৪ কোটি টাকার সোনা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৪, ০৭: ১০

লোকটার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়নি। যা হয়েছে, তা হলো লোভ। তাই ১৬টা পোশাক পরে চলে এসেছেন ঢাকায়। সেই পোশাকের পরতে পরতে সোনার গুঁড়ো। মোহাম্মদ শহীদ মিয়া  ৪ কোটির বেশি টাকার সোনা শরীরে জড়িয়ে শারজা থেকে উড়ে এসেছিলেন ঢাকায়।

হয়রত শাহজালাল বিমানবন্দরে কত ধরনের অপরাধই না সংঘটিত হয়। সোনা চোরাচালান তারই একটি। কিন্তু সব অপরাধী ধরা পড়ে কি না, তা আমাদের জানা নেই। অবৈধ অনেক কিছুই যাত্রীরা নিয়ে আসে, কিন্তু সব সময় তা হয়তো ধরা পড়ে না। আগাম সংবাদ থাকলে সেই সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দারা তৎপর হয়ে ওঠেন। আর যদি গোপন সংবাদ না থাকে? তাহলে কী ঘটে, সেটা আমাদের মতো আমজনতার জানার কথা নয়।

মোহাম্মদ শহীদ মিয়া ধরা পড়েছেন বলে খবর হয়েছেন। ধরা না পড়লে এই ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার বিশাল চোরাচালান ‘জায়েজ’ হয়ে যেত। শহীদ মিয়া কার হয়ে কাজ করছিলেন, এর আগেও একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন কি না, এসব নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে কৌতূহল হয়: কার বুদ্ধিতে তিনি ১৬টা পোশাক পরে প্লেন ভ্রমণ করলেন? এ রকম পোশাকের ঘনঘটাই তো তাঁকে শনাক্ত করার জন্য যথেষ্ট! টাকার লোভটা কি এতই বড় ছিল যে তিনি এ বিষয়গুলোকে পাত্তাই দেননি!

সোনার চোরাচালান শুধু আন্তর্জাতিক রুটেই হয় না, তারও প্রমাণ পাওয়া গেছে মার্চ মাসে। একটি বেসরকারি বিমান সংস্থার গাড়িচালক ৪০টি সোনার বারসহ ধরা পড়েছিলেন সে সময়। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের আগমনী গেট দিয়ে বের হন তিনি। তারপর সোনার বারগুলো হস্তান্তর করেন অন্য আরেকজনকে। একটি সিএনজিতে করে তাঁরা বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় এপিবিএনের সদস্যদের হাতে ধরা পড়েন। যাঁর কাছে গাড়ির চালক এই ৪০ সোনার বার হস্তান্তর করেছিলেন, তিনি স্বীকার করেছিলেন, এই চালান জায়গামতো পৌঁছে দিলে তিনি ১০ হাজার টাকা পেতেন। মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য এত বড় ঝুঁকি নিলেন তিনি!

সোনা কিংবা মাদক চোরাচালান কিন্তু আমাদের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য কোনো নতুন খবর নয়। মাঝে মাঝেই পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিমানবন্দরে যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে, তাদের সততা ও বিচক্ষণতা এই চোরাচালান ঠেকাতে পারে। না জানার কোনো কারণ নেই, সোনা বা মাদক চোরাকারবারিরা অনেক শক্তিশালী হয়। তারা সব সময়ই লোভের জাল ছড়িয়ে রাখে। মোটা টাকার লোভ সামলানো কঠিন কাজ। তাই কোনো কোনো সংস্থার সদস্যরা এই প্রলোভনে যদি পড়েন, তাহলে সবকিছুই ‘ম্যানেজ’ করে নেওয়া সহজ ব্যাপার। তখন কিন্তু সোনা বা মাদক চোরাচালান ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে।

আমরা চাইব, আমাদের বিমানবন্দরে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা তাঁদের পেশার মর্যাদা রক্ষা করবেন। প্রলোভনে পড়ে সততা বিকিয়ে দেবেন না। আমাদের এই চাওয়া খুব বড় কিছু নয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত