Ajker Patrika

রাজাকারের বিতর্কমুক্ত তালিকা নিয়ে সংশয়

তানিম আহমেদ, ঢাকা
রাজাকারের বিতর্কমুক্ত তালিকা নিয়ে সংশয়

রাজাকারের তালিকা প্রকাশে আইনি বাধা দূর হয়েছে। তাই পর্যায়ক্রমে তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর ও আলশামস সদস্যদের তালিকার প্রথম কিস্তি আগামী ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশের কাজ চলছে। তবে সম্পূর্ণ বিতর্কমুক্ত তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয়ে আছে খোদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

কমিটি মনে করছে, মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর এ তালিকা তৈরি করায় কিছুটা বিতর্ক উঠতেই পারে। এ কারণে সংসদীয় কমিটি রাজাকারের তালিকা সংগ্রহ করে তা প্রকাশের আগে একাধিকবার যাচাই-বাছাই করছে।

সংসদীয় কমিটির সুপারিশসহ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ‘একাত্তরের রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকার প্রথম পর্ব প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে ১০ হাজার ৭৮৯ জনের নাম রয়েছে। পরে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, ওই তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রয়েছে। অথচ অনেক কুখ্যাত রাজাকারের নাম তালিকায় ছিল না। এতে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর তিন দিন পর বিতর্কিত ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তালিকা স্থগিতের ঘোষণা দেন মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

পরে সংসদীয় কমিটি রাজাকার, আলবদর ও আলশামস সদস্যদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়। এ জন্য ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খানকে আহ্বায়ক করে একটি সাব-কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, এ বি তাজুল ইসলাম, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও মোসলেম উদ্দিন আহমেদ। এ কমিটির আকার বড় হওয়ায় বৈঠকে কোরাম সংকট হতো। তাই আকার ছোট করে চলতি বছরের এপ্রিলে পুরোনো সাব-কমিটি বাদ দিয়ে নতুন সাব-কমিটি গঠন করা হয়। আগের সাব-কমিটির মতো শাজাহান খান নতুন এ সাব-কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন। অন্য দুই সদস্য হলেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ ও আওয়ামী লীগের এ বি তাজুল ইসলাম।

এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় ও সাব-কমিটির মাধ্যমে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস সদস্যদের তালিকা চেয়ে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে; পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, কমিটির সভাপতি শাজাহান খান তাঁর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও তালিকা সংগ্রহ করছেন। সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে এই তালিকা সংগ্রহ করছেন তিনি।
ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডারদের চিঠি দিয়ে তাঁদের অধিক্ষেত্রের রাজাকারদের তালিকা সরবরাহের অনুরোধ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে গঠিত সংগঠন সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক শাজাহান খান।

সংসদীয় কমিটির কাছে প্রায় ১৩০টি উপজেলার রাজাকারের তালিকা রয়েছে বলে গত এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে জানানো হয়েছিল। সেই সময় পর্যন্ত সারা দেশের ২ হাজার ৫০৪ জন রাজাকারের তালিকা সংসদীয় কমিটি হাতে পায়। জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের মাধ্যমে সংগৃহীত তালিকা অধিকতর যাচাই করার জন্য আবারও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের কাছে পাঠানো হয়। ওই তালিকা এলে সেটা যাচাই-বাছাই করে সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের কাছে পাঠিয়ে তা চূড়ান্ত করে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি ও প্রকাশের বিধান থাকলেও রাজাকারদের তালিকা তৈরির কোনো বিধান ছিল না। পরে সরকার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। গত ২৯ আগস্ট আইনটি পাস হওয়ার পর এই বাধা কেটে গেছে। এর ফলে সরকার নতুন করে রাজাকারদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিতর্ক এড়াতে তালিকাগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কিছু এদিক-ওদিক হবেই। এগুলো নিয়ে কথা আসবেই। শতভাগ বিতর্কমুক্ত তালিকা তৈরি করা সম্ভব হবে না। কারণ, দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলা থেকেই তালিকা সংসদীয় কমিটিতে জমা হবে। তারপর সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে।

শাজাহান খান আরও বলেন, ‘কোন তারিখে কোন রাজাকার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীতে যোগ দেয়, সেই তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালত থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।’

২৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সাব-কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এই কমিটি রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রাথমিক তালিকা অনুমোদন দিলে তা মূল সংসদীয় কমিটির কাছে যাবে।

সংসদীয় কমিটিতে সিদ্ধান্তের পর সরকারের কাছে তালিকা পাঠানো হবে। এরপর জামুকার মাধ্যমে তালিকা চূড়ান্ত করে সরকার তা প্রকাশ করবে। বিজয় দিবসের আগে আংশিক তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শাজাহান খান।

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথাও বলা হয়েছিল। সেই সময় পাকিস্তান সরকার জানিয়েছিল, তারা এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবে; কিন্তু পাকিস্তান সরকার তা করেনি।

পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে সংসদীয় কমিটি পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা মাহবুব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করেছিল। কমিটি জানায়, এই তদন্তে ২৬১ জনের বেশি পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর নাম তারা পেয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, কীভাবে রাজাকারের তালিকা প্রণয়ন করা হবে, তার নীতিমালা তৈরি করা হবে জামুকা আইনটি রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেওয়ার পর। সংসদীয় কমিটির কাছে লোকজন আবেদন করছেন। তাঁরা সেটা দেখছেন। প্রাথমিক কাজগুলো এগিয়ে রাখছেন। এবার রাজাকারের বিতর্কমুক্ত তালিকা প্রকাশের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত