অসাধু ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক চরিত্রের পরিবর্তন করতে হবে

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৯: ০০

এম শামসুল আলম দেশের বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক। বর্তমানে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন। ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় গঠিত কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা। দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি এবং জ্বালানি-সংকট নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা

আজকের পত্রিকা: চলমান জ্বালানি-সংকটের মূল কারণ কী?
এম শামসুল আলম: দেশের চলমান জ্বালানি-সংকটের মূল কারণ চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের সামঞ্জস্য নেই। চাহিদা তৈরির ক্ষেত্রে সরবরাহের যখন সীমাবদ্ধতা থাকে, তখন তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হয়। কিন্তু আমরা চাহিদা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখিনি। আবার সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য যেসব নীতি ও কৌশল গ্রহণ করেছি, সেগুলো বাস্তবসম্মত ছিল না। এ কারণে দেখা যাচ্ছে, আমরা দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি-সংকট, লোডশেডিং, ঘাটতি, মূল্যবৃদ্ধি এবং আর্থিক সংকটে আছি।এই সংকটের জায়গাটিকে নানাজন, নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে।আমাদের নীতি ও কৌশলে বিভ্রান্তি রয়েছে। আর নীতিগত বিভ্রান্তি থাকলে কৌশলগত ত্রুটি তৈরি হবেই। এতে করে পরিকল্পনাও ভুল হতে বাধ্য। পরিকল্পনা ভুল হওয়ায় সেটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। চাহিদামতো সরবরাহ না হওয়ায় টেকসই জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

আজকের পত্রিকা: নীতিগত সমস্যার জায়গাটা কী রকম?
এম শামসুল আলম: প্রথম কথা হলো, জ্বালানি খাত সেবা না বাণিজ্যিক খাত—এ বিষয়ে রাষ্ট্রকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। খাদ্যকে কি আমরা বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে বিবেচনা করি? রাষ্ট্রীয় দর্শন ও রাষ্ট্রীয় আদর্শের জায়গা থেকে খাদ্যকে রাষ্ট্র নিশ্চয় বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে দেখে না। খাদ্যের অভাবে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে। সেই সময় আমরা কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা ভেবেছি। কিন্তু আমরা তা অর্জন করতে পারিনি। এরপর প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ খাদ্য আমদানি করতে হয়েছে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে। সেখান থেকে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে নিজস্ব সক্ষমতা অর্জন করার জন্য রাষ্ট্রীয় দর্শন ও নীতি দ্বারা আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি। সে কারণে প্রতিবছর বাজেটে কৃষি খাতে একটা ভালো ভর্তুকির ব্যবস্থা থাকে। শুধু উৎপাদন বৃদ্ধি করা নয়, সেই উৎপাদিত খাদ্য মানুষ তার সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী যাতে কিনতে পারে, সে জন্য ভর্তুকি দিয়ে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে খাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়েছে। সেই নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সরকারকে প্রচুর পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়েছে। সেই ভর্তুকি না দিলে সরকারের পক্ষে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো না।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সীমিত চাহিদা থাকায় জ্বালানির তেমন প্রয়োজন পড়ত না। একসময় আমাদের কৃষকেরা লাঙল-গরু দিয়ে জমি চাষ করতেন। আর পানির জন্য প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। সেই সময় কৃষিব্যবস্থা এত আধুনিকও ছিল না। কিন্তু একসময় কৃষিতে ব্যাপক আকারে সেচব্যবস্থা চলে আসে। কৃষির সবকিছু একসময় যন্ত্রনির্ভরশীল হওয়ায় কৃষিতে বিপুল পরিমাণে জ্বালানির চাহিদা তৈরি হয়। গ্রামে বিদ্যুতের দরকার হতো না। মানুষ হেঁটে বা গরু, মহিষের গাড়িতে আশপাশের এলাকায় এবং ঘোড়ার গাড়িতে জেলা, মহকুমা, থানা শহরে  যাতায়াত করত। পাশাপাশি দেশে শিল্পায়নও বাড়তে থাকে। এসব পরিপ্রেক্ষিতে একসময় জ্বালানির চাহিদা বাড়তে থাকে। কিন্তু আগে থেকে জ্বালানি নিয়ে না ভাবার কারণে তখন এর চাহিদা মেটানোর জন্য নিজস্ব জ্বালানি উন্নয়নে আমরা এগিয়ে আসিনি। আমাদের চাহিদা সীমিত থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাণিজ্যিক বিবেচনায় রপ্তানির উদ্দেশ্যে আমাদের জ্বালানি সম্পদের উন্নয়নে এগিয়ে আসে। সরকার পিছিয়ে থাকে। তাদের উন্নয়ন নীতি ও কৌশল তারা সরকারকে দিয়ে তাদের স্বার্থে, তাদের মতো করে করিয়ে নেয়। তেল, গ্যাস, কয়লা রপ্তানিবিরোধী আন্দোলনের মুখে সরকার রপ্তানি করার নীতি থেকে সরে আসে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজার তাদের জন্য লাভজনক না হওয়ায় তারা বিনিয়োগ করা থেকে পিছিয়ে যায়। ফলে আমাদের জ্বালানি সম্পদ উন্নয়নে গতি হারায়।

এখন তেল, এলএনজি, কয়লা, এমনকি বিদ্যুৎ আমদানি করেও চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভর্তুকি কমানোর লক্ষ্যে কয়লা, এলএনজি, তেল আমদানি কমানো হয়। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে। অতীতের মতো ভর্তুকি কমানোর জন্য বিদ্যুতের দাম আর বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং অনিবার্য। অবশ্যম্ভাবী জ্বালানি-সংকট এভাবেই তৈরি হয়েছে।

জ্বালানিকে বাণিজ্যিক খাত করতে গিয়ে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। আর বাণিজ্যিক খাত করতে গিয়ে সরকার বিনিয়োগবিমুখ হয়ে গেছে।যারা জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ করবে তারা লাভবান হবে। তারা সেই লাভের জন্যই বিনিয়োগ করতে আসবে। সুতরাং এটিই দর্শন ও নীতিগত ব্যাপার। দর্শনটা হলো, সরকার এ খাত উন্নয়নে টাকা খরচ করবে না, কিন্তু জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং যত বেশি উন্নয়ন হবে, সরকার তত বেশি রাজস্ব পাবে। আর নীতিটা হলো এ খাত উন্নয়ন ব্যক্তি বিনিয়োগে হবে। জ্বালানি উন্নয়নের এমন দর্শনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সরকারকে উদ্বুদ্ধ করলেন। এতে জনগণের কল্যাণ নাকি সর্বনাশ হবে, এমন চিন্তা যদি সরকারের মাথায় তখন আসত, তাহলে জ্বালানি-সংকট অবশ্যম্ভাবী হতো না। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতোই জনগণের কল্যাণে জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে সরকার বিভ্রান্তির শিকার।

আজকের পত্রিকা: বর্তমানে জ্বালানি-সংকট থেকে মুক্তি পেতে সরকার দরপত্র দিয়ে বিদেশি কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাতে কি সমস্যার সমাধান হবে?
এম শামসুল আলম: সমস্যার সমাধান খুঁজতে হলে পেছনে ফিরতে হবে। নিজস্ব সম্পদ এবং নিজস্ব সক্ষমতায় আমরা উন্নয়ন করব। নিজস্ব সম্পদ উন্নয়নের জন্য আমাদের সক্ষমতা উন্নয়ন দরকার। এর জন্য স্বাধীনতা লাভের পরপরই আমরা গ্যাস খাত উন্নয়নে তিনটি কোম্পানি গঠন করলাম। ২০১০ সালে ভোক্তার অর্থে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল হলো। গ্যাস, তেল ও বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে প্রতিযোগিতাবিহীন ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বেশি বেশি আনা হলো। এসব কেন করা হলো? মানে আমরা কম দামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ করব।

এতে জনগণ কম দামে জ্বালানি সেবা পাবে। এভাবে আমাদের জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এই ছিল আমাদের জ্বালানির দর্শন। সে কারণে আমরা পাইপলাইনে গ্যাস ও সাগরের গ্যাস এলএনজি করে রপ্তানি করা থেকে পিছিয়ে এলাম। সে জন্য আইওসিগুলোর সঙ্গে আমাদের লড়াই করতে হলো। ভারত আমাদের গ্যাস নেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেল। বিবিয়ানার গ্যাস রপ্তানি করতে দিলাম না।

ভোলার গ্যাসও বিদেশি বিনিয়োগকারীর পরিকল্পনামতো ব্যবসা করার জন্য তাদের হাতে ছেড়ে দিলাম না। পরে বিদেশি বিনিয়োগে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করে ৮০ শতাংশ রপ্তানির চেষ্টা চলে। তাতে কৃষির সর্বনাশ হতো। কৃষক পথে বসতেন। ভূগর্ভস্থ পানির সর্বনাশ হতো। ফলে উন্মুক্ত খনি ও কয়লা রপ্তানির প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় নামল। জীবন দিল। তারপর সেসব বন্ধ হলো। এই সবকিছুর একটাই উদ্দেশ্য তা হলো—আমরা কম খরচে জ্বালানি পাব এবং আমাদের টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

পরবর্তী পর্যায়ে দেখা গেল, গ্যাস ও কয়লা রপ্তানি করা হলো না। রপ্তানি না করলে তা নিজস্ব বিনিয়োগ সক্ষমতায় উত্তোলন করতে হবে। কেন উত্তোলন হলো না? কারণ, সরকার বিনিয়োগে এগিয়ে এল না। বিদেশিরা বিনিয়োগ করত, যদি তাদের ব্যবসা হতো। তাদের ব্যবসা হবে না বলে তারা চলে গেল। ফলে গ্যাস ও কয়লা উত্তোলন এবং তেল অনুসন্ধান হলো না। সরকার জ্বালানি আমদানিতে মনোযোগী হলো। কয়লা, এলএনজি ও তেল আমদানি বৃদ্ধি হলো। জ্বালানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যয় বেড়ে গেল। জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ল।

এখন প্রতিযোগিতাভিত্তিক বিদেশি বিনিয়োগে গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক বলা যায়।বিনিয়োগকারী কর্তৃক উত্তোলন করা গ্যাস আমরা কিনে নেব। না কিনলে সেই গ্যাস এলএনজি হিসেবে রপ্তানি হবে। সেই সঙ্গে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি অব্যাহত থাকবে। আবার তেল ও কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদনও অব্যাহত থাকবে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন এবং বিতরণের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এমন সব নানা উন্নয়ন কাণ্ড-কারখানা করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, আলোচ্য গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ বৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কী পরিমাণ এলএনজি, কয়লা, তেল আমদানি কমে এবং জ্বালানি আমদানি ব্যয় সাশ্রয় হয় কি না?

আজকের পত্রিকা: দেশের অনেক গ্যাসক্ষেত্র অনাবিষ্কৃত আছে। কিন্তু সরকার বাপেক্সকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। এখন কি এই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে?
এম শামসুল আলম: এই অবস্থার পরিবর্তনের এখনো কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। বাপেক্সের ক্যাপাসিটি বিল্ডআপ করার জন্য, অর্থাৎ আর্থিক ও কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন করার জন্য গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে বছরে দেড় হাজার কোটি টাকা ভোক্তারা দেয়। সেই টাকা তারা খরচ করতে পারে না। ২০২২ সালের হিসাবে দেখা যায়, তহবিলের ৬৫ শতাংশ টাকা খরচ হয়নি। বাকি টাকার বেশির ভাগই খরচ হয়েছে গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত বিদেশি ঠিকাদারের বিল পরিশোধে। এই টাকায় বাপেক্সের দ্বারা যেমন গ্যাস উত্তোলন করা হলো না, তেমনি সেই টাকা দিয়ে বাপেক্সের সক্ষমতাও উন্নয়ন হলো না।

সকল পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, স্থলভাগের গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্সের সক্ষমতা আছে। আমরা সবাই জানি, তাদের দিয়ে উত্তোলন করালে গ্যাসের উৎপাদন ব্যয় কম হবে। কিন্তু বাপেক্সের  নামে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের টাকা খরচ হয় বাপেক্সের কাজে নিয়োজিত বিদেশি ঠিকাদারের বিল পরিশোধে। ফলে বাপেক্স যে খরচে গ্যাস উত্তোলন করতে পারত, তার চেয়ে  দুই থেকে আড়াই গুণ খরচ বেড়ে গেল। এভাবে বিদেশি ঠিকাদার দিয়ে গ্যাস উত্তোলন করে একদিকে উত্তোলন ব্যয় বাড়ানো হলো, অন্য দিকে বাপেক্সকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা গেল। বিষয়টি পরিকল্পিত, ভুল কিংবা অন্য কিছু নয়। জাতীয় সক্ষমতা উন্নয়নের এমন জাতীয় প্রত্যাশাকে এভাবেই দাফন করা হলো।

এ থেকে বোঝা যায়, একটা চক্র স্বাধীনতার পর থেকেই এ খাতটাকে বিদেশি তেল-গ্যাস কোম্পানির ব্যবসার কেন্দ্রে পরিণত করতে চেয়েছে। আর সেই জায়গায়, বিশেষ করে আমলারা কাজ করেছেন। কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা যখন নাইকো দুর্নীতির ঘটনাটা উন্মোচন করল, তখন জানা গেল, কীভাবে চার মিলিয়ন ডলার ঘুষের বিনিময়ে নাইকো ভার্জিন ছাতক (পূর্ব) গ্যাসক্ষেত্রকে পতিত গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে নিয়েছিল। সেখানে কারা কীভাবে জড়িত ছিল এবং তারা কে কত ডলার পেয়েছে, তার হিসাব প্রকাশ পেয়েছিল। আর এসব ক্ষেত্রে মূল কাজটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে জ্বালানি বিভাগের বড় কর্মকর্তারা। সেই কর্মকর্তারাই ভার্জিন গ্যাসক্ষেত্রকে পতিত হিসেবে নাইকোর হাতে তুলে দিয়েছিলেন।

আজকের পত্রিকা: জ্বালানি আমদানিনির্ভরতা কমাতে আমরা এখন কী করতে পারি?
এম শামসুল আলম: এখন গরমের কারণে লোডশেডিং শুরু হয়ে গেছে। প্রতিবছরই গরমের সময় এটা হচ্ছে। অবস্থার কোনো ধরনের উন্নতি হচ্ছে না। অথচ সরকার দাবি করছে, আমরা অনেক উন্নতি করেছি। এই যে সমস্যা, সেটা আগে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বুঝতে হবে।আসলে আমাদের জ্বালানি খাতে কোনো উন্নয়ন হয়নি, লুণ্ঠন হয়েছে। নইলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ (বিশেষ) ২০১০ বহু আগেই রহিত হতো, বিইআরসি আইন ২০০৩ সংশোধনী দ্বারা গণশুনানি রহিত করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের ক্ষমতা সরকার নিজের হাতে নিয়ে বিতর্কিত হতো না, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এত বেশি বৃদ্ধি করা হতো না এবং সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানির ক্ষমতা ব্যক্তি খাত বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দিয়ে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করা হতো না। এটাই আসল কথা। আর এ কথা আগে আমাদের সবার বুঝের মধ্যে আসতে হবে। সুতরাং সবার আগে লুণ্ঠন ঠেকাতে হবে। লুণ্ঠন ঠেকানোর জন্য প্রথম কাজ হচ্ছে: (১) এই খাতকে সরকারের রাজস্ব আহরণ ও বাণিজ্যিক খাত হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না এবং (২) এ খাতকে কৃষির মতো সেবা খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

সরকার তার সব কোম্পানিকে যেভাবে মুনাফার জন্য ব্যবহার করছে, তার মানে একদিকে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকার করপোরেট ট্যাক্স নিচ্ছে, অন্যদিকে কোম্পানির লাভের অংশ পাচ্ছে। এই ট্যাক্স ও লভ্যাংশ বৃদ্ধির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের মতোই সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা এখন মরিয়া। আবার বছরের পর বছর ধরে কোম্পানিগুলোর সঞ্চিত উদ্বৃত্ত অর্থ আইন করে তারা সরকারি কোষাগারে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে ভয়ংকরভাবে সরকারের অসাধু ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক চরিত্রের প্রকাশ ঘটেছে। সরকারকে জনগণের কল্যাণ করার জন্য রাষ্ট্রের দর্শন ও আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত