চিংড়ির রপ্তানি কমছে ইউরোপ-আমেরিকায়, আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা

কাজী শামীম আহমেদ, খুলনা ও সাইফুল মাসুম, ঢাকা
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪, ১০: ০০

দেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য চিংড়ি। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ইউরোপ-আমেরিকায় চিংড়ি রপ্তানি কমে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভেনামি (প্রশান্ত মহাসাগরীয় চিংড়ির একটি প্রজাতি) চিংড়ির চাহিদা বেশি থাকায় প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না দেশি বাগদা ও গলদা চিংড়ি। এর জন্য কেউ কেউ বিশ্ববাজারে দেশীয় চিংড়ির ব্র্যান্ডিং না থাকাকে দায়ী করছেন। এ ছাড়া নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে চিংড়ি চাষেও আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।  

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ১৮ কোটি ৩২ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে ২০ শতাংশের বেশি।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে ২ লাখ ৬২ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে চিংড়ির চাষ হচ্ছে। অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৭১ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১৩ হাজার ২৭১ টন। অর্থাৎ প্রায় ৩ হাজার টন রপ্তানি কম হয়েছে।

জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে চিংড়ি খাতে এই মন্দা চলছে। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির বড় বাজার ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে। সি ফুড বায়িং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সুজন আহমেদ বলেন, ‘বড়দিন অথবা খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে ইউরোপে ২০০-২৫০ কনটেইনার হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করতাম। কিন্তু এবার ১০০ কনটেইনারের মতো রপ্তানি হয়েছে। আমরা অন্য দেশের উৎপাদিত ভেনামি চিংড়ির সঙ্গেও পেরে উঠছি না। আমাদের উৎপাদিত বাগদা ও গলদা চিংড়ির দাম বেশি। অন্য দেশ থেকে অর্ধেক দামে আমদানিকারকেরা ভেনামি চিংড়ি কিনছে।’

বিএফএফইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস হুমায়ুন কবির বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা চিংড়ির যথাযথ মূল্য পাচ্ছি না। ফলে দেশের চিংড়িচাষিরা উৎপাদন খরচ ওঠাতে পারছেন না।’ তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা ৭৮ শতাংশ। সেখানে বাগদা চিংড়ির বাজার ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। আর গলদা চিংড়ির বাজার মাত্র ৬ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে গেলে ভেনামি চিংড়ি চাষের বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, সরকার গত বছর ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এখনো পোনা উৎপাদন দেশে শুরু হয়নি। চাষিরাও নতুন প্রজাতির চিংড়ি উৎপাদন নিয়ে ভীতির মধ্যে আছেন।

ফিশ ফার্ম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি মোল্লা শামসুর রহমান শাহীন বলেন, প্রাকৃতিক চিংড়ির উৎপাদন কমে গেছে। চাষের চিংড়ি তেমন কমেনি। রপ্তানি কমায় চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে চিংড়ি চাষ থেকে অনেক চাষি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, চিংড়ি খাতে সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন রপ্তানিকারকেরা, চাষি পর্যায়ে কোনো সুবিধা সরকারের নীতিমালায় নেই। তিনি আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় চিংড়ির ব্র্যান্ডিং করার ওপর জোর দেন।

চিংড়ি চাষে কয়েকটি প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, শুকনো মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইসগেটগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় খালে পানি থাকে না। ধান বা অন্য ফসল চাষকে প্রাধান্য দিয়ে স্লুইসগেট দিয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকতে দেওয়া হয় না। চিংড়ি চাষে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হয় বলে প্রচার আছে। এতে জনগণের মাঝে চিংড়ি চাষে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। অনেক প্রবহমান খাল বদ্ধ দেখিয়ে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারেরা খালে বাঁধ দিয়ে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছেন। এতে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনেকে চিংড়ি চাষ করতে পারছেন না।

মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চিংড়ি) দিলীপ কুমার সাহা বলেন, চিংড়ি চাষ বাড়াতে সরকারের নানা উদ্যোগ আছে। একই পরিমাণ জায়গায় আধুনিক ব্যবস্থাপনায় দ্বিগুণের বেশি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব করতে চিংড়িচাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ভেনামি চিংড়ি পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই জাতের পোনা ও চিংড়ির খাবার, দুটোই আমদানিনির্ভর। ফলে হুট করেই ভেনামি চিংড়ির প্রসার ঘটানো কঠিন।

এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের দেশে চিংড়ির উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। তবে দেশীয় চিংড়ির স্বাদ ও বৈশিষ্ট্যে নিজস্বতা রয়েছে। উত্তম মাছ চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভালো মানের চিংড়ি উৎপাদন করে আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি অর্জন করতে হবে। এতে দেশীয় চিংড়ির আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং হবে, বিশ্ববাজারে চাহিদাও বাড়বে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত