৪ বছর ধরে সেতু ভাঙা, দুর্ভোগ

রকিব হাসান নয়ন, মেলান্দহ
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০১
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ০৫

চার বছর আগে জামালপুরের মেলান্দহের ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের পাঠানপাড়া এলাকার ঝাড়কাটা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি ভেঙে গেছে। এত দিনেও সেতুটি সংস্কার হয়নি। এ কারণে ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা, উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছেন আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ। সেতু ভাঙা থাকার কারণে অতিরিক্ত ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে এসব এলাকায় যেতে হচ্ছে তাঁদের। এতে করে বাড়তি পথ পাড়ি দেওয়ার পাশাপাশি গুনতে হচ্ছে কয়েক গুণ ভাড়া।

এদিকে এলাকার রাস্তাঘাট পাকা হলেও শুধু একটি সেতুর অভাবে তথা সেতু সংস্কারের অভাবে যোগাযোগব্যবস্থার দিক দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যদিকে দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নারী, স্কুলশিক্ষার্থী, বয়স্ক মানুষ ও রোগীদের। এ কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটির সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের বন্যায় পানির প্রবল স্রোতে ঝাড়কাটা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির দক্ষিণ অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। এরপর থেকে ওই সেতুর ওপর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচলসহ মানুষের পারাপার বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ চার বছরেও ওই স্থানে নতুন করে সেতু নির্মিত না হওয়ায় সেতুর আশপাশের গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝাড়কাটা নদীর ওপরের সেতুটির দক্ষিণ অংশ ভাঙা। উত্তর পাশে সেতুর ওপরের রেলিং ভাঙা। অনেক জায়গার রড উধাও। দীর্ঘদিন ধরে সেতু সংস্কার না হওয়ায় রেলিং ভেঙে স্থানীয় ছোট ছেলেরা রড বের করে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেতুটি ভাঙার চার বছর পার হলেও এখনো সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। ফলে সেতু দিয়ে যাতায়াতকারীরা পড়ছেন চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে। স্কুল, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজনকে চার কিলোমিটারের বেশি পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

বীর ঘোষেরপাড়া এলাকায় কৃষক আব্দুল সালাম বলেন, ‘বন্যার সময় সেতু ভেঙে গেছে। এখন যাতায়াতে খুব সমস্যা হচ্ছে। বাজারে যেতে অনেক পথ ঘুরতে হয়। এই সেতু ভাঙা থাকায় ছেলেমেয়ে ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারছে না। দ্রুত সেতু নির্মিত হলে আর ভোগান্তি থাকবে না।’

বেলতৈল উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলে, ‘আমরা নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছি না। বিকল্প পথ দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে ভাড়া গুনতে হচ্ছে কয়েক গুণ।’ সে জানায়, আগেই সেতুর ওপর দিয়ে সে বিদ্যালয়ে গেছে পাঁচ টাকা অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে। এখন যেতে হয় ছবিলাপুর এলাকা হয়ে। গাড়ি ভাড়া লাগে ১৫ টাকা।

ঘোষেরপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা বলেন, ‘সেতু ভেঙে যাওয়ায় আমাদের সমস্যার শেষ নেই। মালামাল বাজারে নিতে পারি না ঠিকমতো, বেশি ভাড়া দিয়ে গাড়িতে করে কৃষিপণ্য বাজারে নিতে হয়। এলাকার প্রায় রাস্তাঘাট পাকা হলেও শুধু একটি সেতুর অভাবে পিছিয়ে যাচ্ছি। দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেতুটি পুনর্নির্মিত হলে আমাদের আর রাস্তাঘাট কিংবা সেতুর চাওয়া-পাওয়া থাকবে না সরকারের কাছে।’

ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সাইদুল ইসলাম লিটু বলেন, বন্যায় সেতুটি ভেঙে গেছে। ওই সেতুর ওপর দিয়ে কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করত। সেতু ভাঙা থাকার কারণে এলাকার লোকজন দুর্ভোগে পড়েছে। সেতু নির্মাণ করা হলে মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) বিরল রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করার জন্য বরাদ্দ চেয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এখনো বরাদ্দ মেলেনি। বরাদ্দ পেলেই ওই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুল ইসলাম বলেন, বরাদ্দ পেলেই দ্রুত সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত