ড. এম আবদুল আলীম
কৃষ্ণাঙ্গদের ভাষার লড়াই পৃথিবীর ইতিহাসে তাদের নিজস্ব আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার শক্তি জুগিয়েছিল। এখানেই আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে তাদের ভাষার লড়াইয়ের মিল পাওয়া যায়। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই ভাষা, মাতৃভাষা, রাষ্ট্রভাষা, বিলুপ্ত ভাষা—এমন সব প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে আলোচনায় আসে। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ; বিশেষ করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে বাংলার দামাল সন্তানেরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, সে প্রসঙ্গটি। হ্যাঁ, পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য জীবনদানের ঘটনা এবং তার মাধ্যমে একটি জাতির আত্মপরিচয়ের ঠিকানা অন্বেষণ, সর্বোপরি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মদান, ব্যতিক্রমী ঘটনাই বৈকি। সত্যিই ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, অহিউল্লাহ, আউয়ালসহ নাম না-জানা অনেক শহীদের আত্মত্যাগের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরলই বটে। বাঙালির এই আত্মত্যাগের ঘটনা এখন বিশ্বব্যাপী গৌরবের আসন লাভ করেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ করায় সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে একুশের সেই রক্তরাঙা ইতিহাস। এখন কেবল বাংলা ভাষার মর্যাদা কিংবা সর্বাত্মক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নয়, পৃথিবীর সব ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও বিলুপ্তপ্রায় ভাষার পঠন-পাঠন গবেষণা এবং অস্তিত্ব রক্ষায়ও একুশের চেতনা কাজ করবে সঞ্জীবনী সুধার। এ কারণেই বর্তমানে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বাংলা ভাষা ছাড়াও অন্য ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রাম প্রসঙ্গে আলোচনাও অনিবার্যভাবেই সামনে চলে আসে। এতে একদিকে যেমন আসে আমাদের পাশের দেশের বরাকতীরের ভাষার লড়াইয়ের প্রসঙ্গ, তেমনি আসে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের ভাষার লড়াইয়ের কথাও। এখানে দক্ষিণ আফ্রিকার জুলু ভাষার মর্যাদা রক্ষায় কৃষ্ণাঙ্গদের সংগ্রাম, আত্মাহুতি দান এবং তাকে কেন্দ্র করে স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার গৌরবদীপ্ত অধ্যায়ের কথা তুলে ধরার প্রয়াস চালানো হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের স্কুলে তাদের মাতৃভাষা জুলুর পরিবর্তে আফ্রিকান্স ভাষা চালুর প্রতিবাদে ভাষার জন্য আন্দোলন করে সেখানকার স্কুলছাত্ররা। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের সাম্রাজ্যবাদী সরকার কৃষ্ণাঙ্গ আধিক্যপূর্ণ সোয়েটো অঞ্চলে এক ফরমান জারি করে, তাতে উল্লেখ করে আফ্রিকান্স ভাষাই হবে কৃষ্ণাঙ্গদের স্কুলের শিক্ষার মাধ্যম। এরপর ১৯৭৬ সালে সর্বস্তরে অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে সরকার স্ট্যান্ডার্ড ফাইভ পর্যন্ত ইংরেজি এবং আফ্রিকান্স ভাষাকে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গরা এটা মানতে অস্বীকার করে। কারণ, তারা এত দিন তাদের মাতৃভাষা জুলু এবং ব্যবহারিক লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ইংরেজিতে শিক্ষা গ্রহণ করত। মাতৃভাষা জুলুর পরিবর্তে শিক্ষার বাহন হিসেবে এভাবে ক্ষমতাসীন শ্বেতাঙ্গদের ব্যবহৃত জার্মান-ডাচ ভাষার মিশ্রণে গড়া আফ্রিকান্স ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করে। স্কুলের অনেক শিক্ষকও অফ্রিকান্স ভাষায় শিক্ষাদানে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত না করে ১৯৭৬ সালের ষাণ্মাসিক পরীক্ষায় কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রছাত্রীদের জন্য আফ্রিকান্স ভাষা বাধ্যতামূলক করলে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে আন্দোলন শুরু করে।
১৯৭৬ সালের ১৩ জুন ‘চেতনার জাগরণ’ নামে কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন এক প্রতিবাদসভার আয়োজন করে। ওই সভায় ১৯ বছর বয়সী সেইতসি মাসিনিনি ১৬ জুন আফ্রিকান্স ভাষা চালুর প্রতিবাদে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রছাত্রীকে সমবেত হয়ে গণবিক্ষোভ প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে সোয়েটো শহরে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা শহরের ভিলাকিজি স্ট্রিটের অরল্যান্ডো ওয়েস্ট সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মিছিল নিয়ে অরল্যান্ডো স্টেডিয়াম অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে ডগ স্কোয়াডে থাকা কুকুর লেলিয়ে দেয়, তারপর কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করে। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভকারীদের অগ্রযাত্রা থামাতে না পেরে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে ১৩ বছরের স্কুলছাত্র হেক্টর পিটারসনসহ ১৭৬ ছাত্রছাত্রী শহীদ হয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আফ্রিকার সর্বস্তরের নাগরিক রাস্তায় নেমে আসে। আন্দোলন সোয়েটো থেকে কেপটাউন, জোহানেসবার্গেও ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের গুলিতে প্রায় ৬০০ মানুষ শহীদ হয়। আহত হয় প্রায় ৪ হাজার, গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় ৬ হাজার বিক্ষোভকারীকে। একপর্যায়ে এই আন্দোলন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্বে আন্দোলন দাবানলের আকার ধারণ করে। ফলে সরকার শিক্ষার বাহন হিসেবে আফ্রিকান্স ভাষা চালুর সিদ্ধান্ত বাতিল করে। ভাষার জন্য আন্দোলনে এত রক্তক্ষয় ও প্রাণ বিসর্জনের ঘটনা ইতিহাসে বিরল।
ভাষার দাবি পূরণ হলেও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন বেগবান হয়। অবশেষে ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা স্বাধীনতা লাভ করে এবং অবসান ঘটে বর্ণবৈষম্যেরও। পরবর্তী সরকার ছাত্রদের ভাষার লড়াইয়ে আত্মাহুতি দানের দিনটিকে ‘জাতীয় যুব দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৬ সালের ১৬ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাবো মবেকি হেক্টর পিটারসন স্মারক ও স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন। জাদুঘরের প্রবেশদ্বারে লেখা রয়েছে, ‘স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে আত্মাহুতি দেওয়া সেই যুবকদের সম্মানার্থে’।
কৃষ্ণাঙ্গদের এই ভাষার লড়াই পৃথিবীর ইতিহাসে তাঁদের নিজস্ব আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার শক্তি জুগিয়েছিল। এখানেই আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে তাদের ভাষার লড়াইয়ের মিল পাওয়া যায়। দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিক বাস্তবতায় ঘটনা দুটি সংঘটিত হলেও তার মূলে ছিল শোষকের প্রতি শোষিতের ক্ষোভ ও ঘৃণার বিস্ফোরণ। উভয় সংগ্রামেই কিশোরদের, বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। তারা যে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করেছিল, তা ক্রমে দাবানলের রূপ ধারণ করে দুটি জাতিকে দুটি স্বাধীন আবাসভূমি দিয়েছে।
ড. এম আবদুল আলীম
সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
কৃষ্ণাঙ্গদের ভাষার লড়াই পৃথিবীর ইতিহাসে তাদের নিজস্ব আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার শক্তি জুগিয়েছিল। এখানেই আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে তাদের ভাষার লড়াইয়ের মিল পাওয়া যায়। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই ভাষা, মাতৃভাষা, রাষ্ট্রভাষা, বিলুপ্ত ভাষা—এমন সব প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে আলোচনায় আসে। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ; বিশেষ করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে বাংলার দামাল সন্তানেরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, সে প্রসঙ্গটি। হ্যাঁ, পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য জীবনদানের ঘটনা এবং তার মাধ্যমে একটি জাতির আত্মপরিচয়ের ঠিকানা অন্বেষণ, সর্বোপরি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মদান, ব্যতিক্রমী ঘটনাই বৈকি। সত্যিই ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, অহিউল্লাহ, আউয়ালসহ নাম না-জানা অনেক শহীদের আত্মত্যাগের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরলই বটে। বাঙালির এই আত্মত্যাগের ঘটনা এখন বিশ্বব্যাপী গৌরবের আসন লাভ করেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ করায় সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে একুশের সেই রক্তরাঙা ইতিহাস। এখন কেবল বাংলা ভাষার মর্যাদা কিংবা সর্বাত্মক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নয়, পৃথিবীর সব ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও বিলুপ্তপ্রায় ভাষার পঠন-পাঠন গবেষণা এবং অস্তিত্ব রক্ষায়ও একুশের চেতনা কাজ করবে সঞ্জীবনী সুধার। এ কারণেই বর্তমানে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বাংলা ভাষা ছাড়াও অন্য ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রাম প্রসঙ্গে আলোচনাও অনিবার্যভাবেই সামনে চলে আসে। এতে একদিকে যেমন আসে আমাদের পাশের দেশের বরাকতীরের ভাষার লড়াইয়ের প্রসঙ্গ, তেমনি আসে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের ভাষার লড়াইয়ের কথাও। এখানে দক্ষিণ আফ্রিকার জুলু ভাষার মর্যাদা রক্ষায় কৃষ্ণাঙ্গদের সংগ্রাম, আত্মাহুতি দান এবং তাকে কেন্দ্র করে স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার গৌরবদীপ্ত অধ্যায়ের কথা তুলে ধরার প্রয়াস চালানো হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের স্কুলে তাদের মাতৃভাষা জুলুর পরিবর্তে আফ্রিকান্স ভাষা চালুর প্রতিবাদে ভাষার জন্য আন্দোলন করে সেখানকার স্কুলছাত্ররা। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের সাম্রাজ্যবাদী সরকার কৃষ্ণাঙ্গ আধিক্যপূর্ণ সোয়েটো অঞ্চলে এক ফরমান জারি করে, তাতে উল্লেখ করে আফ্রিকান্স ভাষাই হবে কৃষ্ণাঙ্গদের স্কুলের শিক্ষার মাধ্যম। এরপর ১৯৭৬ সালে সর্বস্তরে অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে সরকার স্ট্যান্ডার্ড ফাইভ পর্যন্ত ইংরেজি এবং আফ্রিকান্স ভাষাকে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গরা এটা মানতে অস্বীকার করে। কারণ, তারা এত দিন তাদের মাতৃভাষা জুলু এবং ব্যবহারিক লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ইংরেজিতে শিক্ষা গ্রহণ করত। মাতৃভাষা জুলুর পরিবর্তে শিক্ষার বাহন হিসেবে এভাবে ক্ষমতাসীন শ্বেতাঙ্গদের ব্যবহৃত জার্মান-ডাচ ভাষার মিশ্রণে গড়া আফ্রিকান্স ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করে। স্কুলের অনেক শিক্ষকও অফ্রিকান্স ভাষায় শিক্ষাদানে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত না করে ১৯৭৬ সালের ষাণ্মাসিক পরীক্ষায় কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রছাত্রীদের জন্য আফ্রিকান্স ভাষা বাধ্যতামূলক করলে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে আন্দোলন শুরু করে।
১৯৭৬ সালের ১৩ জুন ‘চেতনার জাগরণ’ নামে কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন এক প্রতিবাদসভার আয়োজন করে। ওই সভায় ১৯ বছর বয়সী সেইতসি মাসিনিনি ১৬ জুন আফ্রিকান্স ভাষা চালুর প্রতিবাদে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রছাত্রীকে সমবেত হয়ে গণবিক্ষোভ প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে সোয়েটো শহরে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা শহরের ভিলাকিজি স্ট্রিটের অরল্যান্ডো ওয়েস্ট সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মিছিল নিয়ে অরল্যান্ডো স্টেডিয়াম অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে ডগ স্কোয়াডে থাকা কুকুর লেলিয়ে দেয়, তারপর কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করে। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভকারীদের অগ্রযাত্রা থামাতে না পেরে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে ১৩ বছরের স্কুলছাত্র হেক্টর পিটারসনসহ ১৭৬ ছাত্রছাত্রী শহীদ হয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আফ্রিকার সর্বস্তরের নাগরিক রাস্তায় নেমে আসে। আন্দোলন সোয়েটো থেকে কেপটাউন, জোহানেসবার্গেও ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের গুলিতে প্রায় ৬০০ মানুষ শহীদ হয়। আহত হয় প্রায় ৪ হাজার, গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় ৬ হাজার বিক্ষোভকারীকে। একপর্যায়ে এই আন্দোলন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্বে আন্দোলন দাবানলের আকার ধারণ করে। ফলে সরকার শিক্ষার বাহন হিসেবে আফ্রিকান্স ভাষা চালুর সিদ্ধান্ত বাতিল করে। ভাষার জন্য আন্দোলনে এত রক্তক্ষয় ও প্রাণ বিসর্জনের ঘটনা ইতিহাসে বিরল।
ভাষার দাবি পূরণ হলেও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন বেগবান হয়। অবশেষে ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা স্বাধীনতা লাভ করে এবং অবসান ঘটে বর্ণবৈষম্যেরও। পরবর্তী সরকার ছাত্রদের ভাষার লড়াইয়ে আত্মাহুতি দানের দিনটিকে ‘জাতীয় যুব দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৬ সালের ১৬ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাবো মবেকি হেক্টর পিটারসন স্মারক ও স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন। জাদুঘরের প্রবেশদ্বারে লেখা রয়েছে, ‘স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে আত্মাহুতি দেওয়া সেই যুবকদের সম্মানার্থে’।
কৃষ্ণাঙ্গদের এই ভাষার লড়াই পৃথিবীর ইতিহাসে তাঁদের নিজস্ব আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার শক্তি জুগিয়েছিল। এখানেই আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে তাদের ভাষার লড়াইয়ের মিল পাওয়া যায়। দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিক বাস্তবতায় ঘটনা দুটি সংঘটিত হলেও তার মূলে ছিল শোষকের প্রতি শোষিতের ক্ষোভ ও ঘৃণার বিস্ফোরণ। উভয় সংগ্রামেই কিশোরদের, বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। তারা যে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করেছিল, তা ক্রমে দাবানলের রূপ ধারণ করে দুটি জাতিকে দুটি স্বাধীন আবাসভূমি দিয়েছে।
ড. এম আবদুল আলীম
সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে