হারাবে না নারিকেলি চেলা ও তিত পুঁটি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২২, ০৭: ৪৫
আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১৪: ৩২

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা দেশে প্রথমবারের মতো মিঠাপানির বিপন্ন প্রজাতির নারিকেলি চেলা ও তিত পুঁটি মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন।

ইনস্টিটিউটের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে স্বাদু পানি উপকেন্দ্র থেকে নারিকেলি চেলা ও ময়মনসিংহে স্বাদু পানি কেন্দ্র থেকে তিত পুঁটি মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়।

চেলা মাছের প্রজনন গবেষণায় ছিলেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তাশরিফ মাহমুদ মিনহাজ, শ্রীবাস কুমার সাহা, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. অনুরাধা ভদ্র, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শাহীন আলম, ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিনা ইয়াসমিন।

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান বলেন, ‘যে মলা, ঢেলা, পুঁটি ইত্যাদি মাছ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টির অন্যতম উৎস হিসেবে একসময় বিবেচিত হতো, পরবর্তীতে এসব মাছের উৎপাদন প্রাকৃতিক জলাশয়ে কমে যাওয়ায় পুষ্টি থেকে সাধারণ ভোক্তারা বঞ্চিত হতে থাকে। এসব মাছ মানুষের পাতে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিএফআরআই কাজ করছে।’

নারিকেলি চেলা অঞ্চলভেদে কাটারি ও নারকালি চেলা নামেও পরিচিত। মাছটি নদী, পুকুর, বিল, হ্রদ ও খালের তলদেশে বসবাস করে। সুস্বাদু হওয়ায় উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছটি খুবই জনপ্রিয়। মাছটিতে মানবদেহের জন্য উপকারী অণুপুষ্টি উপাদান ভিটামিন এ ও জিংক বিদ্যমান রয়েছে। এ মাছের প্রাচুর্যও বর্তমানে প্রকৃতিতে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রজাতিটিকে বিপন্নের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের স্বাদু পানি উপকেন্দ্র সৈয়দপুরের বিজ্ঞানীরা বিগত ২০২১ সালে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ও চিকলী নদী থেকে ৫-৭ গ্রাম ওজনের নারিকেলি চেলা মাছ সংগ্রহ করে উপকেন্দ্রের পুকুরে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন। গবেষণার ফলস্বরূপ সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দেশে প্রথমবারের মতো মাছটির কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে প্রাথমিক সফলতা অর্জন করেন।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শাহীন আলম বলেন, তিত পুঁটি মাছটি এক সময় বাংলাদেশের নদী নালা, খাল বিল, হাওর, বাঁওর ও পুকুরে পাওয়া যেতো। তিত পুঁটি মাছের চচ্চড়ি দিয়ে অনেকের রসনা পূরণ হতো। মাছটি বাংলাদেশসহ ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়। আইইউসিএন ২০১৫-এর তথ্য অনুযায়ী মাছটি বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ২০২১ সালে স্বাদু পানি কেন্দ্র, ময়মনসিংহের বিজ্ঞানীরা নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওর এবং ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে সংগ্রহ করে কেন্দ্রের পুকুরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে চলতি বছরের মে মাসে দেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে তিত পুঁটি মাছের পোনা উৎপাদনে প্রাথমিক সফলতা অর্জিত হয়।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন যে, দেশি ছোট মাছ বাঙালির সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিপন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ সুরক্ষায় বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। এরই আওতায় ইনস্টিটিউট হতে গবেষণা পরিচালনা করে দেশে বিপন্ন প্রজাতির ৬৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে নারিকেলি চেলা তিত পুঁটিসহ মোট ৩৬ প্রজাতির মাছের জীনপুল সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত