দেশি-বিদেশি চারুশিল্পীদের নিয়ে কুষ্টিয়ায় শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী ক্র্যাক আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প। এবার বসেছে এর ১৬তম আসর। প্রতিবছর একটি মূল প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আর্ট ক্যাম্পটি অনুষ্ঠিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ‘এই সময়’। বাংলাদেশসহ সাতটি দেশের মোট ৩০ জন চারুশিল্পী অংশ নিয়েছেন ক্যাম্পটিতে।

কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কসংলগ্ন রহিমপুরের স্মরণ মৎস্যবীজ খামারে ২৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই আর্ট ক্যাম্প চলবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ক্যাম্পটির শিল্পকর্ম ও পারফরম্যান্স আর্ট সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে শেষ দিন অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক এই আর্ট ক্যাম্পে এবার অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, জাপান, জার্মানি, ব্রাজিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ জন চারুশিল্পী।

করোনা মহামারির কারণে এর আগের দুটি আসর সীমিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে এবারের আসরের আয়োজন করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গভাবেই। এ আসরের কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শিল্পী কনক আদিত্য। তিনি জানালেন, করোনা অতিমারির প্রভাব শুধু যে মানুষের মধ্যে পড়েছে, তা নয়। প্রকৃতিসহ প্রাণিজগতের মধ্যেও এর প্রভাব দৃশ্যমান। এ ছাড়া করোনা-পরবর্তী বিশ্বে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আরেকটা অবস্থা দেখা যাচ্ছে, যা মানুষকে বহুভাবে প্রভাবিত করছে। এ আর্ট ক্যাম্পে এবার সেসব নিয়ে শিল্প নির্মাণ হবে, পারফরম্যান্স হবে। সে জন্য এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘এই সময়’।

মাল্টিডিসিপ্লিনারি এই আর্ট ক্যাম্প ২০০৭ সাল থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে কুষ্টিয়ায়। এই ক্যাম্পে অংশ নেওয়া শিল্পীরা প্রধানত সাইট-স্পেসিফিক ও কনসেপচুয়াল আর্টওয়ার্ক এবং পারফরম্যান্স আর্ট নিয়ে কাজ করেন। শিল্প নির্মাণ উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় স্থানীয় পরিবেশবান্ধব উপকরণ। এখানে অংশগ্রহণ করেছেন শান্তিনিকেতনের কলাভবনের ছাত্রী সুদেষ্ণা নন্দী। ক্র্যাক আর্ট ক্যাম্প নিয়ে তিনি জানালেন তাঁর মুগ্ধতার কথা। সুদেষ্ণা বলেন, ‘ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন মিডিয়ামে কাজ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে কোথায় যেন সবকিছু এক হয়ে যাচ্ছে! প্রতিদিন সবার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। জানতে পারছি শিল্প সম্পর্কে অনেকের ধারণা, আইডিয়া। সেগুলো আমাকে সমৃদ্ধ করছে।’

আর্ট ক্যাম্পে অংশ নেওয়া জার্মান শিল্পী জুলিয়ান অ্যাঙ্গারম্যান বলেন, ‘সারা বিশ্ব করোনা অতিমারিতে বিপর্যস্ত। সে অবস্থা থেকে সবাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আমাদের এই বিষয়ের ওপর কাজ করতে হবে। সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশে আমাদের জন্য এটা একটা নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা।’

শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দের নেতৃত্বে এবং শিল্পী দেলোয়ার হোসেনের সার্বিক সহযোগিতায় কুষ্টিয়ার এই আর্ট ক্যাম্পটির সূচনা হয়েছিল শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, লেখক, কবি, চলচ্চিত্রকারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সমন্বয়ে। কথা হয় শাওন আকন্দের সঙ্গে। তিনি জানান, কুষ্টিয়া অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণার কাজ করতে গিয়ে নিভৃতচারী শিল্পী দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। শিল্পচর্চা ছেড়ে সে সময় নিজের খামারে কৃষিকাজে মনোযোগী ছিলেন তিনি। কুষ্টিয়ার রহিমপুরে স্মরণ মৎস্যবীজ খামারের বিস্তীর্ণ জায়গাকে কাজে লাগিয়ে একটি আর্ট ক্যাম্প করার প্রস্তাব দিলে তিনি তাতে সম্মত হন। প্রথম থেকে এই আর্ট ক্যাম্প পরিচালনার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয় বাউল সম্প্রদায়ের স্বতঃস্ফূর্ত ধারায় গড়ে ওঠা সাধুসঙ্গের ধারণাকে। আর সেই থেকে নিয়মিতভাবে এই আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হচ্ছে।