প্রশাসন-বিজিবি বিরোধ কারাগারে দুই দিনমজুর

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২২, ০৮: ০৯
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২২, ১১: ৪৬

জমি নিয়ে বিরোধ চলছে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা প্রশাসন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মধ্যে। আর সেই বিরোধের সাতেপাঁচে না থেকেও কারাগারে যেতে হলো দুই দিনমজুরকে।

গত সোমবার রামগড় উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবি বিরোধপূর্ণ জায়গায় বেড়া দেওয়ার কাজ করতে গেলে রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত দুজন দিনমজুরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেন। এ সময় তিনি দিনমজুর দুজনকে পাঁচ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। দুজন দিনমজুর হলেন অফিস টিলার আবুল কালাম ও দারোগা পাড়ার রুহুল আমিন।

এর আগে গত বছর এ জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াসিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দেওয়ায় তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা দেখিয়ে কারাদণ্ড দেন নিরীহ দিনমজুর আলী আহাম্মদকে।

গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আলী আহাম্মদ দিনমজুরকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে নিজের গাড়িতে করে থানায় নিয়ে যান ইউএনও। পরে রাতে এক আদেশে তাঁকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সরকারের হতদরিদ্রদের ঘর নির্মাণের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ দেন খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ময়ুরখীল গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর আলী আহাম্মদ। এবার আরেক ইউএনওর প্রতিশোধের বলি হয়ে জেলে গেলেন দুই দিনমজুর।

রামগড় ৪৩ বিজিবি সূত্র জানায়, তাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে দুজন দিনমজুর আবুল কালাম ও রুহুল আমিন বিজিবির রামগড় বিওপির ঘেরা বেড়ার মেরামত কাজ করতে গেলে ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাঁদের জেলে পাঠান।

তবে রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত দাবি করেন, ‘প্রতিশোধ হিসেবে শ্রমিকদের জেলে পাঠানো হয়নি। একজন বিচারক হিসেবে দুই বছরের জেল দেওয়ার বিধান রয়েছে। আমি দিয়েছি পাঁচ দিন।’

রামগড় উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবির জমি নিয়ে বিরোধ ও শ্রমিক জেলে যাওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মো. আলীমউল্যাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিজিবি-উপজেলা প্রশাসন জমি নিয়ে বিরোধ ও শ্রমিকের জেলে যাওয়া দুঃখজনক।

দিনমজুর আবুল কালামের স্ত্রী অজিফা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের তিন মেয়ে, দুই ছেলেসহ সাতজনের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো হয়েছে। এ কারণে আমাদের সংসার অচল হয়ে পড়েছে।’

একই পাড়ার সত্তরোর্ধ্ব হারিচা খাতুন (আলেয়ার মা) বলেন, ‘দিনমজুর আবুল কালাম কোনো দিন খারাপ পথে চলেনি। তাঁকে কেন জেলে পাঠানো হবে।’

স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর মো. বাদশা মিয়া বলেন, রামগড় উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবির জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে নিরীহ দিনমজুর জেলে যাওয়া দুঃখজনক।

ইসলামি ফাউন্ডেশন খাগড়াছড়ির উপপরিচালক মো. মন্জুরুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বিজিবির নিয়ন্ত্রণে থাকা জায়গায় রামগড় উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন।

বিজিবি সূত্র জানায়, ২২৬ বছর আগে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে আজকের বিজিবির গোড়াপত্তন হয় রামগড়ের এ জায়গায়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত