ড. রউফুল আলম
প্রতিবছর যখন পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে র্যাঙ্কিং হয়, তখন আমরা আশাহত হই। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সেই তালিকায় স্থান করে নিতে পারে না। আমাদের দেশটার বয়স ৫০ হলেও, সে দেশে ১০০ বছর বয়সী একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সে বিশ্ববিদ্যালয়টি আজও কেন বিশ্বমানের হয়ে ওঠেনি, সেটা খুবই উদ্বেগের ও কষ্টের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পরে জন্ম নেওয়া ভারতের আইআইটিগুলো এখন বিশ্বমানের। বিশ্ব তালিকায় সেসব প্রতিষ্ঠান স্থান করে নেয়। প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বহু সমস্যার মধ্য দিয়েও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করাতে পারে, তাহলে আমরা পারছি না কেন? একটা দেশে যদি বিশ্বমানের শিক্ষা না থাকে, বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকে, তাহলে সে সমাজে বিশ্বমানের তরুণ তৈরি হয় না। সমাজের তরুণেরা সেখানে থেকে নিজেদের মেধাকে বিকশিত করতে পারেন না। দেশ ছাড়তে তাঁরা বাধ্য হন।
গত দুই দশকে, বিশেষ করে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার পর, দেশের অসংখ্য ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য দেশ ছেড়েছে। এটা অবশ্যই ভালো দিক। তবে এ-ও সত্য, যদি মেধাবীরা শুধু দেশ ছাড়ে, কিন্তু সে অনুপাতে দেশে না ফেরে, তাহলে সেটা আশঙ্কাজনক। যে হারে তরুণেরা দেশ ছাড়ছেন, সে হারে কিন্তু দেশে ফিরছেন না। মেধাবী তরুণদের কী করে দেশে ফেরানো যায়, সে বিষয়ে আমাদের বড় বড় অনেক প্রকল্প থাকা উচিত ছিল। উন্নত দেশ থেকে শিখে যদি দক্ষ গবেষকেরা দেশে না ফেরেন, তাহলে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাগানো সহজ হবে না। আর দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বমানের করতে না পারলে, সেগুলো সমাজ গঠনে খুব বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।
ফি বছর গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান থাকে অনেক পেছনে। এই ইনডেক্সে পেছনে থাকার অর্থ হলো, আমরা উদ্ভাবনে পিছিয়ে। জাতি হিসেবে আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি কম। অথচ বাংলাদেশে অসংখ্য মেধাবী তরুণ আছেন। উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকার কথা নয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বরং তরুণদের আগ্রহ ও মেধাকে বহুগুণে জাগিয়ে তুলতে পারছে না। তরুণদের যুগের সঙ্গে উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পারছে না। তরুণেরা কী করে যুগোপযোগী শিক্ষা পাবেন, প্রশিক্ষণ পাবেন, কর্মমুখী দক্ষতা পাবেন–সেসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। ২০২২ সালে এসেও প্রতিষ্ঠানগুলো কেন দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নেই।
এশিয়ার সবচেয়ে ইনোভেটিভ দেশ সিঙ্গাপুর। দক্ষিণ কোরিয়া শুধু এশিয়াতেই নয়, পৃথিবীর অন্যতম উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে। এই ক্ষুদ্র দেশগুলোও বুঝতে পেরেছে, আবিষ্কার-উদ্ভাবনে শক্তিশালী না হলে পৃথিবীতে টিকে থাকা কঠিন। এই দেশগুলোতে শিক্ষা ও গবেষণার মানে বিপ্লব আনা হয়েছে। গবেষণার জন্য সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ দিচ্ছে এবং সেই অর্থ সঠিক মানুষদের মাধ্যমে সবচেয়ে যোগ্য মানুষদের হাতে তুলে দিচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষকেরা এখন বিশ্বসেরা। তাঁদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বসেরা। তাঁদের শিক্ষার্থীরা নিজ দেশেই সেরা মানের শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন।
অথচ সিঙ্গাপুর দেশটা হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুরের সমান। এত ছোট একটা দেশ শিক্ষায় সেরা, প্রযুক্তিতে সেরা, উদ্ভাবনে সেরা। আর এই উদ্ভাবন আসে কোথা থেকে—তরুণদের মাথা থেকে। আর সেই তরুণ তৈরির কারখানা হলো বিশ্ববিদ্যালয়। সিঙ্গাপুরের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হলো ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ১৫ বছরের পুরোনো এটি। অথচ বিশ্ব তালিকায় প্রতিবছর স্থান করে নেয় প্রথম বিশ-ত্রিশে। সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। আর বাংলাদেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাই দেয় ২০-২৫ লাখ শিক্ষার্থী। এই মাথাগুলোকে যদি বারুদের মতো তৈরি করা যায়—একবার ভাবুন, কী অবস্থাটাই না হবে। সিঙ্গাপুরের প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ৬ হাজারের বেশি গবেষক। গবেষক উৎপাদনের এই সংখ্যায় তারা পৃথিবীতে তৃতীয়, ভাবা যায়!
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এখন অনেক শক্তিশালী। দেশের সরকার চাইলেই প্রতিবছর গবেষণার জন্য ২ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য খুবই সামান্য টাকা দেওয়া হয়। সেসব টাকাও পরিকল্পনামাফিক বণ্টন করা হয় না। বাজেটে যে বড় অঙ্কের টাকা দেখানো হয়, সেগুলো শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কারেই ব্যয় হয় বেশি। গবেষণার জন্য আলাদা বাজেট থাকা প্রয়োজন। বিদেশে থেকে দক্ষ ও মেধাবীদের ফিরিয়ে আনার আলাদা প্রকল্প থাকা উচিত।
আর্থিক বিষয় ছাড়াও ব্যবস্থাপনাগত অনেক বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে আজও পিএইচডি ছাড়া শিক্ষক হওয়া যায়। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক! বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে থাকা কোনো প্রতিষ্ঠানে এটা সম্ভব নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে আজও ছাত্ররাজনীতির নামে যে সহিংস অপকর্মের চর্চা হয়, সেগুলো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হতে পারে না। শিক্ষকেরা যেভাবে দলীয় রাজনীতির চর্চা করছেন, সেটা লজ্জাজনক! বিদেশি শিক্ষার্থীদের আমরা আকৃষ্ট করতে পারছি না। ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার মান খুবই নিম্ন। এসব বিষয়ে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ এখানে আনার কারণ হলো, এটা দেশের সবচেয়ে প্রাচীন প্রতিষ্ঠান এবং দেশের উচ্চশিক্ষার সংস্কৃতিতে এই প্রতিষ্ঠান নেতৃস্থানীয়। সুতরাং এই প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়েই পরিবর্তন শুরু করতে হবে।
ওদিকে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে জোরদার করতে বেশ কিছু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার তেমন কিছুই চোখে পড়ে না। বছর বছর নতুন বিশ্ববিদ্যালয় না খুলে, নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করা প্রয়োজন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বহু দিকে অবহেলিত। প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁদের কী করে আরও যুগোপযোগী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, সে বিষয়ে কাজ করা উচিত।
সার্বিকভাবে দেশের বিজ্ঞানশিক্ষার ভিতও দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। গ্রামের স্কুলগুলোতে বিজ্ঞানশিক্ষার ভিত অনেক দুর্বল। সারা দেশের মাত্র ১৪ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রি হলো বিজ্ঞানের। এদিকে প্রতিবছর যত শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেন, তাঁদের প্রায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হলেন বিজ্ঞানের। বিজ্ঞানের যেসব শিক্ষার্থী দেশে থাকেন, তাঁরা আবার বিসিএস দেন। অনেকে নিজের ক্ষেত্রের বাইরে ক্যারিয়ার বেছে নেন। ফলে মৌলিক গবেষণা করার মতো বিজ্ঞানের মেধাবী শিক্ষার্থী অপ্রতুল। এতে করে গবেষণার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। আর তাই উদ্ভাবনের দিক দিয়েও আমরা পিছিয়ে পড়ছি।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সত্যিকারের প্রোডাকশন হাউস বানাতে হবে। সেগুলো হবে বিশ্বমানের তরুণ উৎপাদনের জায়গা। আর এর জন্য আধুনিক গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। একাডেমিক গবেষণার মধ্য দিয়ে দেশে একটা শক্ত সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তাহলে উদ্ভাবনে এগিয়ে যাবে সমাজ। গবেষণা শুধু উদ্ভাবনের জন্যই নয়, গবেষণার মধ্য দিয়ে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হয়। জ্ঞানের আধুনিকায়ন ঘটে। আর এই ধারাবাহিকতায় দেশেই তৈরি হবে বিশ্বমানের গবেষক, যাঁরা একদিন দেশে বসেই দুনিয়াজাগানো কাজ করবেন।
লেখক: সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, পিটিসি থেরাপিউটিকস, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র
প্রতিবছর যখন পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে র্যাঙ্কিং হয়, তখন আমরা আশাহত হই। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সেই তালিকায় স্থান করে নিতে পারে না। আমাদের দেশটার বয়স ৫০ হলেও, সে দেশে ১০০ বছর বয়সী একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সে বিশ্ববিদ্যালয়টি আজও কেন বিশ্বমানের হয়ে ওঠেনি, সেটা খুবই উদ্বেগের ও কষ্টের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পরে জন্ম নেওয়া ভারতের আইআইটিগুলো এখন বিশ্বমানের। বিশ্ব তালিকায় সেসব প্রতিষ্ঠান স্থান করে নেয়। প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বহু সমস্যার মধ্য দিয়েও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করাতে পারে, তাহলে আমরা পারছি না কেন? একটা দেশে যদি বিশ্বমানের শিক্ষা না থাকে, বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকে, তাহলে সে সমাজে বিশ্বমানের তরুণ তৈরি হয় না। সমাজের তরুণেরা সেখানে থেকে নিজেদের মেধাকে বিকশিত করতে পারেন না। দেশ ছাড়তে তাঁরা বাধ্য হন।
গত দুই দশকে, বিশেষ করে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার পর, দেশের অসংখ্য ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য দেশ ছেড়েছে। এটা অবশ্যই ভালো দিক। তবে এ-ও সত্য, যদি মেধাবীরা শুধু দেশ ছাড়ে, কিন্তু সে অনুপাতে দেশে না ফেরে, তাহলে সেটা আশঙ্কাজনক। যে হারে তরুণেরা দেশ ছাড়ছেন, সে হারে কিন্তু দেশে ফিরছেন না। মেধাবী তরুণদের কী করে দেশে ফেরানো যায়, সে বিষয়ে আমাদের বড় বড় অনেক প্রকল্প থাকা উচিত ছিল। উন্নত দেশ থেকে শিখে যদি দক্ষ গবেষকেরা দেশে না ফেরেন, তাহলে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাগানো সহজ হবে না। আর দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বমানের করতে না পারলে, সেগুলো সমাজ গঠনে খুব বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।
ফি বছর গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান থাকে অনেক পেছনে। এই ইনডেক্সে পেছনে থাকার অর্থ হলো, আমরা উদ্ভাবনে পিছিয়ে। জাতি হিসেবে আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি কম। অথচ বাংলাদেশে অসংখ্য মেধাবী তরুণ আছেন। উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকার কথা নয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বরং তরুণদের আগ্রহ ও মেধাকে বহুগুণে জাগিয়ে তুলতে পারছে না। তরুণদের যুগের সঙ্গে উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পারছে না। তরুণেরা কী করে যুগোপযোগী শিক্ষা পাবেন, প্রশিক্ষণ পাবেন, কর্মমুখী দক্ষতা পাবেন–সেসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। ২০২২ সালে এসেও প্রতিষ্ঠানগুলো কেন দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নেই।
এশিয়ার সবচেয়ে ইনোভেটিভ দেশ সিঙ্গাপুর। দক্ষিণ কোরিয়া শুধু এশিয়াতেই নয়, পৃথিবীর অন্যতম উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে। এই ক্ষুদ্র দেশগুলোও বুঝতে পেরেছে, আবিষ্কার-উদ্ভাবনে শক্তিশালী না হলে পৃথিবীতে টিকে থাকা কঠিন। এই দেশগুলোতে শিক্ষা ও গবেষণার মানে বিপ্লব আনা হয়েছে। গবেষণার জন্য সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ দিচ্ছে এবং সেই অর্থ সঠিক মানুষদের মাধ্যমে সবচেয়ে যোগ্য মানুষদের হাতে তুলে দিচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষকেরা এখন বিশ্বসেরা। তাঁদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বসেরা। তাঁদের শিক্ষার্থীরা নিজ দেশেই সেরা মানের শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন।
অথচ সিঙ্গাপুর দেশটা হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুরের সমান। এত ছোট একটা দেশ শিক্ষায় সেরা, প্রযুক্তিতে সেরা, উদ্ভাবনে সেরা। আর এই উদ্ভাবন আসে কোথা থেকে—তরুণদের মাথা থেকে। আর সেই তরুণ তৈরির কারখানা হলো বিশ্ববিদ্যালয়। সিঙ্গাপুরের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হলো ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ১৫ বছরের পুরোনো এটি। অথচ বিশ্ব তালিকায় প্রতিবছর স্থান করে নেয় প্রথম বিশ-ত্রিশে। সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। আর বাংলাদেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাই দেয় ২০-২৫ লাখ শিক্ষার্থী। এই মাথাগুলোকে যদি বারুদের মতো তৈরি করা যায়—একবার ভাবুন, কী অবস্থাটাই না হবে। সিঙ্গাপুরের প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ৬ হাজারের বেশি গবেষক। গবেষক উৎপাদনের এই সংখ্যায় তারা পৃথিবীতে তৃতীয়, ভাবা যায়!
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এখন অনেক শক্তিশালী। দেশের সরকার চাইলেই প্রতিবছর গবেষণার জন্য ২ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য খুবই সামান্য টাকা দেওয়া হয়। সেসব টাকাও পরিকল্পনামাফিক বণ্টন করা হয় না। বাজেটে যে বড় অঙ্কের টাকা দেখানো হয়, সেগুলো শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কারেই ব্যয় হয় বেশি। গবেষণার জন্য আলাদা বাজেট থাকা প্রয়োজন। বিদেশে থেকে দক্ষ ও মেধাবীদের ফিরিয়ে আনার আলাদা প্রকল্প থাকা উচিত।
আর্থিক বিষয় ছাড়াও ব্যবস্থাপনাগত অনেক বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে আজও পিএইচডি ছাড়া শিক্ষক হওয়া যায়। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক! বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে থাকা কোনো প্রতিষ্ঠানে এটা সম্ভব নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে আজও ছাত্ররাজনীতির নামে যে সহিংস অপকর্মের চর্চা হয়, সেগুলো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হতে পারে না। শিক্ষকেরা যেভাবে দলীয় রাজনীতির চর্চা করছেন, সেটা লজ্জাজনক! বিদেশি শিক্ষার্থীদের আমরা আকৃষ্ট করতে পারছি না। ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার মান খুবই নিম্ন। এসব বিষয়ে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ এখানে আনার কারণ হলো, এটা দেশের সবচেয়ে প্রাচীন প্রতিষ্ঠান এবং দেশের উচ্চশিক্ষার সংস্কৃতিতে এই প্রতিষ্ঠান নেতৃস্থানীয়। সুতরাং এই প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়েই পরিবর্তন শুরু করতে হবে।
ওদিকে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে জোরদার করতে বেশ কিছু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার তেমন কিছুই চোখে পড়ে না। বছর বছর নতুন বিশ্ববিদ্যালয় না খুলে, নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করা প্রয়োজন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বহু দিকে অবহেলিত। প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁদের কী করে আরও যুগোপযোগী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, সে বিষয়ে কাজ করা উচিত।
সার্বিকভাবে দেশের বিজ্ঞানশিক্ষার ভিতও দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। গ্রামের স্কুলগুলোতে বিজ্ঞানশিক্ষার ভিত অনেক দুর্বল। সারা দেশের মাত্র ১৪ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রি হলো বিজ্ঞানের। এদিকে প্রতিবছর যত শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেন, তাঁদের প্রায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হলেন বিজ্ঞানের। বিজ্ঞানের যেসব শিক্ষার্থী দেশে থাকেন, তাঁরা আবার বিসিএস দেন। অনেকে নিজের ক্ষেত্রের বাইরে ক্যারিয়ার বেছে নেন। ফলে মৌলিক গবেষণা করার মতো বিজ্ঞানের মেধাবী শিক্ষার্থী অপ্রতুল। এতে করে গবেষণার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। আর তাই উদ্ভাবনের দিক দিয়েও আমরা পিছিয়ে পড়ছি।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সত্যিকারের প্রোডাকশন হাউস বানাতে হবে। সেগুলো হবে বিশ্বমানের তরুণ উৎপাদনের জায়গা। আর এর জন্য আধুনিক গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। একাডেমিক গবেষণার মধ্য দিয়ে দেশে একটা শক্ত সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তাহলে উদ্ভাবনে এগিয়ে যাবে সমাজ। গবেষণা শুধু উদ্ভাবনের জন্যই নয়, গবেষণার মধ্য দিয়ে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হয়। জ্ঞানের আধুনিকায়ন ঘটে। আর এই ধারাবাহিকতায় দেশেই তৈরি হবে বিশ্বমানের গবেষক, যাঁরা একদিন দেশে বসেই দুনিয়াজাগানো কাজ করবেন।
লেখক: সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, পিটিসি থেরাপিউটিকস, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে