পদ্মা সেতুতে দূর হচ্ছে আঞ্চলিক উন্নয়নবঞ্চনা

শেখ আবু হাসান, খুলনাশেখ আবু হাসান, খুলনা
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২২, ০৮: ২০
আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ১৫: ৩৫

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেছেন, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রায় দুকোটি মানুষ ছিল চরমভাবে বঞ্চিত। কিন্তু পদ্মাসেতুর মাধ্যমে সে বঞ্চনার অবসান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়নের যে বঞ্চনা ছিল সেটিও দূর হবে। এক কথায় গোটা দেশ একটি ছাতার আওতায় এসে সম উন্নয়নের ধারা সূচিত হবে।

পদ্মাসেতু উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে গতকাল আজকের পত্রিকাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শেখ আশরাফ উজ জামান এ সব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের পদ্মাসেতু। বাঙালি জাতির গর্বের সেতু। আর মাত্র ৩ দিন পর উন্মুক্ত হচ্ছে। পদ্মা নদীর ওপর মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে এ সেতু চালু হলে পাল্টে যাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দৃশ্যপট। এ অঞ্চলে দারিদ্র্য বিমোচনসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। গড়ে উঠবে শিল্প কারখানা। সৃষ্টি হবে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থানের। শুধু তাই নয়, মোংলা, পায়রা, বেনাপোল ও ভোমরা বন্দরের গতিশীলতা বাড়বে কয়েক গুন।

পদ্মাসেতুর দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসা সংগঠন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান আরও বলেন, পদ্মাসেতুর দাবিতে খুলনাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলন হলেও সর্বশেষ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক প্রচেষ্টায় এর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এ জন্য তিনি প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান।

পদ্মাসেতু নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, পদ্মাসেতুর দাবি ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল সেটি হচ্ছে মাওয়ার পরিবর্তে পাটুরিয়ায় সেতু করার পরিকল্পনা। তৎকালীন সময়ের একজন মন্ত্রীর এমন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। হরতাল, অবরোধসহ মাওয়া ঘাটেও মানববন্ধন করা হয়। ওই আন্দোলনে এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরাও অংশ নিয়েছিলেন। যেটি হয়েছিল ২০০৪ সালে। এর আগে ২০০৩ সালে খুলনার শিল্প কলকারখানা বন্ধের প্রতিবাদ এবং মাওয়ায় পদ্মাসেতুর দাবিতে উন্নয়ন কমিটির ডাকে দু’দিনের হরতাল পালিত হয়েছিল। ওই সময় তিনিসহ অনেককে পুলিশ আটক করলে খুলনার আপামর জনসাধারণের বিক্ষোভের মুখে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।

ওই আন্দোলনে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন এবং যাদের অনুপ্রেরণায় পদ্মাসেতুর আন্দোলন সফল হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উন্নয়ন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম আবু মহম্মদ ফেরদৌস, সাবেক এমপি এম, নূরুল ইসলাম, খুলনা বিভাগীয় প্রেসক্লাব ফেডারেশনের চেয়ারপারসন আলহাজ লিয়াকত আলী, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির বালু, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদ, খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সাবেক এমপি মরহুম এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা, সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র শাহেদ আলী রবি, বরিশালের শওকত আলী হিরণ, অ্যাডভোকেট মেজবাউল রাজন, ঝালকাঠির সুলতান হোসেন খান, মাদারীপুরের খোকা শিকদার ও হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ প্রমুখ।

পরবর্তীতে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় বিশ্বব্যাংক, জাইকা এবং এডিবি। এ ছাড়া অনেকেই পদ্মাসেতু নিয়ে অনেক সমালোচনা-ষড়যন্ত্র করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাস, আত্মপ্রত্যয়, দৃঢ় চিত্তে দেশীয় অর্থায়নেই এ সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ জুন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত