সেতু নির্মাণের কাজ ফেলে উধাও ঠিকাদার

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮: ৫৯
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯: ০১

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার শোলাকিয়া গাছবাজার পার হয়েই রঘুখালী এলাকা। সেখানে নরসুন্দা নদীর ওপর একটি পাকা সেতু ছিল। ১০-১২ বছর আগে সেটির কিছু অংশ ভেঙে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সেতুটি পুরোপুরি ভেঙে ২০২১ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এখানে নতুন সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়। 

সোয়া তিন কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে কাজ শুরুর পরপরই উধাও হয়ে যান ঠিকাদার। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন। সেই মেয়াদ প্রায় দুই বছর আগে শেষ হয়েছে। অথচ ঠিকাদার সেতুর মূল কাজে হাতই দেননি। সেতুর দুই পাশের দুই গার্ডার অসম্পূর্ণ নির্মাণ রেখে তিন বছর ধরে লাপাত্তা তিনি। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেতু নির্মাণ বন্ধ রেখে বিপাকে ফেলা হয়েছে কয়েক লাখ মানুষকে। আগে পুরোনো সেতুতে কিছুটা হলেও যানবাহন নিয়ে চলাচল করা যেত। বিকল্প সড়ক না থাকায় এখন প্রায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার ঘুরে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন নদী পারাপারের জন্য পাশে একটি কাঠের সাঁকো তৈরি করলেও সেটার অবস্থাও জরাজীর্ণ। 

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো সেই সেতুর জায়গায় দুই পাশে নতুন নির্মাণাধীন দুটি গার্ডার পড়ে রয়েছে। রডগুলো বেরিয়ে আছে। এখন শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নদীতে বেশি পানি নেই। সাধারণ মানুষ কাঠের সেতু দিয়ে কোনোরকমে নদী পার হচ্ছেন। 

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরসুন্দা নদীর রঘুখালী সেতুর একদিকে শোলাকিয়া, গাছবাজার, কোটশোলাকিয়া, হাজরাদী, বাদেশোলাকিয়া রঘুখালী, ঈশা খাঁপল্লি ও কাদির জঙ্গলের পাঠানপাড়া গ্রাম, অন্যদিকে ছয়না, রাজকুন্তি, বৌলাইসহ ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম। দুই পারের গ্রামের মানুষ নদী পারাপারে এই রঘুখালী সেতুই ব্যবহার করেন। এ ছাড়াও করিমগঞ্জ সদর, চামড়া বন্দর ও মরিচখালীর অসংখ্য লোক কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে বাইপাসে এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে পারতেন। তা ছাড়া জেলা শহরের একরামপুর ও সতাল এলাকার ভয়াবহ যানজটের দুর্ভোগ এড়াতে কিশোরগঞ্জ থেকে করিমগঞ্জ উপজেলায় এ সেতুর ওপর দিয়ে সহজে যাতায়াত করা যেত। 

সেতুর দক্ষিণ দিকের গ্রামগুলোর মাঠে প্রচুর সবজি, ধান, পাট ও গম হয়। নদী পারাপারে এসব গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা এই সেতু। উৎপাদিত ফসল কিশোরগঞ্জ শহরে নিয়ে যেতে হলে এই সেতু দিয়েই যেতে হয় স্থানীয় লোকজনকে। দীর্ঘদিন ধরে পুরোনো সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণে এই কালক্ষেপণের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন তাঁরা। সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় গ্রামের ফসল বাজারে তুলতে নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, চলাচলের উপযুক্ত সেতুটি ভেঙে তিন বছর আগে নতুন করে নির্মাণ শুরু হয় নরসুন্দা নদীর ওপর গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটির কাজ। কিন্তু শুরুতে দুই পাশে দুটি গার্ডার নির্মাণের পরপর প্রায় তিন বছর উধাও রয়েছেন ঠিকাদার। নির্মাণকাজ আটকে থাকায় যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। 

সেতুটির পাশের গ্রাম ছয়নার বাসিন্দা ও কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুদয়াল সরকারি  কলেজের রিমা আক্তার বলেন, প্রতিদিন কাঠের ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হয়ে কলেজ যেতে হয়। একটি সেতু তৈরিতে কি তিন বছর লাগে? সরকার কী করছে? আমাদের তো অনেক কষ্ট হচ্ছে।

সদর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 
এইচটিবিএল সার্চের (জেবেকা) ও সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিশোরগঞ্জের মেসার্স এস আলম চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা বরাদ্দে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ১৭ মার্চ।

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিশোরগঞ্জের এস আলমের স্বত্বাধিকারীর মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সেতুটির নিচের পাইলিংসহ দুই পাশের দুটি গার্ডার নির্মাণ করে ওপরের স্ল্যাবের কাজ বাকি রেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাপাত্তা হয়ে গেছে। এক বছর আগে তাঁদের চুক্তিপত্র বাতিল চেয়ে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির অনুমোদন পেলে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত