Ajker Patrika

রুফিয়াদের সোনালি স্বপ্নে ঢেউ খেলছে ঢলের পানি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০৮: ৫৩
রুফিয়াদের সোনালি স্বপ্নে ঢেউ খেলছে ঢলের পানি

‘আমার বাবাহারা ছেলেটায় চুক্তি কইরা অন্যের জমিতে চাষাবাদ করছিল। দুই-চার দিন পরে ধান কাটবার কথা আছিল। তার আগেই আমার ছেলের স্বপ্ন এখন পানিত ভাসতাছে।’ হাওরপাড়ে বসে এভাবেই বিলাপ করছিলেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের বরমা গ্রামের রুফিয়া আক্তার। সামনে দিগন্তজোড়া সোনালি ধানের খেতগুলোতে ঢেউ খেলছে ঢলের পানি।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বৃহৎ সুরমা নদীসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত। এরই মধ্যেই ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে অনেক হাওরে। গত রোববার রাত ১১টার দিকে দিরাই ও জগন্নাথপুর উপজেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত কামারখাল নদীতীরের হুরামান্দিয়া হাওরের বাঁধটি পানির চাপে ধসে যায়। রাতেই হাওরের প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে।

গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হুরামান্দিয়া হাওর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, নিচের দিককার ধানগুলো পানির নিচে চলে গেছে। উপরের অংশের জমিগুলোতে পানি ছুঁইছুঁই অবস্থা। এখনো যেগুলোতে পানি কম আছে, সেখানে যতটা পারা যায় দ্রুত ধান কেটে নেওয়ার চেষ্টা করছেন কৃষক।

বরমা গ্রামের রুফিয়া আক্তারের ছেলেরা ঋণ করে দুই কেয়ার ধান চাষ করেছিলেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাহ্‌রির আগে কিছু ধান কাটছিল আমার ছেলে। সকালে আইসা দেখি পানি চলে আসছে।’

হুরামান্দিয়া হাওরে বরমাসহ আরও ১০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার কৃষক চাষ করেছিলেন প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমি। সবার স্বপ্ন-আশা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সর্বনাশা ঢল।

বরমা গ্রামের কৃষক নুর আলী বলেন, ‘আমার ছয় কেয়ারের এক কাঁচিও ধান আনতে পারছি না। সব পানির নিচে ভেসে গেছে।’

সরকারি কিছু সহযোগিতা হয়তো পেতে পারেন—এ প্রসঙ্গ তুলতেই নুর আলী জবাব, ‘সরকার আর কিতা দিব? যা দিব তা আমরার পর্যন্ত পৌঁছাইত না।’

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম দাবি করেন, এই হাওরে ১ হাজার হেক্টরের মধ্যে ৮০০ হেক্টরের ধান কাটা হয়ে গেছে। ২০০ হেক্টর পানিতে তলিয়ে গেছে। যেসব হাওরের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা ইতিমধ্যে তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।’

সুনামগঞ্জে চলতি বছর ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢলের পানিতে এরই মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসল তলিয়ে গেছে।

অল্পের জন্য রক্ষা পেল পাগনার হাওর
জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার পাগনার হাওরের প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসল অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের গজারিয়া নামক এলাকায় হঠাৎ সুরমা নদীর পাড়ে থাকা গজারিয়া স্লুইসগেটের সীলগালা ভেদ করে হাওরে পানি ঢুকতে থাকে। তদারকিতে থাকা কৃষকেরা তাৎক্ষণিক স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেন। মুহূর্তেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে কাজে লেগে যান।

স্থানীয় কৃষক নয়ন মিয়া বলেন, পানির অতিরিক্ত চাপে স্লুইসগেটের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে পানি ঢুকতে থাকে। পানির চাপে মুহূর্তেই ছিদ্র বড় হতে থাকে। কয়েক হাজার মাটিভর্তি বস্তা ফেলে শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা যায়। অল্পের জন্য বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পায় হাওরের প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত