ত্রিধারার বাম শিবিরে নির্বাচন নিয়ে দ্বিমত

সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ১৮
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ২৪

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মত-দ্বিমত থাকলেও নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে দল ও জোটগুলো। ভোটের আগ দিয়ে জোটের হিসাবনিকাশে পরিবর্তনও আসতে পারে। হতে পারে পাশবদল।

দেশের রাজনীতিতে বামপন্থী দলগুলো মূলত তিন ধারায় বিভক্ত। এক পক্ষ আছে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে। আরেক পক্ষ বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয়। তৃতীয় পক্ষটি বুর্জোয়া দলের নেতৃত্বে যেকোনো জোটে যাওয়ার পক্ষপাতী নয়। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বাম দলগুলোর অবস্থান কার্যত দুই রকম। ১৪ দলে থাকা বাম দলগুলো দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে থাকলেও অধিকাংশ বামপন্থী দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক বা তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার। ওই দলগুলো বলছে, আন্দোলনের সফলতাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। আন্দোলনে সফল হলে পরবর্তী সময়ে নির্বাচন নিয়ে ভাববে তারা।

দেশে প্রায় ৩৫টি বামপন্থী রাজনৈতিক দল সক্রিয় থাকলেও নিবন্ধন আছে ১১টির। নিবন্ধিত দলগুলো তিনটি আলাদা জোটে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), গণতন্ত্রী পার্টি, গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক।

অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)।
বড় দুই জোটের বাইরে থেকে সমমনা অন্যান্য দলকে নিয়ে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে চায় বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত দলগুলো। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং আরও চারটি নিবন্ধনহীন বাম দল নিয়ে গড়ে ওঠা এই জোট তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে আন্দোলন করছে। 
এ ছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা এবং বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যভুক্ত নিবন্ধনহীন ১১টি দলও সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্যই ‘তদারকি’ সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রয়োজন বলে মনে করেন সিপিবি ও বাসদের নেতারা। তাঁরা বলছেন, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। 

বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি। এর মাত্রা আরও বাড়বে। তদারকি সরকারের দাবি আদায় হলে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে যাব।’

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বাম দলগুলো নির্বাচনী প্রস্তুতির চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন সংগঠিত করার বিষয়েই অধিক মনোযোগী। গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য আন্দোলন সফল করা। আন্দোলন ফলপ্রসূ না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।’

অন্যদিকে ১৪ দলীয় জোটে থাকা বামপন্থী দলগুলো দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এবার দলগুলো নিজস্ব দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে লড়তে চায়। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এখনো পরিকল্পনা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার। তবে এবার আমরা আমাদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করব।’ জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে আমরা আগামী নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনেই অংশ নেব। এখানে আপসের কোনো জায়গা নেই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত