Ajker Patrika

সাত মাস জলাবদ্ধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
আপডেট : ২০ মে ২০২২, ১৬: ৪৫
সাত মাস জলাবদ্ধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর। এখানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় অর্ধলাখ মানুষের বসবাস। বাসিন্দাদের অধিকাংশই চালকল এবং ধানের চাতালের শ্রমিক বা ব্যবসায়ী। এ অর্ধলাখ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য আছে একটি মাত্র উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু চালকলের বর্জ্যের পানিতে সেটির চারপাশে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে প্রায় সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি।

এতে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন ওই অর্ধলাখ মানুষ।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম বলা হয় কুষ্টিয়ার এ খাজানগরকে। ছোট মাঝারি এবং অটো রাইচমিলসহ এখানে সাড়ে ৪ শতাধিক চালকল আছে। যেসব চালকল থেকে নিয়মিতভাবে দূষিত বর্জ্য নির্গত হয়। এ নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ পুরোনো।

কিন্তু এবার দেশ এগ্রো ও ইফাদ এগ্রো নামের দুটি চালকলের বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত পানিতে ওই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র স্থান উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চারপাশে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। যার ফলে গত ৭ মাস ধরে সেখানকার কার্যক্রম বন্ধ।

সরেজমিন দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুরো এলাকা বর্জ্য ও কচুরিপানা জমে আছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

শুধু স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নয় পাশে কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা সড়কের কুবুরহাট এলাকা দিয়ে চলাচলকারী হাজারো মানুষ বিষাক্ত পানির দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে চলাফেরা করছেন। ওই পানি গায়ে লেগে চর্মরোগসহ নানা অসুখ-বিসুখ দেখা দিচ্ছে। চালকলের বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত পানিতে আশপাশের ফসলও নষ্ট হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই ওই পানিতে ডুবে যায় সড়ক।

স্থানীয়দের দাবি, চালকল মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় সবাইকে ম্যানেজ করে চলেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চারপাশে চালকলের বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত পানিতে সয়লাব থাকলেও সংশ্লিষ্ট কারও মাথা ব্যথা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কয়েকজন কর্মচারী বলেন, আমরা এখানে চাকরি করি। চালকল মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে তাঁরা হুমকি-ধমকি দেন। তাই প্রতিবাদ করতে পারি না। বিষয়টি উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জানিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এ বিষয়ে কোনো কিছু করতে গেলে আমাদের ঝামেলায় পড়তে হবে। তাই দেখেও সবকিছু না দেখার ভান করি।

বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্টু ফকির বলেন, ‘স্থানীয়রা আমাকে জানানোর পর বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। চালকল মালিক পক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছি। তাঁরা দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

স্থানীয়দের দাবি খাজানগরে একের পর এক চালকল তৈরি হলেও বর্জ্য নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এমনকি অধিকাংশ চালকলের নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। 
কুষ্টিয়ার পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মিজানুল হক বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও জানিয়েছি। তবে তাঁরা কেউই ব্যবস্থা নেননি। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’ এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি এত দিন কেউ আমার নজরে আনেননি। এখন জানলাম। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তিনি কিছু জানেন না। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত