Ajker Patrika

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: সুষ্ঠু ভোটের চাপ বাড়ছে

সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা
জাতীয় সংসদ নির্বাচন:  সুষ্ঠু ভোটের চাপ বাড়ছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করছে। একই কারণে এই নীতি সমন্বিত উপায়ে অনুসরণের জন্য দেশটি তার কৌশলগত মিত্রদেরও বলছে। ঢাকায় কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের তথ্য অনুযায়ী, দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মতোই এখানকার নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি ও সরকারের নানা পদক্ষেপের ওপর নজর রাখছে।

নির্বাচন সামনে রেখে বিদেশেও প্রকাশ্যে কিংবা আড়ালে নানামুখী তৎপরতা চলছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরোধী দল দ্য গ্রিনস-এর ১৫ জন আইনপ্রণেতা দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজকে বুধবার এক চিঠিতে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তারা যাতে অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে না পারে, সে জন্য নিষেধাজ্ঞা দিতে। ১৫ সিনেটর ও এমপির মধ্যে ৫ জনকে ই-মেইলে বুধবার রাতে জানতে চাওয়া হয়, চিঠিটি সঠিক কি না। জবাবে ম্যাক্স সেন্ডলার-ম্যাথার এমপির দপ্তর গতকাল বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকাকে জানায়, চিঠিটি সঠিক।

অ্যান্টনি আলবানিজকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়া, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমে মতপ্রকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি এবং ভোটে কারচুপির আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার কথাও তাঁরা উল্লেখ করেন। চিঠিতে প্রয়োজনে ম্যাগনিৎসকি নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নিতেও বলেন তাঁরা।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে অস্ট্রেলিয়ার আইনপ্রণেতারা বলেন, ওই দুটি নির্বাচনে যেমন ভোট হয়েছে, তার পরিবর্তে আগামী নির্বাচন যাতে আন্তর্জাতিক বিধিবিধান ও মানদণ্ড মেনে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ায় এমন উদ্যোগের নানামুখী প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের মিত্ররা ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপরও জোর দিচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে থাকা বড় বিরোধী দল বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার পথে জটিলতা আছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চায় শেখ হাসিনার অধীনে ভোট। এমন অবস্থায় আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যে নির্বাচন হওয়ার কথা, তা শেখ হাসিনার অধীনেই হবে, নাকি সংবিধানের আওতায় অন্তর্বর্তী কোনো ব্যবস্থা করা যাবে, সে বিষয়েই দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পর্যায়ে কথা চালাচালি হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এই নীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ শুরু হয়। দুটি ঘটনাই দেশটি ঘটিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেখানে অবস্থানকালে। এতে ভিসা নিষেধাজ্ঞার কঠোর প্রয়োগ এবং প্রয়োজনে অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে মার্কিন সরকারের দৃঢ় মনোভাব স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের চাপ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে বাইরে থেকে যে চাপ আছে, তা কতটা সেসব দেশের স্বার্থে আর কতটা এখানকার মানুষের স্বার্থে, তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে পরিস্থিতির উন্নতির তেমন সম্ভাবনা নেই। আর সরকার নিজের মতো করে ভোট পার করে যদি বিদেশিদের কথা শুনতে যায়, তাহলেও নতুন সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে।

প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরকালে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ও পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়াসহ অন্য কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী গত ২৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শনকালে সুলিভানের সঙ্গে বৈঠকটি হয়। বাংলাদেশ সরকার আজরা জেয়াসহ অন্য কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ ও দূতাবাস পরিদর্শনের বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিলেও দুই সরকারই সুলিভানের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের কথা গোপন রাখে। কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সুলিভানের বৈঠকটি হয়েছে মার্কিনদের আগ্রহে। আর বৈঠকের খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয় বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুটি ঘটনারই তাৎপর্য আছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের রাজনীতিক ও কূটনীতিকেরা। 
হোয়াইট হাউসে ৩ অক্টোবর এক ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্ট্র্যাটেজিক যোগাযোগ সমন্বয়কারী জন কিরবি জানান, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে শেখ হাসিনার আলাপে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে।

শেখ হাসিনার সঙ্গে এক ঘণ্টার আলাপের বিষয়টি গোপন রাখার সঙ্গে জ্যাক সুলিভানের অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে জোর দেওয়ার পাশাপাশি অন্য কোনো বার্তা দেওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করেন কূটনীতি-বিশ্লেষকেরা।

সুলিভানের বৈঠক প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকগুলোর পাশাপাশি ওয়াশিংটন ও লন্ডনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত আছে।

সুলিভানের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজের দেওয়া একটি বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন গতকাল। কাদের মনে করেন, তলে তলে অনেক কিছু হচ্ছে বলে মঙ্গলবার যে মন্তব্য তিনি করেছেন, তাতে ভুল কিছু ছিল না। গতকাল সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়টা এক সপ্তাহ পর্যন্ত কেউ জানে না। তাহলে তলে তলে অনেক কিছু হচ্ছে বলে আমি যেটি বলেছি, সেটি তো ভুল বলিনি।’

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবির বিষয়ে বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে একটি নির্বাচিত সরকার (ক্ষমতায়) আসবে।’ বাসসের আরেকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশবিষয়ক সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি দলের সঙ্গে লন্ডনে এক বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনোভাবেই অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা দখল করতে পারবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত