দূরের স্কুলে শিশুদের অনীহা

অনিক সিকদার, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ৫৮
Thumbnail image

গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় রাজবাড়ীর জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নতুন ঘুরঘুরিয়া নামক গ্রামের বেশির ভাগ শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব বেশি হওয়ায় শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না বলে জানিয়েছেন অভিভাবকেরা। এসব শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তাঁরা। গ্রামটিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামে দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। পরিবারগুলোতে ৫-১০ বছর বয়সী শতাধিক শিশু রয়েছে।

এলাকাটির পশ্চিমে তিন কিলোমিটার দূরে বন্যাতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পূর্ব দিকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে ধর্মতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত।

প্রায় তিন কিলোমিটার দুরে বকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সাড়ে তিন কিলোমিটার দুরে সাধুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। গ্রামটি থেকে বিদ্যালয়গুলোর দূরত্ব বেশি হওয়ায় অনেক শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামে ‘নতুন ঘুরঘুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়টি সরকারি না হওয়ায় পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২০১৩ সালে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হওয়ার সময় এলাকার কিছু তরুণ সরকারীকরণের আশায় বিদ্যালয়টি আবার চালু করেন। কিন্তু তৃতীয় ধাপেও বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ না হওয়ায় পুনরায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়টি। বর্তমানে সেখানে জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘর থাকলেও কোনো কার্যক্রম চলে না।

প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় নিরক্ষরতা ও শিশুশ্রম বাড়ছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি, নতুন ঘুরঘুরিয়া এলাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হোক।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবর আলী বলেন, তাঁর বিদ্যালয় থেকে নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামটির দূরত্ব দুই কিলোমিটারের বেশি। গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় অভিভাবকেরা খুবই সমস্যায় রয়েছেন। ওই গ্রামের বাচ্চাদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুবই প্রয়োজন।

ধর্মতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুপচাঁদ বলেন, তাঁর বিদ্যালয় থেকে নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামটি দুই কিলোমিটার। গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পাওয়া খুবই কষ্টকর। ওই গ্রামের বাচ্চাদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় দরকার।

বন্ধ হয়ে যাওয়া নতুন ঘুরঘুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ভুপেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামে ৫-১০ বছর বয়সী শতাধিক শিশু রয়েছে। তাদের অনেকেই নিকটবর্তী স্কুল না থাকায় লেখাপড়া করে না। গ্রামটিতে সরকারি উদ্যোগে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হতো।

ওই গ্রামের বাসিন্দা চিরঞ্জিত সরকার বলেন, গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় তাঁদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের ২-৩ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে পাঠাতে সাহস পান না। সরকারিভাবে গ্রামটিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল হক বলেন, যেসব গ্রামে দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেখানে ‘বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় এক হাজার নতুন বিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয় করা যেতে পারে। সরেজমিন পরিদর্শন করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিটি খাতের উন্নয়নে অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে। বিদ্যালয় দূরে হওয়ায় কোমলমতি শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে; এটা দুঃখজনক। গ্রামটি পরিদর্শন করে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা পাওয়া গেলে অবশ্যই শিক্ষা কমিটিতে রেজুলেশনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত