Ajker Patrika

মহম্মদপুরে পোলট্রি ব্যবসায় ধস

মোহাম্মদ উজ্জ্বল, মহম্মদপুর (মাগুরা)
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ২৫
মহম্মদপুরে পোলট্রি ব্যবসায় ধস

এরই মধ্যে উপজেলার প্রায় ৫০ ভাগ পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রয়লার-লেয়ার মুরগির ছোট বাচ্চা ও পোলট্রি ফিডের হঠাৎ চড়া দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে মাংস ও ডিম উৎপাদন।

অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ পেতে জামানতের ঝামেলা থাকায় এই ব্যবসায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন খামারিরা। মহম্মদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সম্প্রতি খাবার ও বাচ্চার দাম দফায় দফায় লাগামহীনভাবে বাড়ার কারণে মহম্মদপুর উপজেলা পোলট্রি খামারিরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। একই সঙ্গে সিন্ডিকেট করে মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তাঁরা।

আন্তর্জাতিক বাজারে দর বৃদ্ধির অজুহাতে দেশীয় বাজারে অযৌক্তিকভাবে কাঁচামালের দর বৃদ্ধি বেড়েছে। সংকট আরও ঘনীভূত হলে মহম্মদপুর পোলট্রি শিল্পের প্রান্তিক খামারিদের জীবন ও জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সরকারের সহায়তা চেয়ে মহম্মদপুরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে পোলট্রি খামারিরা।

উপজেলার প্রায় ৫০ ভাগ পোলট্রি খামার বন্ধ হওয়ায় খামারের প্রায় আড়াই শতাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বেড়েছে বেকারত্ব। প্রতিদিনের ডিমের চাহিদায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের খামারি জুবাইর হোসেন জিবু, মো. কুরবান আলী কাবুল ইসলাম প্রমুখ বলেন, ‘লেয়ার মুরগির বাচ্চা, মুরগির খাবারসহ অন্যান্য উপকরণের মূল্য বাড়ায় উপজেলার সম্ভাবনাময় এ শিল্প লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন আগেও একটি লেয়ার মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ২০ টাকা। বর্তমানে সেই বাচ্চার দাম ৪০ টাকা। একইভাবে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দামের একটি বয়লার মুরগির বাচ্চা ৭০-৭৫ টাকা ও সোনালি জাতের বাচ্চা ৩০ থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা হয়েছে। তা ছাড়া পোলট্রি মুরগির খাবার রেডি ফিট প্রতি বস্তা ১৮ শ টাকা থেকে বেড়ে ২৬ শ টাকা বস্তা হয়েছে।

 

দীঘা ইউনিয়নের খামারি হাবিব মিয়া বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে একটি ডিম বিক্রি হত ৬ থেকে ৭ টাকা। এখনো খামারিরা সেই আগের দামে ডিম বিক্রি করছেন। তাঁর খামারে অর্ধেক মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। ঈদের আগে বাকি অর্ধেক মুরগি বিক্রি করে খামার বন্ধ করে দেবেন।’

উপজেলার নাগড়া গ্রামের খামারি মো. রকিব বলেন, ‘লোকসান করতে করতে আমরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। দামটাও আমরা নির্ধারণ করতে পারছি না। নির্ধারণ করছে অন্য একটি সিন্ডিকেট। পোলট্রি খামার করে বছরের পর বছর লোকসান গুনছি। মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।’

তাঁরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের সময়ে চাহিদা কম থাকায় এমনিতেই মুরগি ও ডিম বিক্রি করতে হয়েছে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে। এতে প্রান্তিক খামারিরা লোকসান গুনতে গুনতে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে এখন ফিড ও বাচ্চার যে দাম, সেটা দিয়ে খামার পরিচালনা করতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

মাগুরা জেলা খামার মালিক সমিতির সভাপতি এমএইস রহমান শিবলু বলেন, ‘উপজেলার প্রায় ৫০ ভাগ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আর বাকি ২০ ভাগ বন্ধ হওয়ার পথে। বেকার যুবকেরা ঋণ নিয়ে যে খামার করেছিলেন, এখন হঠাৎ করে খামারের মুরগির খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ায় তা বন্ধ হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাঁর নিজের খামারে প্রায় ৯ হাজার লেয়ার মুরগি রয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।’

মহম্মদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, খাদ্য ও ওষুধের মূল্য বাড়ায় ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। ফলে বর্তমানে এ উপজেলার অনেকেই খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মচারীরা মাঠপর্যায়ে তদারকি চালিয়ে ও পরামর্শ দিয়ে খামারিদের এ ব্যবসায় ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বনশ্রীতে স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার আমিনুল ছাত্রলীগের, সুমন শ্রমিক দলের নেতা

সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

থানায় থানায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা হচ্ছে

ককটেল ফুটতেই সেলুনে লুকায় পুলিশ, রণক্ষেত্র হয় এলাকা

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত