটি উত্তোলন কোম্পানি থেকে। আর ১৫০ কোটি ঘনফুট আসছে পিএসসির অধীনে দুটি বিদেশি কোম্পানির পরিচালিত দেশীয় ক্ষেত্র থেকে।
বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হলে এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে আমরা দৈনিক আরও ৪৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে পারব। তার বেশি নয়। কারণ দুটি এফএসআরইউর সর্বোচ্চ ক্ষমতাই দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট। এরপরও দৈনিক আমাদের গ্যাসের ঘাটতি থাকবে ৬৫ কোটি ঘনফুট।
সরকার কী করছে: এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানার এফএসআরইউটির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এর অপারেটর এক্সিলারেট এনার্জিকে বলেছে। তাঁরা হয়তো এই ক্ষমতা দৈনিক ২০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। কিন্তু তাতে বছর দু-এক সময় লাগবে। এ ছাড়া সরকার আরও একটি এফএসআরইউ করার বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। সেটা হতে বছর পাঁচেক লাগতে পারে।
এর বাইরে সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক ৬১.৮ কোটি ঘনফুট (৬১৮ মিলিয়ন) গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করেছে। যদি এই ৬১.৮ কোটি ঘনফুট উত্তোলন বাড়ে; বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হলে এলএনজি থেকে ৪৫ কোটি ঘনফুট সরবরাহ বাড়ে; এক্সিলারেট এনার্জি এফএসআরইউর ক্ষমতা ২০ কোটি ঘনফুট বাড়ায়, তাহলেও ২০২৫ সালে আমাদের সর্বমোট গ্যাস সরবরাহ হতে পারে ৪১৭ কোটি ঘনফুট। কিন্তু ২০২৫ সালে আমাদের দৈনিক চাহিদা ৫০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে যাবে।
সেই ঘাটতি পূরণে আরও সময় লাগবে। সেই সময়ের মধ্যে আরও চাহিদা বাড়বে। আমাদের গ্যাস সরবরাহ এমনই একটি চক্রের মধ্যে আটকে পড়েছে। আগেভাগে দেশের গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এমনকি, বর্তমান সংকটের সময়ও দেশের গ্যাস বেশি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম অপেক্ষাকৃত কম খরচে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো।
অরুণ কর্মকার: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে