ভারতে আইসিসিআর বৃত্তি নিয়ে পড়তে চাইলে

মো. আশিকুর রহমান
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩, ১০: ০৩

স্কলারশিপ নিয়ে ভারতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ দিচ্ছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিআরসি)। আগ্রহীদের জন্য এই স্কলারশিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন আঁখি রানী দাস তিতলি। তিনি কলকাতায় রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।

আইসিসিআর (ICCR) একটি কালচারাল সংগঠন। পুরো নাম হচ্ছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (Indian Council for Cultural Relations)। ১৯৫০ সালে ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদ আইসিসিআর (ICCR) প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটি প্রতিবছর ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে ভারতে পড়তে যাওয়ার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কিছুসংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থীকে ফুল স্কলারশিপ দিয়ে ভারতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ দিয়ে থাকে।

নির্ধারিত আসনসংখ্যা
আইসিসিআর বিশ্বব্যাপী সাধারণত ৭৩টি দেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে থাকে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ২০০ জন শিক্ষার্থীর এই স্কলারশিপ পাওয়ার সৌভাগ্য হয়। ২০০টি বৃত্তির মধ্যে স্নাতক পর্যায়ে ১৪০, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৪০ ও এমফিল/পিএইচডি পর্যায়ে ২০টি বৃত্তি দেওয়া হয়। বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে এই সংখ্যা ৫০০ ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনের সময় সফরে এসে এ দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বৃত্তি বা স্কলারশিপের ঘোষণা দেন। সেই স্কলারশিপটিই সুবর্ণজয়ন্তী স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপের আওতায় ভারতের নামকরা যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ বিনা ব্যয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা।

সুবিধা ও সুবিধা
এই স্কলারশিপ থেকে শিক্ষার্থীরা মাসিক নির্দিষ্ট পরিমাণে স্টাইপেন্ড পেয়ে থাকেন। কোর্স অনুযায়ী স্টুডেন্টরা স্টাইপেন্ডে রকমফের হয়ে থাকে। প্রতি মাসে স্নাতকে ১৮ হাজার রুপি, স্নাতকোত্তরে ২০ হাজার রুপি, পিএইচডিতে ২২ হাজার রুপি, পোস্ট ডক্টরেটে ২৫ হাজার রুপি পান। এই স্কলারশিপে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিতে হয় না। বিভিন্ন রকম গ্র্যান্ড এবং অ্যাকোমোডেশনের সুবিধা পাওয়া যাবে। এই স্কলারশিপের আবেদন করার জন্য কোনো রকম আবেদন ফি লাগে না। 

আবেদনের যোগ্যতা
এইচএসসির পর অনার্সে ভর্তি হওয়ার সময় এসএসসি ও এইচএসসিতে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ নম্বর বা জিপিএ পেতে হবে। অনার্স সম্পন্ন করে মাস্টার্সে আবেদন করার জন্য অনার্সে কমপক্ষে ২.৫ পেতে হবে। মাস্টার্স সম্পন্ন করে পিএইচডি করার সময়েও মাস্টার্সে ভালো গ্রেড পেতে হবে। তবে নিয়মের পরিবর্তন সাপেক্ষে আবেদনের যোগ্যতা ভিন্ন হতে পারে। টোফেল-আইইএলটিএস বাধ্যতামূলক নয়, শিক্ষার্থীরা তাঁদের টোফেল-আইইএলটিএস স্কোরও আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে পারেন। সেটি তাঁদের ইংরেজির দক্ষতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যদিও এসব কোর্সের জন্য টোফেল-আইইএলটিএস বাধ্যতামূলক নয়। 

আঁখি রানী দাস তিতলিকী কী ডকুমেন্টস লাগবে

  • পাসপোর্ট
  • সব শিক্ষাগত যোগ্যতার মার্কশিট ও সার্টিফিকেট
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • রেফারেন্স লেটার
  • শিক্ষার্থীর সিগনেচার
  • ৫০০ শব্দের মধ্যে একটি essay লিখে আপলোড করতে হবে। এটি গুগল বা অন্য কোথাও থেকে কপি করা যাবে না। মূলত শিক্ষার ইংলিশ স্কিল বা দক্ষতা যাচাই করার জন্য এই পদক্ষেপ।
  • মেডিকেল ফিটনেস ফরম। আইসিসিআর পোর্টালে এ ফরম দেওয়া থাকে। ডাউনলোড করে ডাক্তারের কাছ থেকে পূরণ করে স্ক্যান করে জমা দিতে হবে।
  • আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বয়স হতে হবে ১৮-৩০ বছরের মধ্যে। 

আবেদনের পদ্ধতি: আইসিসিআর স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য সবার প্রথমে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (http:/ /a2ascholarships. iccr. gov. in) গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে আবেদন করতে হবে। আবেদন গৃহীত হলে যথাক্রমে লিখিত পরীক্ষা English Proficiency Test (EPT) এবং পরবর্তীকালে টপারদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। ভাইভায় টেকার পরই ইন্ডিয়ান হাইকমিশন অফার লেটার পাঠায়। অফার লেটার পাওয়ার পরপরই ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ও আমার পঠিত বিষয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কবির নামাঙ্কিত ১৯৬২ সালের ৮ মে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তিনটি মূল অনুষদের মধ্য দিয়ে মোট ২৯টি বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদনে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে কলা অনুষদের অধীনে মানব অধিকার ও মানব উন্নয়নের শুধু মাস্টার্স কোর্সটি এখানে চালু করা হয়। ২ বছরের এই মাস্টার্স প্রোগ্রামে চার সেমিস্টারে মোট ১০০ ক্রেডিট এবং ২৮টি আসন বিদ্যমান।

পরামর্শ
প্রতিবছরই আইসিসিআর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি দেয়। শুধু যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ তা নয়, ভারতবর্ষের ঐতিহাসিক ও নানা আকর্ষণীয় জায়গায় ভ্রমণের সুযোগ পান বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা। ভারতের নানা জনপদ, বিভিন্ন এলাকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ ভাবনা ও লোকসংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার দারুণ সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী এই বৃত্তির জন্য আবেদন করেন। একটু পরিকল্পনা করে বৃত্তির আবেদন করলে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন আছে যাঁদের, তাঁদের জন্য ভারত দারুণ এক গন্তব্য হতে পারে।

আঁখি রানী দাস তিতলি, শিক্ষার্থী, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত 

অনুলিখন: মো. আশিকুর রহমান

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত