২০২৪ সালে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল আসবে ঢাকায়

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১১: ১৩

ঢাকায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরে এই পাইপলাইন দিয়ে তেল ঢাকায় পাঠানো যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যদিও প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ায় এর ব্যয় বেড়েছে ৮০০ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল আসে নদী ও সড়কপথে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মাঝেমধ্যেই তেল পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া নদী ও সড়কপথে তেল পরিবহনের কারণে খরচ যেমন বেশি, তেমনি তেল চুরির অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে শুষ্ক মৌসুমে নৌপথে নাব্যতা কমে যাওয়ায় তেল পরিবহন করাও কঠিন হয়ে পড়ে। এসব সংকট নিরসনেই ২০১৮ সালের অক্টোবরে ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ নামে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। 

পরিকল্পনা ছিল অনেক আগেই 
জ্বালানি তেল পরিবহনে পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি পরিবহনে সংকট নিরসনে পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। তখন চট্টগ্রাম থেকে গাজীপুর পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এই প্রকল্প তখন বাস্তবায়ন হয়নি। পরে ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন সরকারের আমলেই ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয় এবং সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এরপর ২০১৮ সালে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। 

বেড়েছে মেয়াদ, বেড়েছে খরচ
২০১৮ সালে হাতে নেওয়া এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২-এর ডিসেম্বরে। তবে এই সময়ে কাজ শেষ হয়নি। দুই দফায় মেয়াদ বাড়ায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে। ফলে মোট ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। একই সঙ্গে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আমিনুল হক বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও দেশে ডলার-সংকটের কারণে প্রকল্পের খরচ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। 

যেভাবে এগোচ্ছে প্রকল্পের কাজ
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধানে রয়েছে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখাল থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত স্থাপন করা হচ্ছে পাইপলাইন। এ পর্যন্ত পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ২৪১ দশমিক ২৮ কিলোমিটার পাইপলাইন। পতেঙ্গা থেকে গোদনাইল পর্যন্ত ভূগর্ভে স্থাপন করা এসব পাইপলাইনের ব্যাস ১৬ ইঞ্চি। আবার নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার পাইপলাইন। এই এলাকায় পাইপলাইনের ব্যাস থাকছে ১০ ইঞ্চি। পতেঙ্গা থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত পাইপলাইন যাচ্ছে ২২টি নদীর তলদেশ ছুঁয়ে।

এ প্রকল্পের ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে ২৩২ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম এবং ফেনী অংশে ১৮ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ বাকি। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই এই কাজ শেষ হবে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ৯টি স্টেশন নির্মাণের ৮০ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে। পাশাপাশি ৪টি পাম্প হাউস বসানোর কাজ চলছে। আর কুমিল্লার বরুড়ায় ২১ হাজার টনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নতুন একটি ডিপো স্থাপন করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।

কর্মকর্তারা বলছেন, পাইপলাইন স্থাপনের পর বছরে ২৭ থেকে ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিবহন করা সম্ভব হবে, যা পর্যায়ক্রমে ৫০ লাখ টন পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আমিনুল হক বলেন, আগামী বছরের ডিসেম্বরেই পাইপলাইনে তেল যাবে ঢাকায়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত