প্রজনন মৌসুমেও বন্ধ হয়নি কাঁকড়া শিকার

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৩৩
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ২২

কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সুন্দরবনে কাঁকড়া শিকার নিষিদ্ধ। তবে সরকারি সেসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে একটি চক্র সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগরের নদ-নদী থেকে অবাধে কাঁকড়া শিকার করছে। প্রজনন মৌসুমে এভাবে কাঁকড়া শিকার চলতে থাকলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।

অভিযোগ রয়েছে শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ী, ভেটখালী, মুন্সিগঞ্জ, নওয়াবেঁকী আর হরিনগর মোকামসমুহের চিহ্নিত একটি সিন্ডিকেট এসব কাঁকড়া শিকার করছে।

কলবাড়ী বাজারের শাহ আলম, আনারুল, হরিনগরের মোজাম, সমীরণ ও ভেটখালীর বাবুর সমন্বয়ে এ চক্র প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের কাঁকড়া শিকার ও ঢাকায় পাঠানোর সার্বিক বিষয় নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া শিকার করার জন্য তাঁরা প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাদের ‘নজরানা’ দিয়ে থাকেন বলেও জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রতিদিন গভীর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব মোকামের প্রায় দেড় শতাধিক ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবাধে এসব কাঁকড়া বেচা-কেনা হয়। পরবর্তীতে সবগুলো মোকামের কাঁকড়া একত্রিত করে রাতে ট্রাকযোগে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া শিকার নিষিদ্ধ হওয়ায় মোকামের ব্যবসায়ীরা এসব কাঁকড়া পাশের নার্সিং পয়েন্টে চাষ করা বলে প্রচারণা চালাচ্ছে।

এ দিকে প্রজনন মৌসুমে অবাধে কাঁকড়া শিকারের ফলে ক্রমেই সুন্দরবনে কাঁকড়ার বংশবিস্তার যেমন কমছে, তেমনি সুন্দরবনে বসবাসরত প্রাণীকুলের খাদ্যসংকটও দেখা দিচ্ছে। ফলে ‘ইকো সিস্টেমে’ বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।

সরেজমিনে সুন্দরবন সংলগ্ন কলবাড়ী, হরিনগর, ভেটখালী ও নওয়াবেঁকী মোকামগুলোতে দেখা গেছে, সেখানকার ছোট বড় প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পুরোদমে কাঁকড়া সংগ্রহের কাজ চলছে। তাঁরা ৩০০ থেকে ৯০০ টাকার কেজি দরে এসব কাঁকড়া কিনছে। এমনকি মাত্র ৯০ গ্রাম ওজনের কাঁকড়াও তাঁরা ১৮০ টাকার দরে কিনে নিয়ে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত (প্যাকিং) করছে। সংবাদকর্মী পরিচয় বুঝতে পেরে এসব ব্যবসায়ীর চতুর কর্মচারীরা দ্রুত ঝুড়ি ভর্তি কাঁকড়া অন্যত্র সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।

উপজেলার সোরা গ্রামের আজিবার রহমানসহ কয়েকজন জেলে জানান, বছরের এ সময়ে কাঁকড়ার দাম বেশি। তাই অধিকাংশ জেলে মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে বনে গিয়ে কাঁকড়া শিকার করেন। আবার দাদন ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধের চাপ থাকায় অনেক জেলে বনে গিয়ে কাঁকড়া শিকারে বাধ্য হন।

হরিনগর বাজারের ব্রজেন মণ্ডল জানান, সুন্দরবনের কাঁকড়া কি না তিনি জানেন না। তবে কিছু মানুষ নার্সিং পয়েন্টের কাঁকড়া বলে তাঁদের কাছে কাঁকড়া বিক্রি করছে।

অভিযুক্ত আনারুল ইসলাম জানান, নার্সিং পয়েন্টের কিছু কাঁকড়া দিয়ে তাঁরা ব্যবসা করছেন। তবে বন বিভাগ ও পুলিশকে নজরানা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। অভিযুক্ত শাহ আলম জানান, বনের কোনো কাঁকড়া এখন বাজারে ঢুকছে না তাই কাউকে টাকা পয়সা দিতে হয় না।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, ৫২ কিলোমিটার জায়গা স্বল্প জনবল নিয়ে পাহারা দিয়ে রাখা কঠিন। তবে সুন্দরবনের কাঁকড়া শিকারে বন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানির তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

ভারত ও তরুণ প্রজন্মের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রসঙ্গে যা বললেন মির্জা ফখরুল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত