মব জাস্টিস বন্ধ করুন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ০১
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫: ৫৭

প্রবল ছাত্র গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর দেশে সব ধরনের জুলুম-অত্যাচারের অবসান ঘটবে এবং দ্রুত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হলেও এমন সব হৃদয়বিদারক নৃশংস ঘটনা ঘটছে, যেগুলো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এক ভয়াবহ মানসিকতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর একের পর এক পিটিয়ে হত্যার যেসব ঘটনা ঘটছে তা শুধু নিন্দনীয় নয়, এগুলো অবশ্যই বর্জনীয়। চরম অপরাধীরও যেখানে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে, সেখানে কাউকেই সন্দেহের বশে কিংবা অন্য কোনো কারণে পিটিয়ে হত্যা করা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামের এক যুবককে দুই দফায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। প্রায় একইভাবে জাবির একদল শিক্ষার্থীর দফায় দফায় মারধরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা প্রাণ হারান।

এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পঙ্গু আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে। আট বছর আগে আরেক হামলায় তিনি একটি পা হারান। ৫ আগস্ট ছাত্রদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে রাস্তায় পেয়ে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

এ ছাড়া গত কয়েক দিনে আরও কয়েকটি মব জাস্টিস বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে একাধিক ব্যক্তির আহত কিংবা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার মব জাস্টিস নিয়ন্ত্রণে শক্ত অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি বলে মনে করা হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন, সরকারি অফিস, এমনকি আদালত প্রাঙ্গণেও হামলা, নির্যাতন বা লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পেটানোর ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষকসহ অনেককে জোর করে তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণ ও ভবনে আসামিদের ওপর চড়াও হওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি?

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে চোর সন্দেহে একজনকে ও ছাত্রলীগ করার অপরাধে একজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। প্রতিবাদমুখর হয়েছে সংস্কার ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে সদ্য গঠিত সংগঠনগুলো। কোটাবিরোধী ও হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারীরা এ ধরনের ঘটনার নিন্দা করে নির্যাতনকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয় শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়কসহ আটজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো পরিচয়ের কারণে অভিযুক্তরা যেন ছাড় না পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে। হত্যাকাণ্ড আর মব জাস্টিস কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থান না নিতে পারলে এই ভয়াবহতা বাড়তে থাকবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত