জারি করা হলো ১৪৪ ধারা

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ১৩
Thumbnail image

৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান সফরের পর উজিরে আজম বা প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি পল্টন ময়দানের বক্তৃতায় রাষ্ট্রভাষা নিয়ে নিজের কোনো মতামত প্রকাশ করেননি। কায়েদে আজম যে মত প্রকাশ করেছিলেন, সেটাই তিনি শুধু বলেছেন। রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে পাকিস্তান গণপরিষদই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

৪ ফেব্রুয়ারি ছিল ধর্মঘটের দিন। পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা এবং আরবি অক্ষরে বাংলা ভাষা প্রচলন করার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহরের সব স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীরা এ দিন ধর্মঘট করে। বেলা ১১টা থেকে শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা শোভাযাত্রা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমায়েত হতে থাকে।

বেলা দ্বিপ্রহরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রছাত্রীদের সভার পর বিরাট এক শোভাযাত্রা বের হয়। সেই শোভাযাত্রাটি প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি থেকে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে নবাবপুর রোড, পাটুয়াটুলী, আরমানিটোলা, নাজিমুদ্দিন রোড অতিক্রম করার সময় স্লোগানে স্লোগানে চারদিক প্রকম্পিত হতে থাকে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এবং ‘আরবি হরফে বাংলা লেখা চলবে না’—এই দুই স্লোগান ছিল উল্লেখ করার মতো।

৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের কার্যকরী সংসদের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন পল্টন ময়দানের জনসভায় রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে যে উক্তি করেছিলেন, তার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। তারা ১০ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস পালনের নির্দেশ দেয় এবং কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের জন্য অর্থ সাহায্যের আবেদন জানায়।

পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অলি আহাদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে যে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন চলছে, তার নেতৃবৃন্দ ও উৎসাহ দানকারীদের বিরুদ্ধে ৬ ফেব্রুয়ারি ডন পত্রিকায় সম্পাদকীয়তে বর্বর আক্রমণ করা হয়েছে। আমরা সম্মিলিত কণ্ঠে তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

জননিরাপত্তা আইনে দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারের প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। পত্রিকাটির মালিক হামিদুল হক চৌধুরী ও সম্পাদক আব্দুস সালামকে গ্রেপ্তার করার পরে জামিনে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। ‘ছদ্ম ফ্যাসিজম’ নামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি রাষ্ট্রভাষা উদ্‌যাপনের জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখটিকে বেছে নিয়েছিল। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক আইন পরিষদের বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার দিন ধার্য করা হয়েছিল।

এ অবস্থায় ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা শহরে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। যার অর্থ দাঁড়ায়, ঢাকায় জনসভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির দৈনিক আজাদ পত্রিকার একটি প্রতিবেদন: ‘ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারী/একমাসের জন্য সভা, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ।’ প্রতিবেদনটি এ রকম:

‘ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গতকল্য (বুধবার) ১৪৪ ধারার আদেশ জারী করিয়া এক মাসের জন্য ঢাকা শহরে সভা, শোভাযাত্রা প্রভৃতি নিষিদ্ধ করিয়াছেন। আদেশ জারীর কারণস্বরূপ তিনি বলেন যে, একদল লোক শহরে সভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের প্রয়াস পাওয়ায় এবং তদ্দ্বারা জনসাধারণের শান্তি ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকায় এই ব্যবস্থা অবলম্বিত হইয়াছে। কোতোয়ালী, সূত্রাপুর, লালবাগ, রমনা ও তেজগাঁও থানার অন্তর্গত সমুদয় এলাকায় ইহা প্রবর্তিত হইয়াছে।’

এ রকম একটি নির্দেশের ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে আলোচনা জরুরি হয়ে পড়েছিল। ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির বৈঠক বসল আওয়ামী লীগ অফিসে। এই বৈঠকটি খুবই গুরুত্ব বহন করে।

এখানে বলে রাখা দরকার, সাধারণ ছাত্রমহল ততক্ষণে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ কী সিদ্ধান্ত নেবে, তাতে তারা প্রভাবিত হতো বলেও মনে হয় না। কিন্তু সবারই আগ্রহ ছিল এখানে কী সিদ্ধান্ত হয়, তা জানার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত