সাহসী ভ্রমণকন্যার ৭ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৩, ০৯: ০৭

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় উচ্ছ্বসিত একদল তরুণ। এই তরুণদের দুটি বৈশিষ্ট্য। তাঁরা সবাই কন্যা, তাঁরা সবাই ভ্রমণপিয়াসি। ২০১৬ সালে মাত্র কজন মিলে শুরু করেছিলেন ‘ভ্রমণকন্যা’র যাত্রা। ৭ বছর পেরিয়ে আজ ৭২ হাজার সদস্যের পরিবার।

‘ভ্রমণকন্যা—ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ’-এর সপ্তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলটা তাঁদের কাটল হইহুল্লোড় আর উচ্ছ্বাসে। আয়োজন ভ্রমণ উৎসব আর আলোকচিত্র প্রদর্শনীর। ‘ট্রাভেল ফেস্ট অ্যান্ড ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন ২০২৩’ নামের আট দিনব্যাপী আয়োজনে আরও আছে কর্মশালা, সাময়িকী প্রকাশ, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা। শোকের মাস আগস্টে আয়োজন, তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নারও। এসবই মিলবে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালার ৬ ও ৭ নম্বর গ্যালারিতে।

গতকাল উদ্বোধনী দিনে চিত্রশালা মিলনায়তন ছিল ভ্রমণকন্যাদের উপস্থিতিতে মুখর। প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘এই সংস্থাটি পরিচালনা করেন একেবারেই তরুণ কয়েকজন নারী। তাঁরা বাংলাদেশের আনাচকানাচে ঘুরে বেড়ান। দেশের ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরেন। তাঁরা এগিয়ে যাক। আমি তাঁদের এই ছবি প্রদর্শনীর সাফল্য কামনা করি।’

ভ্রমণকন্যাদের শুরুর গল্পটা এমন—আজকের চিকিৎসক মানসী সাহা তখন মেডিকেলের ছাত্রী। এক সহপাঠীকে সঙ্গী করে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে ফেললেন একদিন। উদ্দেশ্য—ভ্রমণপিপাসু নারীদের একটি পাটাতন তৈরি। এর আগে দুজন মিলে স্কুটিতে করে দেশের ৬৪টি জেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন।

২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর সেই যাত্রা শুরু। সঙ্গী হন আরেক চিকিৎসক সাকিয়া হক। দুজনের হাত ধরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গ্রুপের পরিধি। এখন তাঁরা প্রায় ৭২ হাজার নারীর পরিবার। একসময় এই ফেসবুক গ্রুপটিই একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। তখন শুধু ভ্রমণ নয়, নারীদের আত্মরক্ষার কৌশল, সাইকেল ও স্কুটি চালানো, প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন তাঁরা। ভ্রমণপিপাসা থেকে নারীর ক্ষমতায়নেও কাজ করে যাচ্ছে প্ল্যাটফর্মটি।

সাত বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা আয়োজনের একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা। ভ্রমণকেন্দ্রিক প্রায় চার হাজার ছবি জমা পড়ে। তার মধ্যে দুই শর অধিক ছবি নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন।

আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার বিচারকদের একজন ছিলেন আলোকচিত্র শিল্পী মুনিরা মোরশেদ মুন্নী। বিচারক হিসেবে বক্তৃতা করতে গিয়ে নিজের তারুণ্যের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে বললেন, ‘নিজের কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না। খুব ছোটবেলায় গার্ল গাইডস করতাম। এ কারণে কক্সবাজার, সিলেট, চট্টগ্রামে ক্যাম্পেইন করতে যাই। তখন প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে দেখি। আশ্চর্য হয়ে যাই, মুগ্ধ হয়ে যাই। 

মনে মনে ভাবি, আমার মা, তাঁর মতো আরও কত মা আজীবন রান্নাঘরে কাটিয়ে গেলেন। প্রকৃতির চেহারা দেখতে পারলেন না।’ তিনি আরও বলেন, মেয়েদের ছোটবেলা থেকে জুজুবুড়ির ভয় দেখানো হয়। মেয়েরা সাহসী হতে পারে না। সেই জায়গায় ভ্রমণকন্যারা যে এই দুঃসাহসী কাজ করেছে, এটি নিঃসন্দেহে নারীর অগ্রযাত্রায় অন্যরকম ভূমিকা রাখবে।

আয়োজনে আছে লেখালেখি প্রতিযোগিতাও। দুই বিভাগের বিজয়ীরাই পাবেন ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা, ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা এবং ঢাকা-সিলেট-ঢাকার টিকিট। এটি দেওয়া হবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে।

শুধু তা-ই নয়, গতকাল ভ্রমণকন্যাদের ঘোরাঘুরি নিয়ে সাময়িকীর পঞ্চম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এর পাবলিকেশন পার্টনার পাঠক সমাবেশ। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সভাপতি জালাল আহমেদ ছিলেন আয়োজনের সভাপতি। বক্তব্য দেন ভ্রমণপ্রেমী ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ৭ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন। একই দিন বিকেলে সমাপনী আয়োজনের মাধ্যমে ভ্রমণকন্যারা এবারের উৎসবের ইতি টানবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত