Ajker Patrika

চলছে শেষ মুহূর্তের কেনা

মেহেরাব্বিন সানভী, চুয়াডাঙ্গা
চলছে শেষ মুহূর্তের কেনা

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গায় ঈদবাজারে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দোকান ও বিপণিবিতানগুলো ক্রেতাসমাগমে মুখর হয়ে ওঠে। ইফতারের কিছুটা সময় ছাড়া একটানা ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। সদরসহ দামুড়হুদা, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলার হাট-বাজারগুলোতেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।

বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বাহারি আর নতুন ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে দোকানিরা ক্রেতাদের আকর্ষণ করছেন। উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের আকৃষ্ট করে এমন নাম নিয়ে এবারও বাজারে এসেছে আকর্ষণীয় ডিজাইনের সালোয়ার কামিজ, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট। গৃহিণীদের জন্য পিউর সুতি, সাউথ, কানজিবরম, কাতান, বেনারসি ও জামদানি শাড়িও রয়েছে।

রমজানের প্রথমদিকে দোকানে ক্রয়-বিক্রয় কম থাকলেও বর্তমানে অনেক বেশি। ক্রেতাদের ভিড় সামাল দিতে অনেক মার্কেটেই দোকানিদের হিমশিম খেতে দেখা গেছে। ঈদ মার্কেটে ক্রেতাদের মধ্যে সিংহভাগ নারী। নারীরা যাচাই-বাছাই করে তবেই তাঁদের পছন্দের জিনিসটি কিনছেন। কেউবা ভিড় এড়াতে আগে-ভাগেই পছন্দের কাপড় কিনে রাখছেন। পছন্দের পোশাকটি কিনতে ক্রেতারা হন্যে হয়ে ঘুরছেন এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে। তবে দোকানের বাহারি পোশাকের প্রতি মানুষের আকর্ষণ একটু কম। কারণ প্রচণ্ড গরমে এবারের ঈদে ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে সুতি পোশাক। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সব পণ্যের দাম বেশি বলে জানান ক্রেতারা। কোথাও একটু বেশি, কোথাও একটু কম। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, দাম বেশি হলেও বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। তবে এতে থেমে নেই ক্রেতারা, সমানতালে চলছে পছন্দের পোশাক কেনা।

চুয়াডাঙ্গার সমবায় নিউ মার্কেট, আব্দুল্লাহ সিটি, প্রিন্স প্লাজা, বিগ বাজার, পুরাতন গলিসহ আশপাশের মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। সমবায় নিউ মার্কেট ও প্রিন্স প্লাজায় ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতা আসছেন, থরে থরে সাজানো বাহারি সব ড্রেস দেখছেন, কিনছেন। এদিকে মার্কেটের পাশ দিয়ে যাওয়া কাস্টমারদের আকৃষ্ট করতে ভেসে আসছে বিক্রয় কর্মীদের হাঁকডাক। বাহারি ডিজাইনের পাশাপাশি দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় ক্রেতাদের উপস্থিতি লক্ষণীয়।

জানা গেছে, এবার ঈদুল ফিতরের মূল আকর্ষণ ‘কাঁচা বাদাম’ ও ‘পুষ্পা দ্য রাইজ’। সকাল থেকেই গরম আর রোদ উপেক্ষা করে মার্কেটমুখী ক্রেতাদের চাপ বাড়ছে। ঈদের কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের চাপে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দুপুরের পর থেকে প্রায় প্রতিটি মার্কেট ও বিপণিবিতান এলাকায় ক্রেতা বাড়তে থাকায় পা ফেলার স্থান নেই। ভারতের ভুবন বাদ্যকারের কাঁচা বাদাম খ্যাত গেঞ্জির মূল্যে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। এ ছাড়া লাল চন্দন গাছ নিয়ে বিখ্যাত তেলেগু সিনেমা পুষ্পা দ্য রাইজ নামের মিল রেখে এসেছে ছেলেদের টি-শার্ট ও প্যান্ট। ক্রেতারা এ নামের পোশাক খুঁজছেন। প্রতিটি পুষ্পা টি-শার্ট ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ও প্যান্ট ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গার বিএন বস্ত্রালয়, নন্দন, ফ্যাশন সু, শতরুপাসহ ঐতিহ্যবাহী বেশ কিছু দোকানে প্রতিবারের মতোই এবারেও বেশ ভিড় লক্ষ করা গেছে। এ সব দোকানে একদর হওয়ায় ক্রেতাদের উপস্থিতি ভালো। ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উভয়েই বেশ খুশি। ভালো মানের পণ্য পেয়ে যেমন ক্রেতা খুশি, ঠিক তেমনি আশানুরূপ ক্রেতা পেয়ে খুশি বিক্রেতারাও।

বিএন বস্ত্রালয় থেকে ঈদ বাজার করছিলেন সাহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখান থেকেই বেশি কেনাকাটা করি। একদর হলেও পণ্যের মান ভালো। এবার তো সব জায়গাতেই দাম বেশি। এখানে সবার জন্য পোশাক পাওয়া যায়, সুবিধাও হয়।’

অনেকেরই অভিযোগ, এবারে বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। বিভিন্ন ব্রান্ডের পণ্যেও কেনার উপায় নেই। মোহাম্মদ আলী নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘যেখানেই যাই দাম বেশি। প্রত্যেকের নিজেরটা আসল, বাকি দোকানে আর পাবেন না। ব্রান্ডের পণ্য কিনতে গেলেও দাম এমন যে শপটিতে ঢুকতেও মন চায় না।’ আবার কোনো কোনো ক্রেতার অভিযোগ, দাম বেশি চাই, না নিলে বাজে ব্যবহার করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানিয়েছেন, বিভিন্ন দোকানের মালিক এবং কর্মচারীদের ব্যবহার খারাপের কথা।

নিউ মার্কেটের নিউ নন্দনের স্বত্বাধিকারী ও নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সুমন পারভেজ খান বলেন, ‘ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই ক্রেতাদের চাপ বাড়ছে। এ বছর রোজার প্রথম দিকে বিক্রি ভালো না হলেও শেষের এ সময়টায় আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি, ঈদের আগে চাঁদ রাতে কেনাবেচা আরও ভালো হবে।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ জানান, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। অভিযানে জরিমানাও করা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন জানান, ঈদকে ঘিরে কেনাকাটা এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের টিম সব সময় টহল দিচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত