প্রতিবাদের ১১ই মার্চ

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭: ৩৭
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭: ৪৬

গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বক্তৃতা, খাজা নাজিমুদ্দিনের উর্দুর পক্ষে ওকালতি আর লিয়াকত আলী খানের বাংলার প্রস্তাব নাকচ—এসবই তখন উত্তপ্ত করে তুলছিল পূর্ব বাংলা। আন্দোলন বেগবান করার লক্ষ্যেই ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ পুনর্গঠিত হয়। সৃষ্টি হয় দ্বিতীয় সংগ্রাম পরিষদের। তমদ্দুন মজলিসের শামসুল আলম আহ্বায়ক মনোনীত হন। গণ আজাদী লীগ, যুবলীগ ও তমদ্দুন মজলিস, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, ইনসাফ, জিন্দেগি, যুগের দাবি পত্রিকা এবং বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে প্রতিনিধি নিয়ে একটি বহুদলীয় চরিত্রের সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। 

ধর্মঘট সফল করার জন্য জেলা ও থানা শহরগুলোতে সাংগঠনিক সফর করেন ছাত্রনেতারা। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চে তার প্রতিফলন দেখা যায় ঢাকার বাইরে বেশ কিছু শহরে। উল্লেখযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে ছিল ফরিদপুর, যশোর, দৌলতপুর, খুলনা ও বরিশাল। 

১১ মার্চের কর্মসূচি নিয়ে সংগ্রাম পরিষদ ৪ ও ৫ মার্চ আলোচনা করে। ১০ মার্চ রাতে ফজলুল হক হলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কর্মসূচি ও কর্মতৎপরতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হয়। আন্দোলন সফল করে তোলার জন্য সেই রাতের বৈঠকেই ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল, সচিবালয়ের আশপাশে কে কোথায় কীভাবে অবস্থান নেবেন। প্রথম গেটের সামনে শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ এবং দ্বিতীয় গেটের সামনে কাজী গোলাম মাহবুব, শওকত আলী প্রমুখ নেতা অবরোধ কর্মসূচির দায়িত্বে ছিলেন। 

১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের একটি উল্লেখযোগ্য দিন। ১৯৪৮ সালের এই দিনটিতে এসেই পূর্ব বাংলার মানুষ উপলব্ধি করেছিল, ভাষা প্রসঙ্গটি বেঁচে থাকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 

শেখ মুজিব লিখেছেন, ‘ (২ মার্চ) সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চকে বাংলা ভাষা দাবি দিবস ঘোষণা করা হলো। জেলায় জেলায় আমরা বের হয়ে পড়লাম। আমি ফরিদপুর, যশোর হয়ে দৌলতপুর, খুলনা ও বরিশালে ছাত্রসভা করে ওই তারিখের তিন দিন পূর্বে ঢাকায় ফিরে এলাম। দৌলতপুরে মুসলিম লীগ সমর্থক ছাত্ররা আমার সভায় গোলমাল করার চেষ্টা করলে খুব মারপিট হয়, কয়েকজন জখমও হয়। এরা সভা ভাঙতে পারে নাই। আমি শেষপর্যন্ত বক্তৃতা করলাম।’ 

অলি আহাদ লিখেছেন, ‘সকাল নয়টা বাজিবার সঙ্গে সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুল ওয়াদুদ এবং আমি সেক্রেটারিয়েট ভবনের প্রথম গেটে উপস্থিত হই। তখনো সেক্রেটারিয়েটের কর্মচারীবৃন্দ আসেন নাই।...সিটি এসপি আবদুল গফুরের হুকুমে পুলিশ তৎপর হইয়া উঠিল। ইংরেজ ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ মি. চ্যাথাম লাঠি চালনার আদেশ দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে শামসুল হক ও তাঁহার গ্রুপের কতিপয় কর্মী গ্রেপ্তার হইলেন। ইহার পর শেখ মুজিবুর রহমান আর এক গ্রুপসহ গ্রেপ্তার হইলেন।’

১১ মার্চের পুলিশি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ কে ফজলুল হক একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। সেই বিবৃতিটি ছাপা হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১২ মার্চ কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায়। ফজলুল হক বলেছিলেন, ‘ছাত্র এবং পুলিশের মধ্যে হাঙ্গামার সমস্ত বিষয়ে আমি জানি না, কিন্তু বেলা একটা পর্যন্ত যারা ঘটিয়েছে আমি তাহার প্রত্যক্ষদর্শী। ওই সময় আমি সামান্য আহত হইয়া বাড়ি চলিয়া যাই। আমি যত দূর জানি, তাহা বলিতে পারি যে, ছাত্রদিগকে প্রহার করার কোনো সঙ্গত কারণ ছিল না। ছাত্ররা সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র ছিল।...পরিষদ এই ঘটনার প্রতি ঘৃণা প্রকাশের কোনো সিদ্ধান্ত না করিলে তাহার প্রতিবাদে সমস্ত পরিষদ সদস্যের পদত্যাগ করা উচিত। আমি প্রকাশ্যে ঘোষণা করিতেছি যে, পুলিশ ঢাকার নির্দোষ ছাত্রদের উপর যে অত্যাচার করিয়াছে, তাহার প্রতিবাদে আমি সর্বপ্রথম পদত্যাগ করিব।’সেই দিন পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত