ধান বোনে বৃষ্টির আশায়

মেহেরাজ হোসেন সুজন, নানিয়ারচর (রাঙামাটি) 
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২২, ১৪: ৫৬

পাহাড়ের অধিকাংশ ধানের জমিতে পানি সেচের জন্য নদীর পানি বেশ দূরে হওয়ায়, ঝরনা বা ছড়ার পানির ওপর নির্ভর করতে হয় এখানকার কৃষকদের। আবার কিছু কিছু জমিতে নদী ও ছড়া বহু দূরে হওয়ায় বিকল্পভাবে কোনো পানি সেচের ব্যবস্থা যাদের থাকে না, তাঁদের ভরসা একমাত্র বৃষ্টির পানি।

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের লাঙ্গলপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ২০ একর (৫০ কানি) জমিতে ধানের চাষ হচ্ছে, কিন্তু সেখানে কোনো ধরনের সেচের ব্যবস্থা নেই। এখানকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টির পানিই তাঁদের ধান চাষের একমাত্র ভরসা। তাই অন্য মৌসুমে ধানের চাষ না করে কেবল বর্ষা মৌসুমে ধানচাষ করা হয়। সেচের ব্যবস্থা করা গেলে এই জমিগুলোতে সারা বছরই ধানচাষ করা সম্ভব।

ধানচাষি অমর জীবন চাকমা বলেন, জমিতে এবার বাসন্তী ধান রোপণ করেছেন তিনি; কিন্তু পানি সেচের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই বৃষ্টির আশায় থাকতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ পানির ব্যবস্থা করে দিলে তাঁরা খুব উপকৃত হতেন, একই সঙ্গে ধান চাষের পরিমাণও বাড়ত।

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়িতে প্রায় ২০ একর জমিতে ধান চাষ হচ্ছে, কিন্তু সেখানে কোনো ধরনের সেচের ব্যবস্থা নেই। এসব এলাকায় কেবল বর্ষা মৌসুমে ধান চাষ হয়। আবার অনেকগুলো এলাকায় সেচের ব্যবস্থা না থাকায় বহু জমি পরিত্যক্ত রয়েছে। এসব জায়গায় পানির ব্যবস্থা করতে পারলে কৃষকেরা উপকৃত এবং ধান চাষে আগ্রহী হবেন। 

চাষি মিনতী চাকমা বলেন, বৃষ্টি এলে ধান লাগাতে পারেন, না হয় পারেন না। পানির সমস্যায় অন্য মৌসুমে কোনো কিছু চাষ করা সম্ভব হয় না। বৃষ্টি না হলে তাঁদের মাথায় হাত। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন; বৃষ্টি কখন হবে। দিনভর পরিশ্রম করে ধান লাগিয়ে ভালো ফসল না হলে খুবই কষ্ট হয়।

কৃষক বিমল কান্তি চাকমা বলেন, তাঁরা এই পাড়ায় প্রায় ৩০ জন কৃষক ৫০ কানি জমিতে ধানচাষ করছেন। বর্তমানে খেতের আগাছা পরিষ্কারের কাজ চলছে। সেচের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা ধানচাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। সেচের জন্য সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তাঁরা উপকৃত হবেন।

উপজেলার সহ-কৃষি কর্মকর্তা মো. ইসহাক উদ্দিন বলেন, উপজেলার লাঙ্গলপাড়া ও জুরাইছড়ির কিছু জমিতে সেচের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই জেলা পরিষদের কাছে পানির ব্যবস্থার জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে। এসব জমিতে কেবল বর্ষা মৌসুমে ধানচাষ হয়, বাকি সময় খালি পড়ে থাকে। সব মৌসুমে চাষের ব্যবস্থা করা গেলে চাষিরা উপকৃত হবেন, অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, উপজেলার লাঙ্গলপাড়া থেকে শুরু করে জুরাইছড়ি; অনেকগুলো এলাকায় কেবল বর্ষা মৌসুমে ধানচাষ হয়। আবার অনেকগুলো এলাকায় সেচের ব্যবস্থা না থাকায় বহু জমি পরিত্যক্ত রয়েছে। এসব জায়গায় পানির ব্যবস্থা করতে পারলে সবাই উপকৃত হবেন। এতে ধানচাষে কৃষকেরা উপকৃত এবং আগ্রহী হবেন। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বরাদ্দ নেই, তাই এসব জায়গায় সেচের ব্যবস্থা করতে জেলা পরিষদ বা উন্নয়ন বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত