Ajker Patrika

মেয়রের ব্যক্তিগত খরচও পৌরসভার টাকায় !

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ৫৯
মেয়রের ব্যক্তিগত খরচও  পৌরসভার টাকায় !

রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী তাঁর ব্যক্তিগত অনেক খরচ মেটাতেন পৌরসভার সরকারি টাকায়। এমনকি মেয়র থাকাকালে নিজের নির্বাচনী ব্যয়ও মিটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মেয়র আব্বাস পৌরসভার টাকায় নিজের আত্মীয়স্বজনকে পাঠিয়েছেন আম ও লিচু। মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) জহুরুল ইসলাম লিটন অনেক টাকা তুলেছেন। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত পৌরসভার ব্যয়ের হিসাবের খাতা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

খাতায় দেখা গেছে, গত ৩ মে আম কেনা বাবদ ৫৪ হাজার ২৫০ টাকা তুলেছেন মেয়রের পিএস লিটন। খরচের বিবরণে লেখা আছে, ‘ঢাকায় আম পাঠানো’। একইভাবে ১৭ জুন ৪৪ হাজার ৫৬০ টাকা ও ২৮ হাজার ৩৪০ টাকা এবং ২২ জুন আট হাজার ৮২০ টাকা তোলা হয়েছে।

৬ জুন ঢাকায় লিচু পাঠানোর জন্য তোলা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৩৫০ টাকা। ২৮ জুন পিএস লিটনের নামে ৫০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। কেন এই টাকা তোলা হয়েছে, তার বিবরণ লেখা নেই।

খাতায় মেয়রের ব্যক্তিগত চেম্বারের সিসি ক্যামেরা মেরামত বাবদ ৩৩ হাজার ৩৩৮ টাকা পরিশোধের কথা লেখা হয়েছে।

এদিকে পৌরসভার ব্যয়ের খাতায় বিভিন্ন খাতে অস্বাভাবিক বিল দেখা গেছে। আপ্যায়নের জন্য খাবারের সব বিল পরিশোধ করা হয়েছে ‘একতা হোটেল’ নামের একটি রেস্তোরাঁর নামে। কাটাখালী বাজারের হোটেলটির মালিক মেয়রের পিএস লিটন ও তাঁর ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন। তাঁরা মেয়র আব্বাসের চাচাতো ভাই।

স্টেশনারি-মনোহারী সামগ্রীর সব বিল পরিশোধ করা হয়েছে ‘মমতাজ লাইব্রেরি অ্যান্ড স্টেশনারি’র নামে। দোকানটির মালিক জাহিদ-উল-হাসান জুয়েল। এই দোকানের বিলে বিভিন্ন পণ্যে অস্বাভাবিক দাম দেখা গেছে। পৌরসভার সব স্টেশনারি সামগ্রী কেনা হতো একমাত্র এই দোকান থেকে। আর সব খাবারের বিল হতো একতা হোটেলের নামে। অভিযোগ রয়েছে, পণ্য বা খাবার না নিয়েও এ দুটি দোকানের ভুয়া বিল দেখিয়ে পৌরসভার টাকা তুলে নেওয়া হতো।

তবে পণ্য না দিয়েও বিল দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মমতাজ স্টেশনারির মালিক ও মেয়রের খালাতো ভাই জাহিদ-উল-হাসান জুয়েল। তিনি বলেন, ‘মালামাল দিয়ে টাকা পাওয়া যেত না। তিন-চার মাস পর পর বিল হতো। দিনের পর দিন আমার টাকা আটকে থাকত। তাই ক্ষতি পোষাতে একটু বেশি করে বিল ধরা হতো।’

মেয়রের ব্যক্তিগত খরচ পৌরসভার টাকায় এবং অস্বাভাবিক বিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পৌরসভার হিসাবরক্ষক জহুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকার কাছে দাবি করে বলেন, ‘আমার কিছু করার ছিল না। পিএস লিটন বিল এনে দাখিল করলে তা পরিশোধ করতেই হতো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত খরচ মেটানো ক্ষমতার অপব্যবহার। ক্ষমতা ও পদ যে মানুষকে কতটা বেপরোয়া করে তোলে, এগুলো তারই নজির। ক্ষমতা থেকে ছিটকে গেলে অনেকেরই এমন অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও অরাজকতার তথ্য বেরিয়ে আসবে।

আব্বাস জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কাটাখালী পৌর শাখার আহ্বায়ক ছিলেন। পর পর দুবার তিনি নৌকা নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে তাঁর আপত্তিকর বক্তব্যের অডিও ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়। আব্বাসকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আত্মগোপনে থাকা আব্বাসকে গত বুধবার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গতকাল তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে মেয়রের পিএস লিটন ও তাঁর ভাই রিপনকে কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত