‘ফেলানীর চিৎকার শুনতে পাই’

ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ০২
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৫২

‘চোখের সামনে আমাদের মেয়েকে তারা পাখির মতো গুলি করে মেরেছে। এখনো ঘুমের মধ্যে তার চিৎকার শুনতে পাই। গভীর রাতে আচমকা ঘুম ভাঙে। দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে। হতভাগা আমরা মেয়ে হত্যার কাঙ্ক্ষিত বিচার ১১ বছরেও পেলাম না।’ কথাগুলো বলছিলেন সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানীর মা জাহানারা বেগম।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত হন ফেলানী খাতুন। তাঁর মৃতদেহ কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল সাড়ে চার ঘণ্টা। এ নিয়ে সংবাদ প্রচার করে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম। প্রতিবাদ করে বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ভারত সরকারকে। হত্যার এত বছর পার হলেও ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার ফেলানীর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামে ফেলানীর বাড়িতে তাঁর কবর জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ হয়। এত যোগ দেয় ঢাকাস্থ নাগরিক পরিষদ।

গত কয়েক বছর ফেলানীর মৃত্যু দিবসে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করলেও এবার প্রথম ফেলানীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামে তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে ঢাকাস্থ নাগরিক পরিষদ। এ সময় নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালনের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘ফেলানী হত্যাকারী বিএসএফের সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি, ফেলানীর পরিবারসহ সীমান্ত আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পার্ক রোডের নাম ফেলানী সরণি রাখতে হবে।’

জানা গেছে, কাজের সন্ধানে অবৈধ পথে মেয়ে ফেলানীকে নিয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন তাঁর মা জাহানারা বেগম ও বাবা নূরুল ইসলাম নূরু। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর কিশোরী মেয়েকে নিজ দেশে বিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। ঘটনার দিন ভোরে ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি দালালের মাধ্যমে মই দিয়ে কাঁটাতার টপকে দেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন বাবা ও মেয়ে। এ সময় বাবা নূরুল ইসলাম কাঁটাতার পার হতে পারলেও মেয়ে ফেলানী কাঁটাতারে উঠতেই বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ গুলি চালায়। এরপর কাঁটাতারেই ঢলে পড়ে ফেলানীর নিথর দেহ। সেখানে সাড়ে চার ঘণ্টা তাঁকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ঘটনার ৩০ ঘণ্টা পর বিজিবির কাছে লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৩ ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে ভারতের আদালত আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন। এরপর কয়েক বছর ধরে শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপ্রধান সালমা আলী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণসহ স্বচ্ছ বিচার না পাওয়ায় ওই মামলার একজন বাদী হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করছি আমরা কাঙ্ক্ষিত বিচার পাব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত