Ajker Patrika

তুফানের দরিয়ায় বাঁশের টাওয়ারে ঝুলছে ১১ হাজার ভোল্টের তার

মো. ফরিদ রায়হান,অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) 
তুফানের দরিয়ায় বাঁশের টাওয়ারে ঝুলছে ১১ হাজার ভোল্টের তার

দেশের হাওরগুলো এখন এক একটা দরিয়া। কূল মেলে না দৃষ্টিসীমায়, পানি আর পানি। তুফান বইছে এপার-ওপার। তার বুক চিরে চলে গেছে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন। সেই তার ঝুলছে বাঁশের টাওয়ারের (খুঁটির) মাথায় মাথায়। এসব বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটি ঘেঁষে প্রতিদিন চলাচল করে হাজারো নৌকা, ট্রলার ও লঞ্চ। ঝড়-তুফানে ঘটতে পারে ভয়ংকর দুর্ঘটনা।

কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিঠামইন জোনাল অফিসের অধীনে তিন হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইনে ১০৮ কিলোমিটার ৩৩ হাজার ভোল্ট (কেভি) ও ৯৪৫ কিলোমিটার ১১ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন রয়েছে। তিন উপজেলায় গ্রাহক রয়েছে ৮০ হাজার ৬৩৫ জন। তার মধ্যে অষ্টগ্রামে ৩৩ হাজার ৫১৩ জন, মিঠামইনে ২৭ হাজার ৬৫৩ ও ইটনা আংশিকে ১৯ হাজার ৩৬৯ জন গ্রাহক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার রাতে ইটনা উপজেলার রায়টুটি ইউনিয়নের আড়ালিয়া হাওরে কয়েকটি খুঁটি পড়ে গিয়ে উপজেলার ছিলেন্ডা, কামলাপুর, এরশাদনগর, বেতেগা, হিরণপুর ও শিবির গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে মিঠামইন জোনাল কার্যালয়ের টেকনিশিয়ান ও শ্রমিকেরা দুই দিনের চেষ্টায় চারটি বাঁশের খুঁটি বানিয়ে গতকাল শনিবার সকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করে। 
এর আগে গত মাসে ইটনা সদর ইউনিয়নের ধনু নদীতে দুটি বাঁশের খুঁটি বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে দুই ইউনিয়নের প্রায় ৪ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মসিউর রহমান (৩৮) বলেন, ‘বাইষ্যা মাসে প্রায় সময় কারেন্টের খুঁটি পইড়া যায়গা। তহন, বাঁশের খুঁটি বানাইয়্যা কারেন্ট দেয় সত্য। তবে, নৌকা লইয়্যা এই খুঁটি দ্বারে দিয়্যা যেতে ভয় করে। কখন পড়ে যায়।’

পল্লী বিদ্যুতের মিঠামইন জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন বলেন, ‘ভৌগোলিক কারণে বর্ষা মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা হয়, খুঁটি পড়ে যায়। তারপরও, আমরা গ্রাহকের সুবিধার্থে দ্রুত বিকল্প উপায়ে বাঁশের খুঁটি দিয়ে সেবা স্বাভাবিক রাখি। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’

বর্ষাকালে বিস্তীর্ণ হাওরের পানিতে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটির গোড়ার মাটি নরম থাকে। এতে পানির স্রোত, ঝড়, নৌযান ও পর্যটকবাহী ট্রলারের ধাক্কায় অনেক সময় খুঁটি হেলে পড়ে বা পড়ে যায়। পানিতে ছিঁড়ে পড়ে বিদ্যুতের তার। বন্ধ করতে হয় বিদ্যুৎ সরবরাহ। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ গ্রাহক।

এ সময় বৈরী পরিবেশে গ্রাহকদের নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হাওরে বাঁশ, কাঠ ও জিআই তার দিয়ে স্থানীয়ভাবে নির্মাণ করা হয় ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটি। হাওরের পানি না নামা পর্যন্ত এসব খুঁটিতে চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

এই বিষয়ে বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বড় দুর্ঘটনা এড়াতে হাওরাঞ্চলে ছয় মাস পানিতে থাকে—এমন খুঁটিগুলোর নিচে ৫ বর্গফুট মাফলিং বা পাকাকরণ করা হলে, এই দুর্ভোগ কমবে, তখন খুঁটি পড়বে না, ঝুঁকি থাকবে না বিদ্যুৎ সরবরাহে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত