Ajker Patrika

১০ মাসের ঈশানকে বড় করবে কে

চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১২: ১৮
১০ মাসের ঈশানকে বড় করবে কে

চৌদ্দগ্রামে জমির বিরোধের জেরে ইসরাফিলকে (২৮) কুপিয়ে হত্যা ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত রোববার রাতে মা রিনা বেগম বাদী হয়ে ছয়জনের নামে হত্যা মামলা করেন। এদিকে শোকে পাথর অবস্থা ইসরাফিলের স্ত্রী রিয়া আক্তারের। ১০ মাস বয়সী ছেলে ঈশানকে বারবার জড়িয়ে ধরে আহাজারি করছেন তিনি। বলছেন, ‘ঈশানকে বড় করবে কে?’

মামলার আসামিরা হলেন উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের তারাশাইল-দুর্গাপুর গ্রামের মোক্তল হোসেন, তাঁর ছেলে সজীব, স্ত্রী রহিমা বেগম, মেয়ে নাসরিন আক্তার, আইরিন আক্তার ও তানজিনা আক্তার। পুলিশ রাতেই সজীব ছাড়া মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল সোমবার রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়। বর্তমানে তাঁরা জেলহাজতে রয়েছেন।

শিশুকে ঘিরে শোক: ইসরাফিলের ছেলে ঈশানের বয়স ১০ মাস। এক দিন আগেও যে বাড়ি নিরিবিলি ছিল, সেই বাড়িভর্তি মানুষ। বেশির ভাগই শিশুটির অপরিচিত। এঁরাই এক এক করে ঈশানকে কোলে নিচ্ছেন, আর আফসোস করছেন। কিন্তু এসব বোঝার বয়স হয়নি তার। কৌতূহলী চোখে সবার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝেমধ্যে কেঁদে উঠছে।

বাড়ির আঙিনায় খড়ের মধ্যে এখনো জমাট বাঁধা রক্ত। ঘরের ভেতরে আহাজারি করছেন ইসরাফিলের স্ত্রী রিয়া আক্তার। তিনি বলছেন, ‘এখন আমাদের সংসার চলছে কীভাবে। আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ কী। কে নেবে এই হত্যার দায়। আমি কী আমার স্বামী হত্যার বিচার পাব।’ কেউ সরাসরি রিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না। কেউ তাঁর কথাগুলোই নিজের ভঙ্গিতে বলছেন।

ইসরাফিলের চাচি শিরিনা আক্তার জানান, ইসরাফিল টাইলস মিস্ত্রির কাজ করতেন। ছোট ভাই সালমান পড়ালেখা করে। ইসরাফিলের আয় দিয়েই সংসার চলে। মাত্র ঈদ গেল। দুপুরে খাওয়ার জন্য সন্তানকে নিয়ে তৈরি হচ্ছিলেন। এরই মধ্যে শোরগোল শুনে ঘর থেকে বের হলেন। দেখলেন যাঁদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ, তাঁরা বিরোধকৃত জমিতে খড়ের গাদা তৈরি করছেন। বাধা দিতেই হায়েনার মতো ইসরাফিলের ওপর হামলা হয়। একের পর এক ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলেন। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হলো।

ছোট ভাই সালমান আহাজারি করে বলেন, ‘ভাইকে ঘাতকেরা বাঁচতে দিল না। ছোট্ট ঈশানের মুখে স্পষ্টভাবে বাবা ডাক শোনার আগেই তাঁকে হত্যা করা হলো। আমরা কী আমাদের ভাই হত্যার বিচার পাব। ছোট্ট ঈশানের ভবিষ্যৎ কী হবে। কীভাবে চলবে আমাদের পরিবার।’

গ্রামে ক্ষোভ: ময়নাতদন্ত শেষে ইসরাফিলের লাশ দাফন করা হয়েছে। জানাজায় উপস্থিত এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ লক্ষ করা গেছে। তাঁরা অবিলম্বে সজীবকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান এবং এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কাজী হাফেজ বেলাল বলেন, ‘আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ইসরাফিল অত্যন্ত শান্ত ছেলে ছিল। সজীব ও তার পরিবার জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে একাধিকবার ইসরাফিলের পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছিল। দ্রুত সজীবকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রকাশ্যে সজীব ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ইসরাফিলকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ ধরনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি এবং সজীবকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম মজুমদার বলেন, ‘সামান্য জমির বিরোধ নিয়ে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে একাধিক সালিস হয়। সজীবের পরিবার বারবার সালিসের রায় অমান্য করে আসছে। মনে হচ্ছে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রোববার ইসরাফিলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতীয় নির্বাচন: ভোট কমিটির নেতৃত্বে ডিসি–ইউএনওকে না রাখার চিন্তা

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত