ফেনীর কালিদাস পাহালিয়া নদীর পরিবেশ দূষণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলার স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন। গত মঙ্গলবার বিকেলে দেওয়া আদালতের এই আদেশের বিষয়টি গতকাল বুধবার নিশ্চিত করেন এ সংক্রান্ত সংবাদ আদালতের নজরে আনা অ্যাডভোকেট মো. আবুল বাশার।

ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির তিনজন সদস্য অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট কাজী মো. শাহ জালাল ও অ্যাডভোকেট মো. আবুল বাশার পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ আদালতের নজরে আনলে পরিবেশ আদালতের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ২৪ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ফেনী সদর এবং সোনাগাজী উপজেলার কালিদাস পাহালিয়া নদীতে পোলট্রি খামারের বর্জ্য, মরা মুরগি, পচা ডিম, বিভিন্ন আবর্জনা ফেলে বহুমুখী দূষণের পাশাপাশি এর তীর দখল করে নেওয়া হচ্ছে। এতে একদিকে নদীর পানি যেমন দূষিত হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে এখনই ব্যবস্থা না নিলে নদীটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।

বিশেষ করে পোলট্রি খামারিদের কারণেই নদীটি দূষণের শিকার। কালিদাস পাহালিয়া নদীর অববাহিকার মধ্যে ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া, ফরহাদনগর ও ধলিয়া ইউনিয়নের কিছু এলাকা এবং সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের প্রায় পুরো এলাকাজুড়ে নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে শত শত খামার। এসব খামারের বর্জ্য ও মরা মুরগি বস্তায় ভরে ফেলা হয় নদীতে। পরে ওই সব বর্জ্য ও মুরগি পচে সৃষ্টি হয় দুর্গন্ধ।

ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের। এ ছাড়া খামারের বর্জ্য ও মরা মুরগি বস্তায় ভরে আবার কোথাও কোথাও এমনিতেই নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে নদীর পানি দুর্গন্ধ হয়ে উঠছে। মুরগির বিষ্ঠার পচা দুর্গন্ধ আশপাশের পরিবেশ নষ্ট করছে।

আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কালিদাস পাহালিয়া নদী ফেনী সদর উপজেলা ও সোনাগাজী উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। বিভিন্ন ব্যক্তির দূষণের ফলে নদীটি পরিবেশের জন্য হুমকির পথে।

নদী দূষণ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জনজীবনের স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত ও পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধ নির্মূল করার লক্ষ্যে এই সংবাদ আমলে নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন। এ জন্য সরেজমিনে তদন্ত করে প্রকৃত আসামিদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি কালিদাস পাহালিয়া নদীর দূষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ফেনীর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ২৪ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এ ঘটনা তদন্তের স্বার্থে ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ফেনী মডেল থানা এবং সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আইনগত ও প্রশাসনিক সহায়তা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।