রাঙামাটি রাঙাতে সতর্ক জেএসএস

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২: ২৯

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় আসন পার্বত্য রাঙামাটি। পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে সংসদীয় আসন এই একটিই। পাহাড়ে আধিপত্য ধরে রাখতে পাহাড়ি এ এলাকায় বিশেষ নজর থাকে সব দলেরই। তবে এখানে মূল খেলাটা খেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। অতীতের বেশির ভাগ নির্বাচনে দেখা গেছে, তারা যাকে সমর্থন দেয়, তিনিই এ আসনের এমপি হন। ২০১৪ সালে নিজেদের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল দলটি। ঊষাতন তালুকদার হয়েছিলেন এমপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এখনো জেএসএসের প্রস্তুতি চোখে না পড়লেও পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে দলটি।

তবে নির্বাচনের প্রায় এক বছর আগেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। দুই দল থেকেই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। দুই দলেরই চোখ জেএসএসের দিকে। জেএসএসকে নিজেদের ঘাঁটিতে আনতে চাইছে। তবে রাঙামাটি রাঙাতে সতর্ক পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি।

বর্তমানে এ আসনে সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের দীপংকর তালুকদার। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় এগিয়ে আছেন আরও দুজন। একজন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা। আরেকজন দলটির সিনিয়র সহসভাপতি রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা। নির্বাচন নিয়ে নিখিল প্রকাশ্যে না এলেও দীপংকর তালুকদার নিজে ও তাঁর অনুসারীরা প্রতিদিন কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইছেন।

জেএসএসের সঙ্গে দীপংকরের দা-কুমড়া সম্পর্ক বলে জানা গেছে। তাই দীপংকরকে নৌকার প্রার্থী করা হলে পাল্টা প্রার্থী দেবে জেএসএস। না হয় অন্য কাউকে সমর্থন দেবে। জেএসএসের একাধিক সূত্র বলছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূল হলে প্রার্থী দেবে তারা।সে ক্ষেত্রে ঊষাতন তালুকদারের বিকল্প কাউকে ভাবা হচ্ছে না। পরিস্থিতি অনুকূল না হলে নির্বাচন বর্জন করবে দলটি।

নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন দীপেন দেওয়ান, মনি স্বপন দেওয়ান ও কর্নেল মনিষ দেওয়ান। 
জেলায় জেএসএস ও ইউপিডিএফের আধিপত্য রয়েছে বেশ। নানিয়ারচর, কাউখালী উপজেলার পুরো এলাকা এবং বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার কিছু অংশে ইউপিডিএফের আধিপত্য রয়েছে। অন্যদিকে বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী, কাপ্তাই, রাঙামাটি সদর, লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় জনসংহতি সমিতির আধিপত্য। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এ আসনে যেকোনো প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি। কোনো প্রার্থীকে এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই। 

অনেকে মনে করেন, দীপংকরের চেয়ে নিখিল কুমার চাকমা ইউপিডিএফ ও জেএসএসের ভোটগুলো নৌকার বাক্সে ফেলতে পারবেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর বলেন, ‘আমরা দীপংকর তালুকদারের বিকল্প দেখছি না। নিখিল বা অন্যজনের কথা শুনিনি।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিখিল কুমার চাকমা বলেন, ‘আমি নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন চাইব কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে। এখনই ঘোষণা দিতে চাইছি না।’ চিংকিউ রোয়াজা বলেন, ‘দলের জন্য আমি আমার সবকিছু দিয়েছি। আমার মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার আছে।’

২০০১ সালে জেএসএস নির্বাচন বর্জন করে পরোক্ষভাবে বিএনপির মনি স্বপন দেওয়ানকে সমর্থন দিয়েছিল। এতে সহজ জয় পেয়েছিল বিএনপি। যদিও মনি স্বপনকে সমর্থন দেওয়ার কথাটি স্বীকার করে না জেএসএস। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এবার ২০০১ সালের মতো সুযোগ নিতে চান আওয়ামী লীগের নিখিল কুমার চাকমা। দল তাঁকে মনোনয়ন না দিলে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন তিনি। নিখিলের সঙ্গে মূল ইউপিডিএফ, গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফসহ আঞ্চলিক দলগুলোর সম্পর্কও খারাপ নয়।

জেএসএসের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা বলেন, ‘জেএসএস নির্বাচন করবে কি করবে না, তা সময় বলে দেবে।আমরা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের ওপর নজর রাখছি। এর বাইরে আপাতত কিছু বলছি না।’

বর্তমানে দলীয় কোন্দল কাটিয়ে উঠেছে বিএনপি। একই মঞ্চে বসে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা চালাতে দেখা যাচ্ছে তিন দেওয়ানকে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘দীপেন, মনিষ ও মনি স্বপন দেওয়ান ছাড়াও জেলা সভাপতি দীপন তালুকদার এবং আমি নিজেও দলের মনোনয়ন চাইব। দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই একসঙ্গে তাঁর পক্ষে কাজ করব।’

দীপেন দেওয়ানকে বিএনপি মনোনয়ন দিলে জেএসএস বা ইউপিডিএফ নিখিলকে সমর্থন না দিয়ে দীপেনকে সমর্থন দিতে পারে। কারণ, দীপেন দেওয়ান বেশ কয়েক বছর ধরে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দুই আঞ্চলিক দলের সমর্থন পেতে দল দুটির আস্থা অর্জন করতে হবে দীপেন ও নিখিলকে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত