Ajker Patrika

ভয়ে পদত্যাগ করে হোটেলে আশ্রয় নেন গভর্নর মালিক

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৪৯
ভয়ে পদত্যাগ করে হোটেলে আশ্রয় নেন গভর্নর মালিক

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত থেকে আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সঙ্গে মিলে পাকিস্তানি সেনারা বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করতে শুরু করেছিল। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ করে।

ইয়াহিয়া খান এই দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে একটি চিঠি পাঠান। তাতে তিনি লেখেন, ‘কালবিলম্ব না করে মার্কিন সাহায্য অবশ্যই পৌঁছাতে হবে। একটি অর্থপূর্ণ পরিবর্তন…বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকার হস্তক্ষেপ শুধু কাম্যই নয়, বরং নির্দিষ্ট ও অর্থপূর্ণ হতে হবে।’

এই দিন ঢাকার গভর্নর হাউসে ভারতীয় বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করা হয়। এতে ভীত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আবদুল মালিক পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি নিরপেক্ষ এলাকা হিসেবে স্বীকৃত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আশ্রয় নেন। ইয়াহিয়া খান একটি বার্তায় মালিক ও নিয়াজীকে নির্দেশ দেন, সশস্ত্র বাহিনী ও পাকিস্তানের প্রতি অনুগতদের নিরাপত্তা বিধানের।

এই দিন বঙ্গোপসাগরে পরমাণু শক্তিচালিত মার্কিন রণতরি ‘এন্টারপ্রাইজ’কে টাস্কফোর্স হিসেবে পাঠানো হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পটভূমিতে এটাই ছিল নিক্সন-কিসিঞ্জারের সর্বশেষ ভূ-কৌশলগত পদক্ষেপ। টাস্কফোর্সের রণতরিগুলো ছিল পরমাণু শক্তিচালিত যুদ্ধজাহাজ, ৭০টি বিমানবাহী এন্টারপ্রাইজ, ২৪টি হেলিকপ্টারবাহী উভচর যুদ্ধজাহাজ ত্রিপোলি, তিনটি নিয়ন্ত্রিত মিসাইলবাহী ডেস্ট্রয়ার এবং একটি পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন। তাতে ছিল ৮০০ মেরিন সেনা।

কেন এই টাস্কফোর্স পাঠানো হলো? এই প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লেয়ার্ড জানান, আটকে পড়া আমেরিকানদের উদ্ধার করার জন্য তা পাঠানো হয়েছে। ২০০ জন মার্কিন নাগরিককে উদ্ধার করার জন্য এমন রণতরির কী প্রয়োজন, তা আর ব্যাখ্যা করেননি লেয়ার্ড।

ঢাকা থেকে মার্কিন কনসাল জেনারেল এক জরুরি বার্তায় জানালেন, জেনারেল নিয়াজী ও রাও ফরমান আলী তাঁর সঙ্গে দেখা করে একটি বার্তা দিয়েছেন। তাতে তাঁরা বলেছেন, পাকিস্তানি সেনা ও নাগরিকদের পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস পেলে তারা অস্ত্র সংবরণ করতে প্রস্তুত। তবে আত্মসমর্পণের কোনো কথা তখনো তাঁরা উল্লেখ করেননি।

মার্কিন কনসাল জেনারেলের কাছ থেকে নিয়াজীর বার্তা পেয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইসলামাবাদে দূত ফারল্যান্ডের মাধ্যমে ইয়াহিয়ার কাছে জানতে চান, এ ব্যাপারে তাঁর অনুমোদন আছে কি না। ইয়াহিয়া জানান, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব ক্ষমতা নিয়াজীকে দেওয়া হয়েছে। তিনি সে বার্তা দিল্লিকে এবং নিউইয়র্কে ভুট্টোর কাছে পাঠিয়ে দিতে অনুরোধ করেন।

এ দিন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানিয়ে উত্থাপিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি ১১-২ ভোটে অনুমোদিত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পোল্যান্ড প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ব্রিটেন ও ফ্রান্স নিরপেক্ষ থাকে। ভেটো দেওয়ার আগে সোভিয়েত প্রতিনিধি ইয়াকব মালিক ঘোষণা করেন যে মার্কিন উদ্যোগ ভুল ও অবাস্তব। এই প্রস্তাব একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সূত্র: মাহমুদুল হক, বাংলাদেশের অভ্যুদয় স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা: পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা; হাসান ফেরদৌস, মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত বন্ধুরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত