বেলাই বিলে সাঁঝের খেলা

মো. রিয়াদ হোসাইন কালীগঞ্জ (গাজীপুর) 
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২২, ০৯: ০২
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২২, ০৯: ০৪

যত দূর চোখ যায়, পানি আর পানি। বাতাসের তালে পানিতে চিরচেনা ঢেউ। সেই ঢেউয়ে নাচছে লালচে আকাশ। নাচের এ খেলায় দুলছে কচুরিপানার ফুল। এরই মধ্যে নীড়ে ফিরছে কালো পানকৌড়ি আর সাদা বকের দল। সাঁঝবেলায় সাজের এমনই খেলা খেলছে প্রকৃতি। খেলার ফাঁকে জেলেনৌকা থেকে ভেসে আসছে লোকগানের মোহনীয় সুর।

রূপ-যৌবন আর লাবণ্যের এই চিত্র প্রতিদিনই দেখা যায় গাজীপুরের কালীগঞ্জের বেলাই বিলে। বর্ষায় ছলছল অথই পানি আর শুকনো মৌসুমে দিগন্তজুড়ে ধানের খেত। এটাই চিরচেনা বেলাইয়ের সৌন্দর্য। বিলের স্বচ্ছ পানিতে সাদা রং ছড়িয়ে দেয় জাতীয় ফুল শাপলা। বর্ষা মৌসুমে শাপলায় পরিপূর্ণ থাকে পুরো বিল।

প্রতিবছর বর্ষা আর শরতে বেলাই বিলের আসল রূপ দেখা যায়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। বেলাই বিলের বুক চিরে চলে গেছে তুমলিয়া মোড়-আওড়াখালী রাস্তা। প্রতিদিনই এ রাস্তায় দেখা যায় পর্যটকদের আনাগোনা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিয়াসীরা নৌকাযোগে ছুটে আসেন বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। রাজধানীর এত কাছে নেই আর কোনো বিল। শহরের সন্নিকটে হওয়ায় ব্যস্ততা পাশ কাটিয়ে বিনোদনের আশায় পুরো পরিবার নিয়ে অনেকেই চলে আসেন বেলাইয়ে।

রাজধানীর গুলশান থেকে আসা মো. আজহার উদ্দিন বলেন, ‘ইউটিউবে আমি এই বিলের সৌন্দর্য দেখেছি। সেই থেকে এখানে আসার পরিকল্পনা। এত দিন সময় বের করা সম্ভব হয়নি। আমি এখানে এসে মুগ্ধ। ফোনের পর্দায় যা দেখেছি, বাস্তবে তার চেয়ে হাজার গুণ সুন্দর।’

সারা দিন ঘোরাঘুরির পর বিল থেকে জেলেদের ধরে আনা তাজা সুস্বাদু মাছে দুপুরের ভোজ! মাছের অভয়ারণ্য হওয়ায় বিলে জেলেদের অবাধ বিচরণ। একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী এই মাছ আহরণের মাধ্যমে চালায় সংসার। দেশীয় মাছের কদর থাকায় রাজধানী থেকে প্রতিদিন সকালে অনেকেই ছুটে আসেন বেলাইপাড়ে। স্থানীয়দের কেউ কেউ সকালে এসে শাপলা তুলে স্থানীয় হাটে বিক্রি করেন।

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী মো. মিরাজ মোল্লা বলেন, ‘আমার বাড়ি বেলাইপারে। ছোটবেলা থেকে বাবার কাছেই মাছ ধরা শেখা। সেই থেকে এটা এখন নেশা ও পেশা। আগে মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করলেও তেমন একটা মূল্য পাওয়া যেত না। এখন বাইরে থেকে পর্যটক আসায় দেশি মাছ বেশ ভালো দামে বিক্রি করতে পারছি। এতে আমার সংসার আগের চেয়ে বেশ ভালোই চলছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসসাদিকজামান বলেন, জলাধারটি এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহে দারুণ ভূমিকা পালন করছে; পাশাপাশি ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য রক্ষায় স্থানীয়দের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

রাজধানীর উত্তরা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরত্বে বেলাই বিল। উত্তরা পার হয়ে টঙ্গী স্টেশন রোডে কিছুক্ষণ পর পর বাস, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মিলবে।

এগুলো যাবে কালীগঞ্জ/নলছাটার দিকে। নলছাটা নেমে বেলাইয়ের একাংশ দেখা যাবে। তবে পুরোটা দেখতে হলে যেতে হবে আরও সামনে। তুমলিয়া মোড়ে নামতে হবে।

সেখান থেকে বেরুয়া সেতুতে যেতে হবে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে। নৌকাযোগে বেলাই বিলের ভেতরে রয়েছে ভ্রমণের ব্যবস্থা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত