ড. আর এম দেবনাথ
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ একজন অত্যন্ত ভদ্রলোক মানুষ। তিনি এখন দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের কর্তাব্যক্তি। কেন জানি আমার মনে হচ্ছে, তিনি অর্থনীতির সমস্যাগুলো দেখতে গিয়ে বাণিজ্যের দায়িত্ব কিছুটা ভুলে গেছেন বা যাচ্ছেন। তা না হলে দেশের তিনটি স্বনামধন্য দৈনিক পত্রিকা নিম্নলিখিত শিরোনামে খবর পরিবেশন করতে পারত না।
একটি কাগজের খবরের শিরোনাম: ‘আরও বেড়েছে ডিমের দাম, সবজির বাজারেও অস্বস্তি’। দ্বিতীয় কাগজের শিরোনাম হয়েছে: ‘মুরগি-ডিমের বাজারে অস্থিরতা, বাড়ছে আলু-চিনি ও ভোজ্য তেলের দাম’। সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত আর একটি কাগজে খবরের শিরোনাম: ‘দ্রব্যমূল্য কমাতে নজর কম’।
কাগজগুলোর খবরের ভেতরে বিস্তারিত পণ্যমূল্য দেওয়া হয়েছে এবং তা তুলনামূলকভাবে দেখা যাচ্ছে, সবারই একই কথা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেমে নেই। অবশ্য সরকারি তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। খবরের কাগজে দেখলাম, মূল্যস্ফীতির হার সেপ্টেম্বরে নাকি আগস্টের তুলনায় কমেছে। কমলেও তা এখন ১০ শতাংশের মতোই। মুশকিল হচ্ছে, আগের দিন হলে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও ড. হাসান এইচ মনসুর এই তথ্য বিশ্বাস করতেন না। যেমন আমি করি না। কিন্তু তাঁরা এখন সরকারের লোক। কী করে বলবেন যে সরকারি এই মূল্যস্ফীতির তথ্য সঠিক নয়। অথচ বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। বাস্তবতা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্যে কোনো স্বস্তি নেই। মানুষও স্বস্তিতে নেই।
এখানে একটা ঝামেলা আছে। দেশবাসীর মধ্যে যাঁরা উঁচুতে অর্থাৎ উচ্চবিত্ত, বিত্তশালী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে পড়েন, তাঁরা ব্যস্ত ‘সংস্কার’ নিয়ে। তাঁদের কাছে অগ্রাধিকারের বিষয় এখন দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ফ্যাসিবাদ, প্রশাসন, গণহত্যা ইত্যাদি। এই শ্রেণির মানুষের কাছে ভালো লাগে বড় রাঘববোয়ালদের খবর। কে ধরা খেল, কে বর্ডারে ধরা পড়ল, কে কত টাকা নিয়ে ধরা খেল, কার জেল গমন হলো, কার জামিন হলো, কার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলো। এসব খবরের দামই এখন বেশি। মধ্যবিত্ত এসব খবরই পছন্দ করে বেশি। এর জন্যই মিডিয়া এসব খবর দিয়ে ভরে দিচ্ছে পাতার পর পাতা। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে একটি। সত্যি সত্যি যদি বলতে হয়, তাহলে বলতে হবে গ্রামের মানুষের কাছে, সাধারণ মানুষের কাছে, গরিব ও শ্রমজীবী মানুষের কাছে এসব খবরের মূল্য কম। তারা এসব শোনে কিন্তু মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। তাদের কাছে বড় খবর হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম। কোনটার দাম বাড়ল, কেন বাড়ল। কোন বাজারে কোন জিনিসের মূল্য কত?
‘সংস্কার’ কী, ‘রাষ্ট্র’ কী, ‘সুশাসন’ কী ইত্যাদি সম্পর্কে কেউ তাদের বোঝায়নি, তারা তাই এসব ব্যাপারে উৎসাহী নয়। তবে উৎসাহী নির্বাচনে। আমাদের দেশে নির্বাচনকে সাধারণ মানুষ উৎসব হিসেবে বিবেচনা করে। নির্বাচন এলে তাদের কেউ একটা গেঞ্জি পায়, লুঙ্গি পায়, বিড়ি খেতে পায়, পান খেতে পায়—এমনকি কখনো কখনো বিরিয়ানিও খেতে পায়। নির্বাচন তাই তাদের কাছে মহা আনন্দের বিষয়। নির্বাচনের কথা শুনলে সে জন্য মানুষ উৎসাহ পায়। ফলাফলের বিষয়ে তারা ভাবিত না।
এই যে বাস্তবতা, এরই মধ্যে আমাদের স্বনামধন্য উপদেষ্টারা কি মূল্যস্ফীতির কথা ভুলে গেছেন? না, ভুলে গেছেন বললে কিছুটা ভুলই হবে। আমাদের সবেধন নীলমণি কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক তার চেষ্টা করে যাচ্ছে। নতুন গভর্নর সাহেব নতুন নতুন ব্যবস্থা নিচ্ছেন, টেস্ট করছেন তাঁর ‘আইএমএফি’ বিদ্যা। ব্যাংক রেট, রেপো রেট (যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ দেয় সাময়িকভাবে) সমানে বাড়িয়েই চলেছেন। ৯ শতাংশে উঠেছে রেপো রেট। ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার বেড়ে হয়েছে ১২-১৩ শতাংশ। উদ্দেশ্য ঋণকে ‘চড়া’ মূল্য করা। টাকাকে দামি করা। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হয়। নোট ছাপিয়ে দুস্থ ব্যাংকগুলোকে সাহায্য করা তিনি বন্ধ করেছেন। অনেক ব্যাংকে তাই ১ লাখ টাকার চেক দিয়েও টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।
মানুষের মধ্যে মাসের প্রথম সপ্তাহেই টাকার জন্য হাহাকার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার শুল্ক হারও কমিয়েছে। এদিকে দেখা যাচ্ছে, ভারতের পেঁয়াজের ওপরও শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। ভারত অনেক ভোগ্যপণ্যের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছে। এ ধরনের আরও অনেক পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি। বস্তুত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বেশ সক্রিয়। কিন্তু ফলাফল কী? বাজারে তো এসবের কোনো ‘আসর’ পড়ছে বলে মনে হচ্ছে না। উল্টো বরং ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁদের ‘সুদ-খরচ’ অনেক বেড়ে গেছে। এটা তাঁদের জন্য বোঝা। পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বেতনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি ভঙ্গ করে ২ হাজার কোটি টাকার নোট ছাপিয়ে মালিকদের দিয়েছে। বাজারে ‘ব্যবসা’র অভাব। ব্যাংকে ব্যাংকে নতুন আমানত আসছে কম। টাকা সবাই ধরে রাখছে। সুখবরের মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে আমাদের রেমিট্যান্স সেপ্টেম্বর মাসে বেশ বেড়েছে। এটা একটা স্বস্তির খবর।
এখন নতুন সরকার, নতুন উদ্দীপনা। বলা হচ্ছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সরকার। বিপ্লবী সরকারও কেউ কেউ বলছেন। মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড আশাবাদ। ১৫ বছরের দুঃশাসন থেকে তারা মুক্তি পেয়েছে বলে মনে করে। তখন সিন্ডিকেট ছিল, চাঁদাবাজি ছিল, ছিল রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এখন তো আর সিন্ডিকেট নেই। সিন্ডিকেটের লোকজন হয় দেশত্যাগী, না হয় কারাগারে। কেউ বলে চাঁদাবাজি আছে, কেউ বলে নেই। কেউ বলে এক গ্রুপের বদলে অন্য গ্রুপ চাঁদাবাজি করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সম্যক উন্নতি এখনো হয়নি। তবু দৃশ্যত চাঁদাবাজি আগের তুলনায় কম। টিসিবিও নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্য ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করে যাচ্ছে। কিন্তু তবু মূল্যস্ফীতিতে কোনো স্বস্তি নেই।
ঠিক আছে পণ্যমূল্য বাড়ুক। তবে পাশাপাশি বাড়া দরকার মজুরি। মজুরি বৃদ্ধির খবর কী? মুশকিল হচ্ছে, সরকার মূল্যস্ফীতির খবর দেয় কিন্তু মজুরি হ্রাস-বৃদ্ধির কোনো খবর দেয় না। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, মজুরির বাজার মন্দা। রিকশাওয়ালার আয় কমেছে, শ্রমজীবীর আয় কমেছে, চারদিকে লোকের চাকরি যাচ্ছে। চাকরিচ্যুত লোক আত্মহত্যা করছে বলেও খবর আছে। বহু কলকারখানা পুড়ে ছাই হয়েছে। যেগুলোতে কাজ করত হাজার হাজার শ্রমজীবী।
আশুলিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পোশাককর্মীরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছে। গুলিতে একজন শ্রমিকের মৃত্যুও হয়েছে। এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ভালো নয়। এখন দেখা যাচ্ছে, শিল্প উৎপাদন স্থবির, আমদানিতেও স্থবিরতা। রপ্তানি বাজারে আশাপ্রদ কোনো খবর নেই। ঋণের অভাব বাজারে। ডলারের বাজার এখনো চড়া। চাইলেই ডলার পাওয়া যায় না। সরকার তার বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না। বিদেশিরা অনেক টাকা পাবে। তার জন্য তাগিদ দিচ্ছে। উপদেষ্টারা দাতাদের কাছে আবদার করছেন নতুন ঋণের জন্য।
অনেকের ধারণা, প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্যে আট-দশ বিলিয়ন ডলার ঋণ আমরা বিদেশ থেকে পেতে পারি। কিন্তু টাকাটা ঋণ। সাহায্য নয়, অনুদান নয়, বিনিয়োগ নয়। ঋণ তো আমাদের অনেক হয়েছে। এর সুদসহ দিতে গিয়েই যথেষ্ট ত্রাহি অবস্থা। তার ওপর আবার আট-দশ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ। এর অর্থ কী? বোঝা কি বাড়বে না কমবে? এতে কি ভালো হবে, না মন্দ হবে? নানা চিন্তা। শোনা যাচ্ছে, সরকার রাজস্ব বৃদ্ধি করতে পারছে না। বেতনের টাকা কি সরকার ঋণ করে দিচ্ছে। এটা হলে খারাপ খবর। সামনে মরা কার্তিক। এর মধ্যে বড় বন্যা হয়ে গেছে। বহু ক্ষয়ক্ষতি। কার্তিক মাসের জন্য আমাদের খাদ্যপ্রস্তুতি আছে তো? সরকারের গুদামে অনেক সময় চাল-গম থাকে অঙ্কের হিসাবে। এটা কাজির হিসাবের মতো। সাবধান এখনই হওয়া দরকার। স্টকের কী অবস্থা, তা খতিয়ে দেখা দরকার। মূল্যস্ফীতি রোধ হোক এক নম্বর কাজ। সঙ্গে চলুক সংস্কার—বাধা নেই।
লেখক: ড. আর এম দেবনাথ
সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ একজন অত্যন্ত ভদ্রলোক মানুষ। তিনি এখন দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের কর্তাব্যক্তি। কেন জানি আমার মনে হচ্ছে, তিনি অর্থনীতির সমস্যাগুলো দেখতে গিয়ে বাণিজ্যের দায়িত্ব কিছুটা ভুলে গেছেন বা যাচ্ছেন। তা না হলে দেশের তিনটি স্বনামধন্য দৈনিক পত্রিকা নিম্নলিখিত শিরোনামে খবর পরিবেশন করতে পারত না।
একটি কাগজের খবরের শিরোনাম: ‘আরও বেড়েছে ডিমের দাম, সবজির বাজারেও অস্বস্তি’। দ্বিতীয় কাগজের শিরোনাম হয়েছে: ‘মুরগি-ডিমের বাজারে অস্থিরতা, বাড়ছে আলু-চিনি ও ভোজ্য তেলের দাম’। সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত আর একটি কাগজে খবরের শিরোনাম: ‘দ্রব্যমূল্য কমাতে নজর কম’।
কাগজগুলোর খবরের ভেতরে বিস্তারিত পণ্যমূল্য দেওয়া হয়েছে এবং তা তুলনামূলকভাবে দেখা যাচ্ছে, সবারই একই কথা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেমে নেই। অবশ্য সরকারি তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। খবরের কাগজে দেখলাম, মূল্যস্ফীতির হার সেপ্টেম্বরে নাকি আগস্টের তুলনায় কমেছে। কমলেও তা এখন ১০ শতাংশের মতোই। মুশকিল হচ্ছে, আগের দিন হলে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও ড. হাসান এইচ মনসুর এই তথ্য বিশ্বাস করতেন না। যেমন আমি করি না। কিন্তু তাঁরা এখন সরকারের লোক। কী করে বলবেন যে সরকারি এই মূল্যস্ফীতির তথ্য সঠিক নয়। অথচ বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। বাস্তবতা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্যে কোনো স্বস্তি নেই। মানুষও স্বস্তিতে নেই।
এখানে একটা ঝামেলা আছে। দেশবাসীর মধ্যে যাঁরা উঁচুতে অর্থাৎ উচ্চবিত্ত, বিত্তশালী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে পড়েন, তাঁরা ব্যস্ত ‘সংস্কার’ নিয়ে। তাঁদের কাছে অগ্রাধিকারের বিষয় এখন দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ফ্যাসিবাদ, প্রশাসন, গণহত্যা ইত্যাদি। এই শ্রেণির মানুষের কাছে ভালো লাগে বড় রাঘববোয়ালদের খবর। কে ধরা খেল, কে বর্ডারে ধরা পড়ল, কে কত টাকা নিয়ে ধরা খেল, কার জেল গমন হলো, কার জামিন হলো, কার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলো। এসব খবরের দামই এখন বেশি। মধ্যবিত্ত এসব খবরই পছন্দ করে বেশি। এর জন্যই মিডিয়া এসব খবর দিয়ে ভরে দিচ্ছে পাতার পর পাতা। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে একটি। সত্যি সত্যি যদি বলতে হয়, তাহলে বলতে হবে গ্রামের মানুষের কাছে, সাধারণ মানুষের কাছে, গরিব ও শ্রমজীবী মানুষের কাছে এসব খবরের মূল্য কম। তারা এসব শোনে কিন্তু মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। তাদের কাছে বড় খবর হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম। কোনটার দাম বাড়ল, কেন বাড়ল। কোন বাজারে কোন জিনিসের মূল্য কত?
‘সংস্কার’ কী, ‘রাষ্ট্র’ কী, ‘সুশাসন’ কী ইত্যাদি সম্পর্কে কেউ তাদের বোঝায়নি, তারা তাই এসব ব্যাপারে উৎসাহী নয়। তবে উৎসাহী নির্বাচনে। আমাদের দেশে নির্বাচনকে সাধারণ মানুষ উৎসব হিসেবে বিবেচনা করে। নির্বাচন এলে তাদের কেউ একটা গেঞ্জি পায়, লুঙ্গি পায়, বিড়ি খেতে পায়, পান খেতে পায়—এমনকি কখনো কখনো বিরিয়ানিও খেতে পায়। নির্বাচন তাই তাদের কাছে মহা আনন্দের বিষয়। নির্বাচনের কথা শুনলে সে জন্য মানুষ উৎসাহ পায়। ফলাফলের বিষয়ে তারা ভাবিত না।
এই যে বাস্তবতা, এরই মধ্যে আমাদের স্বনামধন্য উপদেষ্টারা কি মূল্যস্ফীতির কথা ভুলে গেছেন? না, ভুলে গেছেন বললে কিছুটা ভুলই হবে। আমাদের সবেধন নীলমণি কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক তার চেষ্টা করে যাচ্ছে। নতুন গভর্নর সাহেব নতুন নতুন ব্যবস্থা নিচ্ছেন, টেস্ট করছেন তাঁর ‘আইএমএফি’ বিদ্যা। ব্যাংক রেট, রেপো রেট (যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ দেয় সাময়িকভাবে) সমানে বাড়িয়েই চলেছেন। ৯ শতাংশে উঠেছে রেপো রেট। ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার বেড়ে হয়েছে ১২-১৩ শতাংশ। উদ্দেশ্য ঋণকে ‘চড়া’ মূল্য করা। টাকাকে দামি করা। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হয়। নোট ছাপিয়ে দুস্থ ব্যাংকগুলোকে সাহায্য করা তিনি বন্ধ করেছেন। অনেক ব্যাংকে তাই ১ লাখ টাকার চেক দিয়েও টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।
মানুষের মধ্যে মাসের প্রথম সপ্তাহেই টাকার জন্য হাহাকার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার শুল্ক হারও কমিয়েছে। এদিকে দেখা যাচ্ছে, ভারতের পেঁয়াজের ওপরও শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। ভারত অনেক ভোগ্যপণ্যের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছে। এ ধরনের আরও অনেক পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি। বস্তুত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বেশ সক্রিয়। কিন্তু ফলাফল কী? বাজারে তো এসবের কোনো ‘আসর’ পড়ছে বলে মনে হচ্ছে না। উল্টো বরং ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁদের ‘সুদ-খরচ’ অনেক বেড়ে গেছে। এটা তাঁদের জন্য বোঝা। পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বেতনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি ভঙ্গ করে ২ হাজার কোটি টাকার নোট ছাপিয়ে মালিকদের দিয়েছে। বাজারে ‘ব্যবসা’র অভাব। ব্যাংকে ব্যাংকে নতুন আমানত আসছে কম। টাকা সবাই ধরে রাখছে। সুখবরের মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে আমাদের রেমিট্যান্স সেপ্টেম্বর মাসে বেশ বেড়েছে। এটা একটা স্বস্তির খবর।
এখন নতুন সরকার, নতুন উদ্দীপনা। বলা হচ্ছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সরকার। বিপ্লবী সরকারও কেউ কেউ বলছেন। মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড আশাবাদ। ১৫ বছরের দুঃশাসন থেকে তারা মুক্তি পেয়েছে বলে মনে করে। তখন সিন্ডিকেট ছিল, চাঁদাবাজি ছিল, ছিল রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এখন তো আর সিন্ডিকেট নেই। সিন্ডিকেটের লোকজন হয় দেশত্যাগী, না হয় কারাগারে। কেউ বলে চাঁদাবাজি আছে, কেউ বলে নেই। কেউ বলে এক গ্রুপের বদলে অন্য গ্রুপ চাঁদাবাজি করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সম্যক উন্নতি এখনো হয়নি। তবু দৃশ্যত চাঁদাবাজি আগের তুলনায় কম। টিসিবিও নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্য ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করে যাচ্ছে। কিন্তু তবু মূল্যস্ফীতিতে কোনো স্বস্তি নেই।
ঠিক আছে পণ্যমূল্য বাড়ুক। তবে পাশাপাশি বাড়া দরকার মজুরি। মজুরি বৃদ্ধির খবর কী? মুশকিল হচ্ছে, সরকার মূল্যস্ফীতির খবর দেয় কিন্তু মজুরি হ্রাস-বৃদ্ধির কোনো খবর দেয় না। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, মজুরির বাজার মন্দা। রিকশাওয়ালার আয় কমেছে, শ্রমজীবীর আয় কমেছে, চারদিকে লোকের চাকরি যাচ্ছে। চাকরিচ্যুত লোক আত্মহত্যা করছে বলেও খবর আছে। বহু কলকারখানা পুড়ে ছাই হয়েছে। যেগুলোতে কাজ করত হাজার হাজার শ্রমজীবী।
আশুলিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পোশাককর্মীরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছে। গুলিতে একজন শ্রমিকের মৃত্যুও হয়েছে। এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ভালো নয়। এখন দেখা যাচ্ছে, শিল্প উৎপাদন স্থবির, আমদানিতেও স্থবিরতা। রপ্তানি বাজারে আশাপ্রদ কোনো খবর নেই। ঋণের অভাব বাজারে। ডলারের বাজার এখনো চড়া। চাইলেই ডলার পাওয়া যায় না। সরকার তার বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না। বিদেশিরা অনেক টাকা পাবে। তার জন্য তাগিদ দিচ্ছে। উপদেষ্টারা দাতাদের কাছে আবদার করছেন নতুন ঋণের জন্য।
অনেকের ধারণা, প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্যে আট-দশ বিলিয়ন ডলার ঋণ আমরা বিদেশ থেকে পেতে পারি। কিন্তু টাকাটা ঋণ। সাহায্য নয়, অনুদান নয়, বিনিয়োগ নয়। ঋণ তো আমাদের অনেক হয়েছে। এর সুদসহ দিতে গিয়েই যথেষ্ট ত্রাহি অবস্থা। তার ওপর আবার আট-দশ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ। এর অর্থ কী? বোঝা কি বাড়বে না কমবে? এতে কি ভালো হবে, না মন্দ হবে? নানা চিন্তা। শোনা যাচ্ছে, সরকার রাজস্ব বৃদ্ধি করতে পারছে না। বেতনের টাকা কি সরকার ঋণ করে দিচ্ছে। এটা হলে খারাপ খবর। সামনে মরা কার্তিক। এর মধ্যে বড় বন্যা হয়ে গেছে। বহু ক্ষয়ক্ষতি। কার্তিক মাসের জন্য আমাদের খাদ্যপ্রস্তুতি আছে তো? সরকারের গুদামে অনেক সময় চাল-গম থাকে অঙ্কের হিসাবে। এটা কাজির হিসাবের মতো। সাবধান এখনই হওয়া দরকার। স্টকের কী অবস্থা, তা খতিয়ে দেখা দরকার। মূল্যস্ফীতি রোধ হোক এক নম্বর কাজ। সঙ্গে চলুক সংস্কার—বাধা নেই।
লেখক: ড. আর এম দেবনাথ
সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে