শীত এলেই লালি তৈরির ধুম

মো. শফিকুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
Thumbnail image

‘লালি’ নামটি অনেকেরই এখনো অজানা। এটি মিষ্টি জাতীয় মুখরোচক এক তরল জাতীয় খাবারের নাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুরসহ আরও কয়েকটি গ্রামে যুগের পর যুগ আখের গুড় থেকে তৈরি হচ্ছে লালি। এ লালি দিয়ে গ্রাম ও শহরের লোকজন গরম গরম রুটি, পিঠা, পরোটা অথবা মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে খায়।

বিজয়নগর উপজেলা কৃষিনির্ভর এলাকা। এই উপজেলার মাটি বেশ উর্বর। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানান, চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হচ্ছে। আর এই ২৫ হেক্টর জমির আখ লালি তৈরির কাজে লাগানো হলে এ বছর অন্তত ১০০ টন গুড়ের এই লালি তৈরি হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে লালি তৈরির কর্মযজ্ঞ। প্রথমেই চলে আখমাড়াই। মহিষের চোখ ঢেকে ঘানি টানানোর মাধ্যমে আখমাড়াই করে রস সংগ্রহ করা হয়।

এরপর রস জমিয়ে ছাঁকনি নিয়ে ছেঁকে রাখা হয় বড় কড়াইয়ে। পরে দুই থেকে তিন ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয় আখের রস। এরপর সেই রস লাল রং ধারণ করলে নামানো হয় কড়াই থেকে। এভাবেই তৈরি হয় মুখরোচক লালি বা তরল গুড়।

তবে প্রতিবছরই লালি তৈরিতে খরচ বাড়ছে কৃষকদের। এবারের মৌসুমে আখ কাটা এবং মাড়াইয়ের কাজে একজন শ্রমিককে দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে, যা গেল বছর ছিল ৪০০ টাকা। এ ছাড়া ঘানি টানানোর জন্য আগে যে মহিষ ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় কেনা গেছে, তা এবার ৩০-৪০ হাজার টাকা বেশি দামে কিনতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন লালি উৎপাদনকারীরা। বাণিজ্যিকভাবে এবার অন্তত ১০০ টন লালি তৈরি হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ, যার বাজার মূল্য হবে ১ কোটি টাকার বেশি।

উৎপাদনকারীরা জানান, বছরের নভেম্বরের মধ্য থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে লালি তৈরি ও কেনাবেচা। প্রতি কেজি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়।

লালি উৎপাদনকারী রুক্কু মিয়া বলেন, ‘শীতের লালির চাহিদা খুবই বেশি। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে আমাদের বিজয়নগরের লালি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে এখন লালি তৈরি হচ্ছে বিজয়নগরে। এবার অন্তত ১০০ টন লালি উৎপাদিত হবে। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আখ চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত