সৌভিক রেজা
‘একটিমাত্র অভিজ্ঞতা আমার মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করেছে: সবকিছুই কাজের ওপর নির্ভরশীল। কাজের প্রতি আমরা সর্বতোভাবে ঋণী; কাজই আমাদের জীবনের মহান নিয়ন্ত্রক।’ নিজের সম্পর্কে কথাগুলো এইভাবেই তাঁর দিনলিপিতে লিখেছিলেন ফরাসি সাহিত্যিক পিয়ের-জুল রেনার। এরই পাশাপাশি তাঁর এ-ও মনে হয়েছিল যে, ‘কোনো কাজের জন্ম ও বৃদ্ধি গাছের মতো হওয়া উচিত।’ কেন গাছের মতো? —এর উত্তরে জুল রেনার জানিয়েছিলেন, তার কারণ ‘গাছের উদ্ভব সম্পূর্ণত তার ধারক বীজ থেকে, তারপর সে খোলা বাতাসে বেড়ে ওঠে স্বাধীনভাবে।’ ঢাকার ‘শিখা গোষ্ঠী’র অন্যতম অগ্রগণ্য সদস্য আবুল হুসেনের প্রসঙ্গে কথাগুলো কেমন যেন ঠিক ঠিকভাবে মিলে যায়। তাঁর জীবনী যদি পর্যালোচনা করি, তাঁর কাঠামোগত কাজের খতিয়ান যদি নেওয়া হয়, দেখা যাবে তাঁর বেড়ে ওঠাটা যেন জুল রেনার ঠিক সেই গাছের মতো, দেখা যাবে যে এই মানুষটা নিজের শিক্ষা-অভিজ্ঞতা ও চেতনাগত বিশ্বাস নিয়ে স্বাধীনভাবেই বেড়ে উঠতে সচেষ্ট ছিলেন আমৃত্যু।
২. তাঁর জীবনের অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল যশোরের পানিসারা গ্রাম থেকে, আর সেটি বিচিত্র সব পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার পরে সমাপ্তি রেখা টানে শহর কলকাতায়। তাঁর এই যাত্রাপথে আবুল হুসেনের অর্জন ছিল অসামান্য। তাঁর কাজের মধ্যে সত্যের সাধনা ছিল বলেই সেসব তাঁর নিজের কাছেও ‘অমূল্য’ হয়ে উঠতে পেরেছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, শুধুই মুখে-মুখে সত্যের জন্য শোরগোল করে সত্যকে পাওয়া যায় না। তাকে পেতে হলে যেমন সাধনা করতে হয়, তেমনি সে-সাধনায় উৎসর্গ করতে হয় গোটা একটি জীবন। তিনি এ-ও বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীতে ‘যে যত আত্মসমাহিত এবং অন্তরে সরল ও নির্মল, সে তত সহজে উচ্চ বিষয়ে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে।’ এর পাশাপাশি চেতনাগতভাবে মানুষের মধ্যে আবির্ভূত হয় ‘জ্ঞানালোক’। (‘সত্য’) এই জ্ঞানালোক শুধু নিজেকেই নয়, চারপাশের জগৎ ও জগতের মানুষকেও আলোকিত করে তোলে, আর এই আলোকের সত্যে যিনি নিজেকে উদ্ভাসিত করতে পারেন, তিনিই হয়ে ওঠেন ‘প্রকৃত মহৎ’ একজন মানুষ।
৩. ‘চরিত্র’ বলতে আবুল হুসেন ‘সুস্থ বিকশিত মানুষের প্রকৃতি’কে বুঝিয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন যে ‘মানুষের কতকগুলি প্রবৃত্তি আছে, যার চর্চার ফলে মানুষের শক্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পায় আর কতকগুলি প্রবৃত্তি আছে যার চর্চার ফলে সেই শক্তি হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।’ তিনি এইটিও বিশ্বাস করতেন যে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে হলে এই দুই শক্তিরই চর্চা করতে হবে। আর সেই ‘শক্তির বলে এই উভয় প্রকার প্রবৃত্তির বিকাশকে ক্রমেই সঞ্চয়ের দিকে জমাতে পারা যায়।’ যে-শক্তির বলে এই সঞ্চয়, তাকেই আবুল হোসেন ‘চরিত্র’ আখ্যা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, ‘মানুষের জীবন কণ্টকাকীর্ণ পথে চলে থাকে। তপস্যা যে-মানুষের নাই, সে চরিত্র-ফল হতে বঞ্চিত। তাই চরিত্র-ফল লাভ করতে হলে আজীবন তপস্যা চাই।’ কেন এই সাধনার, এই তপস্যার প্রয়োজন? তার উত্তরে আবুল হুসেন জানিয়েছিলেন যে, ‘চরিত্র-সাধনে রত যারা, তারা সর্বদা জাগ্রত।’ (‘চরিত্র’) সমগ্র বাঙালি জাতিকে, বিশেষভাবে বাংলার মুসলমান সমাজকে তিনি জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিক্ষায়-চরিত্রে, আদর্শে-নৈতিকতায় জাগ্রত দেখতে চেয়েছিলেন।
৪. প্রাবন্ধিক আবদুল হক সে-কারণেই মন্তব্য করেছিলেন, ‘আবুল হুসেন ছিলেন একজন সাহসী এবং সৎচিন্তানায়ক। বাঙালি মুসলিম সমাজে যাঁরা মধ্যযুগীয় অচল চিন্তাধারার সমালোচনা করেছিলেন, চেয়েছিলেন সব চিন্তার সঙ্গে তাঁদের ধর্মীয় চিন্তারও প্রগতি হোক, যে-প্রবণতাকে তাঁরা বলতে চেয়েছিলেন “বুদ্ধির মুক্তি”, আবুল হুসেন ছিলেন তাঁদের একজন।’ আবুল হুসেন তাঁর ‘আমাদের কর্তব্য কি?’ শীর্ষক প্রবন্ধের উপসংহারে বলেছিলেন, ‘মুসলমানদের অন্তর জ্ঞানের ভরসায় পূর্ণ করে তুলতে হবে। অন্তর পূর্ণ হয়ে উঠলে তার অর্থের দৈন্য প্রাতঃসূর্যের সম্মুখে কুয়াশার মতো পলায়ন করবে। মুসলমানকে এমন শিক্ষা দিতে হবে, সে যেন বলতে পারে, “আমি চাই না অর্থ, চাই না সাম্রাজ্য, আমি চাই সত্য, আমি দুর্বলতা ও দৈন্যকে দূর করতে জগতে এসেছি।”’ তাহলেই বাংলার মুসলমান, তার সব দীনতাকে ফেলে দিয়ে, আবারও বিজয় অর্জন করতে পারবে—এইটি ছিল আবুল হুসেনের সারা জীবনের বিশ্বাস।
সেই সঙ্গে তিনি এটিও বিশ্বাস করতেন যে নতুন যুগে নতুনভাবে ‘আবার মুসলমান জয়যুক্ত হবে—এবার তরবারির দ্বারা নয়, শ্রদ্ধা দ্বারা; জুলুম দ্বারা নয়, প্রীতি দ্বারা; শারীরিক বল দ্বারা নয়, চিত্তের আনন্দ ও মনের বল দ্বারা।’ আর এই জয়ের ফলে, আবুল হুসেনের ভাষায়, এক ‘নব-মুসলিমের জন্মলাভ হবে, যে হবে স্থিরবুদ্ধি, বিশাল-চিত্ত, সংস্কার-মুক্ত, বিপুল-স্নেহ এবং অন্যের অধিকার দানে মুক্তহস্ত।’ (‘নিষেধের বিড়ম্বনা’)।
৫. ‘কর্মযোগী’ মানুষ ছিলেন বলেই তিনি নতুন-এক সংস্কৃতি নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর মতে, ‘আমরা নবীন। নব-সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের ধর্ম।’ আর ‘ধর্মের সত্যকার চর্চা হচ্ছে আমাদের মনের সর্বতোমুখী বিকাশে।’ আবার সেই মনের মুক্তির সঙ্গে শুধুই ধর্মের নয়, সমাজ-রাষ্ট্রের মুক্তির প্রসঙ্গও জড়িয়ে আছে। সে-কারণেই আবুল হুসেনের বিশ্বাস ছিল যে, ‘দেশের মুক্তি তার মানুষের মুক্তিতে। আমাদের ব্যক্তিত্ব পুষ্ট হলেই ভারতে তখন ইসলামের সাংস্কৃতিক মুক্তি কেউ রোধ করে রাখতে পারবে না।’ তিনি এ-ও বিশ্বাস করতেন যে, আজ বাংলার পরাধীন মুসলিম বিভ্রান্ত বটে, কিন্তু সেই ‘মুসলিম কালচারের সার্থকতা হবে আমাদের পরিপুষ্ট জীবনের সার্থকতায়।’ (‘মুসলিম কালচারের ধারা’)।
৬. আবুল ফজল যাঁকে ‘কর্মযোগী’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন, তাঁকেই কাজী মোতাহার হোসেন বলেছিলেন ‘কর্মপ্রাণ’। তাঁর ভাষায়, এই ‘কর্মপ্রাণ আবুল হুসেন নদী-সমস্যা, আইন-সমস্যা, অন্ন-সমস্যা এবং শিক্ষা, সাহিত্য, সম্প্রদায় প্রভৃতি সমস্যার চিন্তা করেছেন, পুস্তক রচনা করেছেন এবং এসব সমাধানের জন্য বিবিধ কমিটি ও বোর্ডের মেম্বররূপেই হোক, আর ব্যক্তিগতভাবেই হোক, আপ্রাণ পরিশ্রম করেছেন।’ এর পাশাপাশি আবুল হুসেনের ‘অসাধারণ কর্মশক্তি’ ও তাঁর ‘সংগঠন-ক্ষমতা’র কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি। এইভাবেই নিজের জীবনকে পূর্ণতার পথে নিতে চেয়েছিলেন আবুল হুসেন।
লেখক: সৌভিক রেজা
অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
‘একটিমাত্র অভিজ্ঞতা আমার মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করেছে: সবকিছুই কাজের ওপর নির্ভরশীল। কাজের প্রতি আমরা সর্বতোভাবে ঋণী; কাজই আমাদের জীবনের মহান নিয়ন্ত্রক।’ নিজের সম্পর্কে কথাগুলো এইভাবেই তাঁর দিনলিপিতে লিখেছিলেন ফরাসি সাহিত্যিক পিয়ের-জুল রেনার। এরই পাশাপাশি তাঁর এ-ও মনে হয়েছিল যে, ‘কোনো কাজের জন্ম ও বৃদ্ধি গাছের মতো হওয়া উচিত।’ কেন গাছের মতো? —এর উত্তরে জুল রেনার জানিয়েছিলেন, তার কারণ ‘গাছের উদ্ভব সম্পূর্ণত তার ধারক বীজ থেকে, তারপর সে খোলা বাতাসে বেড়ে ওঠে স্বাধীনভাবে।’ ঢাকার ‘শিখা গোষ্ঠী’র অন্যতম অগ্রগণ্য সদস্য আবুল হুসেনের প্রসঙ্গে কথাগুলো কেমন যেন ঠিক ঠিকভাবে মিলে যায়। তাঁর জীবনী যদি পর্যালোচনা করি, তাঁর কাঠামোগত কাজের খতিয়ান যদি নেওয়া হয়, দেখা যাবে তাঁর বেড়ে ওঠাটা যেন জুল রেনার ঠিক সেই গাছের মতো, দেখা যাবে যে এই মানুষটা নিজের শিক্ষা-অভিজ্ঞতা ও চেতনাগত বিশ্বাস নিয়ে স্বাধীনভাবেই বেড়ে উঠতে সচেষ্ট ছিলেন আমৃত্যু।
২. তাঁর জীবনের অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল যশোরের পানিসারা গ্রাম থেকে, আর সেটি বিচিত্র সব পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার পরে সমাপ্তি রেখা টানে শহর কলকাতায়। তাঁর এই যাত্রাপথে আবুল হুসেনের অর্জন ছিল অসামান্য। তাঁর কাজের মধ্যে সত্যের সাধনা ছিল বলেই সেসব তাঁর নিজের কাছেও ‘অমূল্য’ হয়ে উঠতে পেরেছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, শুধুই মুখে-মুখে সত্যের জন্য শোরগোল করে সত্যকে পাওয়া যায় না। তাকে পেতে হলে যেমন সাধনা করতে হয়, তেমনি সে-সাধনায় উৎসর্গ করতে হয় গোটা একটি জীবন। তিনি এ-ও বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীতে ‘যে যত আত্মসমাহিত এবং অন্তরে সরল ও নির্মল, সে তত সহজে উচ্চ বিষয়ে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে।’ এর পাশাপাশি চেতনাগতভাবে মানুষের মধ্যে আবির্ভূত হয় ‘জ্ঞানালোক’। (‘সত্য’) এই জ্ঞানালোক শুধু নিজেকেই নয়, চারপাশের জগৎ ও জগতের মানুষকেও আলোকিত করে তোলে, আর এই আলোকের সত্যে যিনি নিজেকে উদ্ভাসিত করতে পারেন, তিনিই হয়ে ওঠেন ‘প্রকৃত মহৎ’ একজন মানুষ।
৩. ‘চরিত্র’ বলতে আবুল হুসেন ‘সুস্থ বিকশিত মানুষের প্রকৃতি’কে বুঝিয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন যে ‘মানুষের কতকগুলি প্রবৃত্তি আছে, যার চর্চার ফলে মানুষের শক্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পায় আর কতকগুলি প্রবৃত্তি আছে যার চর্চার ফলে সেই শক্তি হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।’ তিনি এইটিও বিশ্বাস করতেন যে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে হলে এই দুই শক্তিরই চর্চা করতে হবে। আর সেই ‘শক্তির বলে এই উভয় প্রকার প্রবৃত্তির বিকাশকে ক্রমেই সঞ্চয়ের দিকে জমাতে পারা যায়।’ যে-শক্তির বলে এই সঞ্চয়, তাকেই আবুল হোসেন ‘চরিত্র’ আখ্যা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, ‘মানুষের জীবন কণ্টকাকীর্ণ পথে চলে থাকে। তপস্যা যে-মানুষের নাই, সে চরিত্র-ফল হতে বঞ্চিত। তাই চরিত্র-ফল লাভ করতে হলে আজীবন তপস্যা চাই।’ কেন এই সাধনার, এই তপস্যার প্রয়োজন? তার উত্তরে আবুল হুসেন জানিয়েছিলেন যে, ‘চরিত্র-সাধনে রত যারা, তারা সর্বদা জাগ্রত।’ (‘চরিত্র’) সমগ্র বাঙালি জাতিকে, বিশেষভাবে বাংলার মুসলমান সমাজকে তিনি জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিক্ষায়-চরিত্রে, আদর্শে-নৈতিকতায় জাগ্রত দেখতে চেয়েছিলেন।
৪. প্রাবন্ধিক আবদুল হক সে-কারণেই মন্তব্য করেছিলেন, ‘আবুল হুসেন ছিলেন একজন সাহসী এবং সৎচিন্তানায়ক। বাঙালি মুসলিম সমাজে যাঁরা মধ্যযুগীয় অচল চিন্তাধারার সমালোচনা করেছিলেন, চেয়েছিলেন সব চিন্তার সঙ্গে তাঁদের ধর্মীয় চিন্তারও প্রগতি হোক, যে-প্রবণতাকে তাঁরা বলতে চেয়েছিলেন “বুদ্ধির মুক্তি”, আবুল হুসেন ছিলেন তাঁদের একজন।’ আবুল হুসেন তাঁর ‘আমাদের কর্তব্য কি?’ শীর্ষক প্রবন্ধের উপসংহারে বলেছিলেন, ‘মুসলমানদের অন্তর জ্ঞানের ভরসায় পূর্ণ করে তুলতে হবে। অন্তর পূর্ণ হয়ে উঠলে তার অর্থের দৈন্য প্রাতঃসূর্যের সম্মুখে কুয়াশার মতো পলায়ন করবে। মুসলমানকে এমন শিক্ষা দিতে হবে, সে যেন বলতে পারে, “আমি চাই না অর্থ, চাই না সাম্রাজ্য, আমি চাই সত্য, আমি দুর্বলতা ও দৈন্যকে দূর করতে জগতে এসেছি।”’ তাহলেই বাংলার মুসলমান, তার সব দীনতাকে ফেলে দিয়ে, আবারও বিজয় অর্জন করতে পারবে—এইটি ছিল আবুল হুসেনের সারা জীবনের বিশ্বাস।
সেই সঙ্গে তিনি এটিও বিশ্বাস করতেন যে নতুন যুগে নতুনভাবে ‘আবার মুসলমান জয়যুক্ত হবে—এবার তরবারির দ্বারা নয়, শ্রদ্ধা দ্বারা; জুলুম দ্বারা নয়, প্রীতি দ্বারা; শারীরিক বল দ্বারা নয়, চিত্তের আনন্দ ও মনের বল দ্বারা।’ আর এই জয়ের ফলে, আবুল হুসেনের ভাষায়, এক ‘নব-মুসলিমের জন্মলাভ হবে, যে হবে স্থিরবুদ্ধি, বিশাল-চিত্ত, সংস্কার-মুক্ত, বিপুল-স্নেহ এবং অন্যের অধিকার দানে মুক্তহস্ত।’ (‘নিষেধের বিড়ম্বনা’)।
৫. ‘কর্মযোগী’ মানুষ ছিলেন বলেই তিনি নতুন-এক সংস্কৃতি নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর মতে, ‘আমরা নবীন। নব-সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের ধর্ম।’ আর ‘ধর্মের সত্যকার চর্চা হচ্ছে আমাদের মনের সর্বতোমুখী বিকাশে।’ আবার সেই মনের মুক্তির সঙ্গে শুধুই ধর্মের নয়, সমাজ-রাষ্ট্রের মুক্তির প্রসঙ্গও জড়িয়ে আছে। সে-কারণেই আবুল হুসেনের বিশ্বাস ছিল যে, ‘দেশের মুক্তি তার মানুষের মুক্তিতে। আমাদের ব্যক্তিত্ব পুষ্ট হলেই ভারতে তখন ইসলামের সাংস্কৃতিক মুক্তি কেউ রোধ করে রাখতে পারবে না।’ তিনি এ-ও বিশ্বাস করতেন যে, আজ বাংলার পরাধীন মুসলিম বিভ্রান্ত বটে, কিন্তু সেই ‘মুসলিম কালচারের সার্থকতা হবে আমাদের পরিপুষ্ট জীবনের সার্থকতায়।’ (‘মুসলিম কালচারের ধারা’)।
৬. আবুল ফজল যাঁকে ‘কর্মযোগী’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন, তাঁকেই কাজী মোতাহার হোসেন বলেছিলেন ‘কর্মপ্রাণ’। তাঁর ভাষায়, এই ‘কর্মপ্রাণ আবুল হুসেন নদী-সমস্যা, আইন-সমস্যা, অন্ন-সমস্যা এবং শিক্ষা, সাহিত্য, সম্প্রদায় প্রভৃতি সমস্যার চিন্তা করেছেন, পুস্তক রচনা করেছেন এবং এসব সমাধানের জন্য বিবিধ কমিটি ও বোর্ডের মেম্বররূপেই হোক, আর ব্যক্তিগতভাবেই হোক, আপ্রাণ পরিশ্রম করেছেন।’ এর পাশাপাশি আবুল হুসেনের ‘অসাধারণ কর্মশক্তি’ ও তাঁর ‘সংগঠন-ক্ষমতা’র কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি। এইভাবেই নিজের জীবনকে পূর্ণতার পথে নিতে চেয়েছিলেন আবুল হুসেন।
লেখক: সৌভিক রেজা
অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে