সেচসংকটে ১৫০০ হেক্টর জমি

ফয়েজ আহমেদ, শাহরাস্তি (চাঁদপুর)
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ২৩
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ০৫

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার খিলা খাল ভাসমান সেচ প্রকল্প মৌসুমের যথাযথ সময়ে চালু না হওয়ায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচসংকট তৈরি হয়েছে। ফলে চাঁদপুরের শাহরাস্তি, কচুয়াসহ কুমিল্লার বরুড়া, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার ৫০ হাজার কৃষক আসন্ন বোরো মৌসুমে বোরো ধান রোপণ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ১৯৯১ সালে চাঁদপুরের শাহরাস্তি, কচুয়া, কুমিল্লার বরুড়া, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচের পানি সরবরাহের জন্য শাহরাস্তি উপজেলার ডাকাতিয়া নদীতে স্থাপন করে খিলা খাল ভাসমান সেচ প্রকল্প। আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় বর্তমানে ওই প্রকল্পের অধীনে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি রয়েছে। প্রতিবছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সেচ প্রকল্পটি চালু হলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত তা চালু হয়নি। ফলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এলাকায় পানিসংকটে বোরো চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রসন্নপুর মাঠের কৃষক মো. জয়নাল আবেদীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খিলা খাল ভাসমান সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার পাম্প চালু না করায় আমরা ধান চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি। আশপাশের খাল ও পুকুরের পানি দিয়ে জমি প্রস্তুত করলেও চারা রোপণের পর পানি না পেলে জমি শুকিয়ে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।’

একই মাঠের কৃষক মো. রবিউল হোসেন জানান, তিনি ইতিমধ্যে বীজতলা থেকে চারা উঠিয়ে রেখেছেন, পানির অভাবে তা রোপণ করতে পারছেন না। ওই ইউনিয়নের বিজয়পুর মাঠের কৃষক মো. হুমায়ুন কবীর জানান, পৌষ মাসের শেষের দিকে এসেও পানির অভাবে ধান রোপণ করতে পারছেন না তিনি। সেচ প্রকল্পের পানি না এলে এবার হয়তো ধান চাষ করা সম্ভব হবে না।

সেচ প্রকল্পের বিজয়পুর শাখা স্কিমের সভাপতি মো. ফজলুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সেচ চালু হয়নি। কেন্দ্রীয় সেচ থেকে শাখা স্কিমের মাধ্যমে কৃষকদের পানি সরবরাহ করা হয়।

সরেজমিন ডাকাতিয়া নদীর পারে স্থাপিত খিলা খাল ভাসমান সেচ প্রকল্পের পাম্প-সংলগ্ন নদীর পাড়ে গেলে দেখা যায়, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় পানিতে অর্ধেক ডুবে আছে ২টি পাম্প। সেখানে কর্মরতরা জানান, পানিতে অর্ধেক ডুবে থাকা পাম্প দুটি বিএডিসি কর্মকর্তারা নিয়ে যাওয়ার কথা।

সাড়ে ১২ কিউসেক ডিজেলচালিত পাম্পটি ১০ বছর ধরে এখানেই পড়ে আছে। ৫ বছর আগে পার্শ্ববর্তী চিতোষী সেচ প্রকল্প এলাকা থেকে ১০ কিউসেক ডিজেলচালিত আরেকটি পাম্প এখানে এনে রাখা হয়েছে, যা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পন্টুনসহ নদীতে ডুবে যাচ্ছে।

মৌসুম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কেন পাম্প চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে সেচ প্রকল্পের কেন্দ্রীয় ম্যানেজার ও রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু হানিফ বলেন, বিএডিসির অসহযোগিতার কারণে পাম্প চালু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা পর্যায়ে তাঁদের কোনো জনবল নেই বললেই চলে। বর্তমানে অচল দুটি পাম্প না সরালে সেচ শুরু করা সম্ভব হবে না, যা ডিসেম্বরে চালুর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।

চাঁদপুর জেলা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী আসিফ কামরুল আশ্রাফী জানান, অচল পাম্পগুলো সরানোর দায়িত্ব সেচ ম্যানেজারের। সেগুলো তিনি নিজে নিয়েছেন, নিজ দায়িত্বে দাপ্তরিকভাবে ফেরত দেবেন।দুবারে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘টাকা দিয়ে থাকলে ম্যানেজার বৈধ ডকুমেন্ট দেখাক। এ প্রকল্প বাবদ বিএডিসি ম্যানেজারের কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাবে। তিনি কৃষক থেকে ঠিকই টাকা নিচ্ছেন, কিন্তু বিএডিসিকে পরিশোধ করছেন না। বিজয়পুর স্কিম ম্যানেজারের কাছ থেকে ডাবল লিফটিং পাম্প বাবদ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, এ-সংক্রান্ত ডিমান্ড নোট পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ফজলু সাহেব কথা বললেই হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত